পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] কোথা হে মহারাজ, মুগের প্রাণ, কোথায় যেন বীজ তোমার বাণ !" এ কথা শকুন্তলাসম্বন্ধেও খাটে । শকুগুলার প্রতিও রাজার প্রণয়শরনিক্ষেপ নিদারুণ । প্রণয়ব্যবসায়ে রাজা পরিপক্ক ও কঠিন—কত কঠিন, অন্তক্ৰ তাহার পরিচয় আছে —আর এই আশ্রমপালিত বালিকার অনভিজ্ঞতা ও সরলতা বড়ই সুকুমার ও সকরুণ । হায়, মৃগটি যেমন কাতরবাক্যে রক্ষণীয়, শকুন্তলাও তেমনি ! দ্বেী অপি অত্র আরণ্যকে ! মৃগের প্রতি এই করুণাবাক্যের প্রতিধ্বনি মিলাইতে না মিলাইতেই দেখি, বল্কলবসনা তাপসকল্প সখীদের সহিত আলবালে জলপূরণে নিযুক্ত, তরু-সোদর ও লতা-ভগিনীদের মধ্যে তাহার প্রাত্যহিক স্নেহসেবার কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত। কেবল বন্ধলবসনে নহে, ভাবে ভঙ্গীতেও শকুন্তলা যেন তরুলতার মধ্যেই একটি। তাই দুষ্যস্ত বলিয়াছেন— “অধর কিসলয়-রাঙিম।-অর্ণক, যুগল বাহ যেন কোমল শ{গ, হৃদয়-লোভনীয় কুসুম চেন তমুতে যৌবন ফুটেছে যেন ।” নাটকের আরম্ভেই শাস্তিসৌন্দর্য্যংবলিত এমন একটি সম্পূর্ণ জীবন নিভৃত পুষ্পপল্লবের মাঝখানে প্রাত্যহিক আশ্রমধৰ্ম্ম, অতিথিসেবা, সখীস্নেহ ও বিশ্ববাৎসল্য লইস্ব আমাদের সম্মুখে দেখা দিল । তাহা এমনি অখণ্ড—এমনি আনন্দকর যে, আমাদের কেবলি আশঙ্কা হয়, পছে আঘাত লাগিলেই ইহা ভাঙিয়া যায় ! দুষ্যস্তকে দুই শকুন্তলা । ミbr> উদ্যত বাহু দ্বারা প্রতিরোধ করিয়া বলিতে ইচ্ছা হয়, বাণ মারিয়ো না, মারিয়ো না !— এই পরিপূর্ণ সৌন্দৰ্য্যটি ভাঙিয়ে না! যখন দেখিতে দেখিতে দুষ্যস্ত-শকুন্তলার প্রণয় প্রগাঢ় হইয়া উঠিতেছে, তখন প্রথম অঙ্কের শেষে নেপথ্যে অকস্মাৎ আৰ্ত্তরব উঠিল—“ভে ভো তপস্বিগণ, তোমরা তপোবনপ্রাণীদের রক্ষার জন্ত সতর্ক হও । মৃগয়াবিহারী রাজা দুষ্যন্ত প্রত্যাসল্প হইয়াছেন।” ইহ সমস্ত তপোবনভূমির ক্রনান—এবং সেই তপোবনপ্রাণীদের মধ্যে শকুন্তলাও একটি ! কিন্তু তাহাকে কেহ রক্ষা করিতে পারিল না ! সেই তপোবন হইতে শকুন্তলা যখন যাইতেছে,তখন কথ ডাক দিয়া বললেন – “ওগে। সন্নিহিত তপোবনতরুগণ — তোমাদের জল না করি দtণ মে আগে জল না করিত পান : সাধ ছিল যার সাজিতে, তবু স্নেহে পাতাটি না ছিড়িত কতু । তোমাদের ফুল ফুটিত যবে যে জন মাতিত মহোৎসবে . পতিগৃহে সেই বালিকা যায়, তোমর। সকলে দেহ বিদায় !" চেতন-অচেতন সকলের সঙ্গে এমনি অন্তরঙ্গ আত্মীয়ত, এমনি প্রীতি ও কল্যাণের বন্ধন ! শকুন্তলা কহিল, “হল। প্রিয়ংবদে,আৰ্য্যপুত্রকে দেখিবার জন্ত আমার প্রাণ আকুল, তবু আশ্রম ছাড়িয়া যাইতে আমার পা যেন উঠিতেছে না।” প্রিয়ংবদা কহিল, “তুমিই যে কেবল তপোবনের বিরছে কাতর, তাছা