পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] চোখের বালি । )సి ని ছুদিনের—তবু তাগিদটা তোমারই ধেন অত্যন্ত বেশি বোধ হইতেছে! বিনোদিনী । তাহান্ত দেখিয়া তোমার লজ্জা পাওয়া উচিত। বন্ধুত্ব কেমন করিয়া করিতে হয়, তাহা তোমার আমন বন্ধুর কাছ হইতেও শিখিতে পারিলে না ? মহেন্দ্র। সেজন্তে তত দুঃখিত নহি, কিন্তু ফাকি দিয়া স্ত্রীলোকের মন হরণ কেমন করিয়া করিতে হয়, সে বিদ্যা তাহার কাছে শিখিলে আজ কাজে লাগিতে পারিত । বিনোদিনী । সে বিদ্যা কেবল ইচ্ছা থাকিলেই শেখা যায় না, ক্ষমতা থাক। চাই । মহেন্দ্র । গুরুদেবের ঠিকানা যদি তোমার জানা থাকে ত বলিয়া দাও, এ বয়সে র্তাহার কাছে একবার মন্ত্র লইয়। আসি, তাহার পরে ক্ষমতার পরীক্ষা হইবে । বিনোদিনী । বন্ধুর ঠিকানা যদি বাহির করিতে না পার, তবে প্রেমের কথা আমার কাছে উচ্চারণ করিয়ে না ! বিহারি-ঠাকুরপোর সঙ্গে তুমি যেরূপ ব্যবহার করিয়াছ, তোমাকে কে বিশ্বাস করিতে পারে ? মহেন্দ্র। আমাকে যদি সম্পূর্ণ বিশ্বাস না করিতে, তবে আমাকে এত অপমান করিতে পারিতে না ! আমার ভালবাসাসম্বন্ধে যদি এত নিঃসংশয় না হইতে, তবে হয় ত আমার এত অসহ দুঃখ ঘটিত না ! বিহারী পোষ না মানিবfর বিদ্যা জানে, সেই বিদ্যাটা যদি সে এই হতভাগ্যকে শিথাইত, তবে বন্ধুত্বের কাজ করিত ! “বিহারী যে মানুষ, তাই সে. পোষ মানিতে পারে না” এই বলিয়া বিনোদিনী খোলা চুল পিঠে মেলিয়া যেমন জানলার কাছে দাড়াইয়া ছিল, তেমনি দাড়াইয় রছিল । মহেন্দ্র হঠাৎ দাড়াইয়া উঠিয়া মুষ্টি বদ্ধ করিয়া রোষগৰ্জ্জিতস্বরে কহিল— “কেন তুমি আমাকে বারবার অপমান করিতে সাহস কর । এত অপমানের যে কোন প্রতিফল পা ও না, সে কি তোমার ক্ষমতায়, না আমার গুণে ? আমাকে যদি পশু বলিয়াই স্থির করিয়া থাক, তবে হিংস্র পশু বলিয়াই জানিয়ো ! আমি একেবারে আঘাত করিতে জানি না, এত-বড় কাপুরুষ নই !” বলিয়। বিনোদিনীর মুখের দিকে চাহিয়া ক্ষণকাল স্তব্ধ হইয়া রহিল—তাহার পর বলিয়া উঠিল, “বিনোদ, এখান হইতে কোথাও চল! আমরা বাহির হইয়া পড়ি । পশ্চিমে হৌক, পাহাড়ে হৌক, যেখানে তোমার ইচ্ছা, চল ! এখানে বাচিবার স্থান নাই ! আমি মরিয়া যাইতেছি !” বিনোদিনী কহিল, "চল এখনি চল— পশ্চিমে যাই ।” মহেন্দ্র । পশ্চিমে কোথায় যাইবে ? বিনোদিনী । কোথাও নহে। এক জায়গায় দুদিন থাকিব ন— ঘুরিয়া বেড়াইব । মহেন্দ্র কহিল, “সেই ভাল, আজ রাত্রেই চল ?” বিনোদিনী সম্মত হইয়া মহেঞ্জের জন্য রন্ধনের উদ্যোগ করিতে গেল । মহেন্দ্ৰ বুঝিতে পারিল, বিহারীর খবর বিনোদিনীর চোখে পড়ে নাই । খবরের কাগজে মন দিবার মত অবধানশক্তি বিনোদিনীর এখন আর নাই। পাছে দৈবাৎ সে