পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরনিন্দ । পরনিন্দ পৃথিবীতে এত প্রাচীন এবং এত ব্যাপক যে, সহসা ইহার বিরুদ্ধে একটা যে-সে মত প্রকাশ করা ধৃষ্টত হইয়া পড়ে । বয়স বিবেচনা করিয়া ইহার প্রতি কতকটা সম্মান এবং শ্রদ্ধা রক্ষা করা কর্তব্য । সাধুলোকের ইহাকে পৃথিবী হইতে নিৰ্ব্বাসন করিবার প্রস্তাব করিয়া থাকেন । যদি ইহাদের সে ক্ষমতা থাকিত, তবে, রামের পশ্চাতে লক্ষ্মণও যেমন বনে গিয়াছিলেন, পৃথিবী ও তেমনি নিৰ্ব্বাসিতার পশ্চাতে নিৰ্ব্বাসন গ্রহণ করিতে উদ্যত হইত। আমরা সাধুই হই আর অসাধুই হই, বিশ্ববিধানের প্রতি আমাদের কতকট। বিশ্বাস থাকা উচিত। যে পরনিন্দার চর্চা সমস্ত মানবসমাজকে আদ্যন্তমধ্যে জুড়িয়া বসিয়া আছে, তাহাকে একেবারেই মন্দ বলিয়া বসা অত্যন্ত সন্ধিগ্ধপ্রকৃতির কাজ । আমরা ছোট, এবং আজ আছি কাল নাই, যাহা আমার চেয়ে অনেক বৃহৎ এবং অনেকদিন টিকিয়া আছে, তাহার প্রতি একটা অন্ধবিশ্বাস রাখাও আমি দোষের বিবেচনা করি না । & নোনা জল পানের পক্ষে উপযোগী নহে, এ কথা শিশু জানে–কিন্তু যখন দেখি, সাত সমুদ্রের জল জুনে পরিপূর্ণ; যখন দেখি, এই নোনা জল সমস্ত পৃথিবীকে বেড়ির © আছে, তখন এ কথা বলিতে কোনমতেই সাহস হয় না যে, সমুদ্রের জলে মুন না থাকিলেই ভাল হইত। নিশ্চরই ভাল হইত না—হয় ত লবণজলের অভাবে সমস্ত পৃথিবী পচিরা উঠিত। তেমনি, পরনিন্দ সমাজের কণায় কণায় যদি মিশিয়া না থাকিত, তবে নিশ্চয়ই একটা বড়রকমের অনর্থ ঘটিত। উহ। লবণের মত সমস্ত সংসাবুকে বিকার হইতে রক্ষা করিতেছে। সংসারে আবর্জনার অবধি নাই, সে সমস্ত পচিয়। প্রেমসমুদ্রকে বীভৎস করিয়া তুলিত—সমুদ্রের সর্বত্র বিদ্বেষ এবং নিন্দার ক্ষার মিশিয়া আছে বলিয়াই নিস্তার ! মামুষের রচিত মুনিসিপালিটির ক্ষুদ্র ব্যবস্থায় সংসারের শোধনকার্য্য অতি অল্পপরিমাণেই চলে ;–পুলিশ ও আইন বাহিরের জিনিষ, তাহ টোটুক ওষুধের মত—পরনিন্দা সমাজের রক্তের সঙ্গে মিশিয়া অহরহ তাহাকে স্বাস্থ্যের পথে টানিয়া রাখিয়াছে। পাঠক বলিবেন, “বুঝিয়াছি। তুমি যাহ। বলিতে চাও, তাহা অত্যন্ত পুরাতন r অর্থাৎ নিন্দার ভয়ে সমাজ প্রকৃতিস্থ হইয়া আছে।” এ কথা যদি পুরাতন হয়, তবে আনন্দের বিষয়। আমি ত বলিয়াছি, যাহা পুরাতন, তাছা বিশ্বাসের যোগ্য । বস্তুত নিন্দ না থাকিলে পৃথিবীতে জীব