পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] তিলকপুরের বাবুর গৃহে ফাগুয়া খেলিতে না যাওয়ায়, শেষোক্ত বড় গোসা করিয়াছিলেন এবং অপমানকারী , বলিয়া প্রথমোক্তের আর কখন মুখদর্শন করেন নাই। পরে তিলকপুরের বাবুও এরূপ রাগিয়া যান যে, মৃত্যুকালে ” পুত্রকে তিনি শপথ করাইয়াছিলেন, চন্দনীপুরের বংশের কেহ আপন হইতে র্তাহার গৃহে না আসিলে বিবাদ কখন মিটিবে না । ইহার ফলে অতঃপর দুই বংশের কেহ কখন পরস্পরের গণ্ডী পার হইতেন না এবং নানা ছলে বিবাদ-বিসংবাদ বাড়িয়াই চলিয়াছিল । সম্প্রতি চন্দনপুরের জমীদার সুহৃদ সিংহ দীর্ঘকাল তীর্থে বাস করিয়া গৃহে প্রত্যাগত হইয়াছেন। তিনি বিপত্নীক, শিশু পুত্রকন্যা-দুটিকে রাখিয়া সহধৰ্ম্মিণী স্বৰ্গারোহণ করার পর চারিবৎসর কেবল তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ করিয়া বেড়াইয়াছেন, মাতৃ-আজ্ঞা লঙ্ঘন করিতে না পারিয়া দেশে আসিয়াছেন বটে, কিন্তু ফাগুয়ার পরই শ্ৰীবৃন্দাবনধামে যাইবেন,ইহাই তাহার সঙ্কল্প । সুহৃদ সিংহের বয়ঃক্রম ত্রিশবৎসর মাত্র, অতএব পুনরায় তিনি দ্বারপরিগ্রহ করেন, তদীয় জননী ও আত্মীয়বর্গের একান্ত কামনা এই । কিন্তু ইদানীং তিনি সৰ্ব্বদ। ধৰ্ম্মালোচনায় নিযুক্ত থাকিতেন, সে অনুরোধ কখন-কখন মাতা ছাড়া আর কেহ বড় করিতে পারিতেন না । সুহৃদ প্রথম-যৌবনের সমস্ত আমোদ ও খেয়াল বিসর্জন দিয়া পরমার্থে মন দিলেও, মৃগয়াসক্তি পরিহার করিতে পারেন নাই। শিকারের নেশ বাড়িলে আর সকলই তিনি ভুলিয়৷ হোলি-পৰ্ব্ব । । 8& যাইতেন। সেইজন্ত বলিতেন, ব্রজধামে 71 (ಡ್ 4 জীবহিংসাপ্রবৃত্তি তিনি দমন করিতে পারিবেন না । ( २ ) হোলি-উৎসবের দুইদিন পূৰ্ব্বে অপরাহ্লে তিনি শোণনদীতীরে ভ্রমণ করিতেছিলেন। প্রথামত “খিজ মতিয়া” হু কা বহন করিয়া র্তাহার পাশ্বে পাশ্বে চলিয়াছে এবং সর্টকার দীর্ঘবিসর্পিত নল তাহার অধরোষ্ঠ স্পর্শ করিতে করিতে ঈষৎ ধূমোদগার করিতেছে। বাসস্তী রংয়ের জরিদার টোপি এবং আঙ,রাখায় বাবুসাহেবের দীর্ঘ গেীরতমু বড় স্বন্দর দেখাইতেছিল । তাহার অগ্রগামী বরাহিল দীর্ঘযষ্টিহস্তে নীরবে চলিতে চলিতে অপাঙ্গে একএকবার “সরকারের” প্রতি প্রশংসমান দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছিল। কুসুমিত আম্রবনের ভিতর দিয়া অপেক্ষাকৃত নির্জন পথে মুহৃদ সিং নদীর তীরে তীরে ভ্রমণ করিতেছিলেন। অকস্মাৎ দূরে শোণস্রোতোভিমুখ মৃগযুখের প্রতি তার চক্ষু পড়িল । “মের বন্দুক লে আও” বলিয়াই সেইদিকে তিনি ছুটিয়া চলিলেন । খিজুমতিয়া এবং বরাহিল পশ্চাতে পড়িয়া রহিল। ( 5 ) তখন স্বৰ্য্য অস্তগমনোন্মুখ । রোহিতাশ্বপৰ্ব্বতের সুদূরপ্রান্তে মজ্জমান রবিকরজাল প্ৰহত হইয়া আকাশের দিকে দিকে অপুৰ্ব্ব বর্ণ বৈচিত্র্য প্রকটিত করিতেছিল। নীচে শোণের ক্ষীণ স্রোতোরেখায় তাহ প্রতিবিম্বিত হইয়া যে তরল রক্তিমাভ প্রবাহিত করিতেছিল, নদীসৈকতের বিশদ