পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] প্যারাসেলসাস্ । Ֆ(ի Ֆ জাহাজে, একটি করিয়া প্রস্তরমূৰ্ত্তি তখন সুনিৰ্ম্মিত হইয়াছে। আমরা বন্দরে উঠিলাম । সারাদিন বসিয়া আমরা মন্দির তৈয়ার করিয়া সেই স্বচ্ছ প্রতিমাগুলিকে স্থাপনা করিতে অগ্রসর হইলাম । কিন্তু ছোট ছোট নৌকায় চড়ির কতগুলি দ্বীপবাসা নৌকা ভিড়াইয়া বলিল –‘ঐ দেপ, সন্ধ্যায় দ্বীপগুলি মেঘের মত দেখাইতেছে, ওখানে জলপাই-কুঞ্জের ছায়ার এ প্রতিমাগুলিকে বসাইব, প্রতিমাগুলি দাও”-- হায় এই রকম করিয়াই প্যারাসেলদাসের এত সাধনের ধনগুলি সাধারণ লোকের সাধারণ কাজে লাগাইতে চায় ! —প্রতিম। চাহিতেই আমরা যেন স্বপ্নোখিত হইলাম -এ কোন মরুপাহাড়ে আসিয়া পড়িয়াছি ! যা হোক, গর্জিয়া বলিলাম— ‘দূর হও, যদিও আমাদের সর্বপ্রযত্ন বিফল ছেীকৃ, তবু আমাদের প্রতিমাগুলি তোমাদের মত অসভোর হাতে দিব না—দূর হও ।”-প্যারাসেলসাস্ কাহার জন্ত ধনসঞ্চয় করিয়াছিলেন ? সৰ্ব্বসাধারণকে ভালবালিরা আপনাকে সেই ভালবাসায় ডুবাইতে পারেন নাই, তাই জ্ঞানমূৰ্ত্তির সমক্ষে একমাত্র পুরোহিত আপনাকে লইয়াই এত যন্ত্রণ পাইতেছেন !—তবু, আজ যখন র্তাহার পদমান সব গিয়াছে, যন্ত্রণ গভীরতম হইয়া উঠিয়াছে—তখনি বুঝিতে পারি, এ যন্ত্রণার অবসান নিকটে । আর ইহাও দেখিতে পাইয়াছি যে, এই বেদনার জালার সহিত মিশ্রিত কুইয়া ছচারিটি ফুলপাতাও প্যারাসেল্লাসের অন্তর হইতে উৎক্ষিপ্ত হইতেছে । এই ত গেল প্যারাসেলসাসের প্রাণের আশা—এখন পঞ্চমখণ্ডে অবতরণ করা शासेप्टक '। ক্ষুদ্র অধ্যবসারে ব্যাপুতজীবন হইলে, একবার ভুলপথ হইতে ফিরিয়া আবার পূর্ণতার পথে চলিবার সময় হয় ত এই জীবনেই থাকিতে পারে, কিন্তু প্যারাসেলসাস এমনি প্রবল আবেগে, এত বিরাট কাজে আপনার সমস্ত শক্তি নিয়োগ করিয়াছিলেন যে, এ জীবনে র্তাহার আর ফিরির চলিবার সময় হইল না । তিনি পঞ্চম অঙ্কের পরে আবার ষষ্ঠ, সপ্তম অঙ্কে, মধুমর প্রাণ লইয়া আপনাকে চরিতার্থ করিবার অবসর পাইলেন না । এ কথাটা ঐতিহাসিক, কিন্তু কাব্যের সৌন্দর্য্যও ইহাতে নিবিড় হইয়া উঠিয়াছে। এইখানেই ব্রাউনিং মৃত্যুর গোধূলি-অন্ধকারের একটা ট্রাজেডি ঘনাইয়া, হঠাৎ প্যারাসেলসাসকে জাগাইয়া দিয়া, মানবহৃদয়ের আশাকে তাড়িতালোকবৎ কম্পিত করিবার সুযোগ পাইয়াছেন এবং মৃত্যুর পরপারেও যেন সেই কম্পনতরঙ্গ ছুটাইয়া দিয়াছেন। অন্ধকার-গুহায় আহত প্যারাসেলসাস পড়িয়া । সম্মুখে তাহার চিরকালের বন্ধু ফেষ্টাস। প্যারাসেলসাস এলাপ বকিতেছেন। কখনো করুণস্বরে তাহার অপমানকারাদিগকে সম্বোধন করিতেছেন, কখনো ‘অ্যাপ্রিলে, অ্যাপ্রিলে’ করিয়া আকুল হইতেছেন । বিফলতার প্রতি উপহাসপরায়ণ ভূতদের অবহেলা করিয়া বারবার অ্যাপ্রিলেকে ডাকিয়া লইতেছেন। ফেষ্টাস কিছুতেই প্যারাসেলসাসকে প্রবুদ্ধ করিতে