চোখের বালি । 一捻一 ( 8७ ) পরদিন প্রত্যুষেই মহেন্দ্র বিহারীর বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইল। দেখিল, দ্বারের কাছে অনেকগুলা গোরুর গাড়িতে ভৃত্যগণ আস্ বা বোঝাই করিতেছে। ভজুকে মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপারখানা কি ?” ভজু কহিল, “বাবু বালিতে গঙ্গার ধারে একটি বাগান লইয়াছেন, সেইখানে জিনিষপত্র চলিয়াছে।” মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “বাবু বাড়ীতে আছেন না কি ?” ভজু কহিল, “তিনি দুইদিনমাত্র কলিকাতায় থাকিয়৷ কাল বাগানে চলিয়া গেছেন ।” শুনিয়া মহেঞ্জের মন আশঙ্কায় পূর্ণ হইয়া গেল । সে অনুপস্থিত ছিল, ইতিমধ্যে বিনোদিনী ও ৰিহারীতে যে দেখা হইয়াছে, ইহাতে তাহার মনে কোন সংশয় রহিল না। সে কল্পনাচক্ষে দেখিল, বিনোদিনীর বাসার সম্মুখেও এতক্ষণে গোরুর গাড়ি বোঝাই হইতেছে। তাহার নিশ্চয় বোধ হইল, “এইজন্যই নিৰ্ব্বোধ-আমাকে বিনোদিনী বাস। হইতে দূরে রাখিয়াছিল।’ মুহূৰ্ত্তকাল বিলম্ব না করিয়া মহেন্দ্র তাহার গাড়িতে চড়িয়া কোচুমানকে স্থাকাইতে কহিল। ঘোড়া যথেষ্ট দ্রুত চলিতেছে না বলিয়া মহেন্দ্র মাঝে মাঝে কোচুমানকে গালি দিল। গলির মধ্যে সেই বাসার দ্বারের সম্মুখে পৌঁছিয়া দেখিল, সেখানে যাত্রার কোন আয়োজন নাই। ভয় হইল, পাছে সে কায্য পুৰ্ব্বেঙ্গ সমাধা হইয়া থাকে। বেগে দ্বারে আঘাত করিল। ভিতর হইতে বৃদ্ধ চাকর দরজা খুলিয়া দিবামাত্ৰ মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “সব খবর ভাল ত?” সে কহিল—“আজ্ঞা হা, ভাল বই কি ?” মহেন্দ্র উপরে গিয়া দেখিল, বিনোদিনী স্নানে গিয়াছে । তাহার নির্জন শয়নঘরে প্রবেশ করিয়া মহেন্দ্র বিনোদিনীর গতরাত্রে ব্যবহৃত শয্যার উপর লুটাইয়া পড়িল—সেই কোমল আস্তরণকে দুই প্রসারিত হস্তে বক্ষের কাছে আকর্ষণ করিল এবং তাহাকে প্ৰাণ করিয়া তাহার উপরে মুখ রাৰিয়া বলিতে লাগিল—“নিষ্ঠুর! নিষ্ঠুর ” এইরূপে হৃদয়োচ্ছাস উন্মুক্ত করিয়া দিয়া শয্যা হইতে উঠিয়া মহেন্দ্র অধীরভাবে বিনোদিনীর প্রতীক্ষা করিতে লাগিল । ঘরের মধ্যে পায়চারি করিতে করিতে দেখিল, একখান বাংলা খবরের কাগজ নীচের বিছানায় খোলা পড়িয়া আছে। সময় কাটাইবার জন্ত কতকটা অন্তমনস্কভাবে সেখান তুলিয়া লইয়া, যেখানে চোখ পড়িল, মহেন্দ্র সেখানেই বিহারীর নাম দেখিতে পাইল । এক মুহূর্তে তাহার সমস্ত মন খবরের কাগজের সেই জানটাতে ঝুকিয়া পড়িল। একজন পত্রপ্রেরক লিখিতেছে, অল্পবেতনের দরিদ্র কেরাণীগণ রুগণ হৰ্ছয়া পড়িলে তাহদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সেবার জন্ত বিহারী বালিতে
