পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা। ] বঙ্গভাষা ও সাহিত্য । ১৭৩ অক্ষম হইবুেও আমার দ্বরাশার চরমতম স্বপ্ন সফল হইতে পারে। যেখানে निब्रह्मनू বন্ধন, ধৰ্ম্মের বিধান আছে, সেখানে দেবতার কাছেও প্রত্যাশাকে থৰ্ব্ব করিয়ী রাখিতে হয় । এই সকল কারণে যে সময় বাদশাহ ও নবাবের অপ্রতিহত ইচ্ছা জনসাধারণকে ভয়ে-বিস্ময়ে অভিভূত করিয়া রাখিয়াছিল, এবং দ্যায়-অন্ত্যায়—সম্ভব-অসম্ভবের ভেদচিহ্রকে ক্ষীণ করিয়া আনিয়াছিল, হর্ষশোক --বিপৎ-সম্পদের অতীত শান্ত-সমাহিত বৈদাস্তিক শিব সে-সময়কার সাধারণের দেবত হইতে পারেন না। রাগদ্বেষ—প্রসাদঅপ্রসাদের লীলাচঞ্চল যদৃচ্ছাচারিণী শক্তিই তখনকার কালের দেবত্বের চরমাদশ । সেইজন্তই তখনকার লোকে ঈশ্বরকে অপমান করিয়া বলিত—“দিল্লীশ্বরে বা জগদীশ্বরে বা ।” কবিকঙ্কণে দেবী এই যে ব্যাধের দ্বার নিজের পূজা মর্ত্যে প্রচার করিলেন, স্বয়ং ইন্দ্রের পুত্র যে ব্যাধরূপে মর্ত্যে জন্মগ্রহণ করিল, বাংলাদেশের এই লোকপ্রচলিত কথার কি কোন ঐতিহাসিক অর্থ নাই ? পশুবলি প্রভৃতির দ্বারা যে ভীষণ পূজা এক কালে ব্যাধের মধ্যে প্রচলিত ছিল, সেই পুজাই কি কালক্রমে উচ্চসমাজে প্রবেশলাভ করে নাই ? কাদম্বরীতে বর্ণিত শবরনামক ক্ররক ব্যাধজাতির পূজাপদ্ধতিতেও ইহারই কি প্রমাণ দিতেছে না ? উড়িষ্যাই কলিঙ্গদেশ। বৌদ্ধধৰ্ম্মলোপের পর উড়িষ্যায় শৈবধৰ্ম্মের প্রৰল অভু্যদয় হইয়াছিল—ভুবনেশ্বর তাছার প্রমাণ । 及 কলিঙ্গের রাজারাও প্রবল রাজা ছিলেন। এই কলিঙ্গরাজত্বের প্রতি শৈবধৰ্ম্মবিদ্বেষীদের আক্রোশ প্রকাশ—ইহার মধ্যেও দূর ইতিহাসের আভাস দেখিতে পাওয়া যায় । ধনপতির গল্পে দেখিতে পাই, উচ্চজাতীয় ভদ্রবৈশু শিবোপাসক । শুদ্ধমাত্র এই পাপে চণ্ডী তাহাকে নানা দুৰ্গতির দ্বারা পরাস্ত করিয়া আপন মাহাত্ম্য প্রমাণ করিলেন । বস্তুত সাংসারিক সুখদুঃখ-বিপৎসম্পদের দ্বারা নিজের ইষ্টদেবতার বিচার করিতে গেলে, সেই অনিশ্চয়তার কালে শিবের পূজা টিকিতে পারে না । অনিয়ন্ত্রিত ইচ্ছার তরঙ্গ যখন চারিদিকে জাগিয়া উঠিয়াছে, তখন যে দেবতা ইচ্ছাসংযমের আদশ, তাহাকে সাংসারিক উন্নতির উপায় বলিয়৷ গ্রহণ করা যায় না। দুৰ্গতি হইলেই মনে হয়, আমার নিশ্চেষ্ট দেবতা আমার জন্ত কিছুই করিতেছেন না, ভোলানাথ সমস্ত ভুলিয়া বসিয়া আছেন। চণ্ডীর উপাসকেরাই কি সকল দুৰ্গতি এড়াইয়া উন্নতিলাভ করিতেছিলেন ? অবশুই নহে । কিন্তু শক্তিকে দেবতা করিলে সকল অবস্থাতেই আপনাকে ভুলাইবার উপায় থাকে। শক্তিপূজক দুৰ্গতির মধ্যেও শক্তি অনুভব করিয়৷ ভীত হয়, উন্নতিতেও শক্তি অনুভব করিয়া কুতুজ্ঞ হইয়া থাকে। আমারই প্রতি বিশেষ অকৃপা, ইহার ভয় যেমন আত্যস্তিক, আমারই প্রতি বিশেষ দয়া, ইছার আনন্দও তেমনি অতিশয় ! কিন্তু ষে দেবতা বলেন, সুখ-দুঃখ, দুৰ্গতি-সদগতি, ও কিছুই নয়, ও কেবল মায়া, ও দিকে দৃকপাত করিয়ে না, ংসারে তাহার উপাসক অল্পই অবশিষ্ট