পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NE8 বঙ্গদর্শন। [ ২য় বর্ষ, মাঘ । এবং প্রতিমুহূর্বেই তাহা হইতে অবিশ্রাম রিকীর্ণ হইতেছে । আময়া যাহাকে দেখিয়া শেষ করিতে পারি না, জানিয়া অন্ত করিতে পারি না, তাহ সমগ্রভাবে নিয়তই তিনি প্রেরণ করিতেছেন । এই বিশ্বপ্রকাশক অসীম শক্তির সহিত আমার অব্যৰহিত সম্পর্ক কি স্বত্রে ? কোন স্বত্র অবলম্বন করিয়া তাহাকে ধ্যান করিব ?— ধিয়ো খো ম: প্রচোদয়াৎ— ধিনি আমাদিগকে বুদ্ধিবৃত্তিসকল প্রেরণ করিতেছেন, তাহার প্রেরিত সেই ধীস্থত্রেই র্তাহাকে ধ্যান করিব । স্বর্য্যের প্রকাশ আমরা প্রত্যক্ষভাবে কিসের দ্বারা জানি ? স্বৰ্য্য নিজে আমাদিগকে ষে কিরণ প্রেরণ করিতেছেন, সেই কিরণেরই দ্বায়া। সেইরূপ বিশ্বজগতের সবিতা আমাদের মধ্যে অহরহ যে ধীশক্তি প্রেরণ করিতেছেন—যে শক্তি থাকাতেই আমি নিজেকে ও বাহিরের সমস্ত প্রত্যক্ষব্যাপারকে উপলব্ধি করিতেছি—সেই ধীশক্তি র্তাহারই শক্তি—এবং সেই ধীশক্তি দ্বারাই তাহারই শক্তি প্রত্যক্ষভাবে অস্তরের মধ্যে অন্তরতমরূপে অকুভব করিতে পারি। বাহিরে যেমন ভূভুবঃস্বলোকের সবিতৃরূপে তাহাকে জগৎচরাচরের মধ্যে উপলব্ধি করি, অস্তুরের মধ্যেও সেইরূপ আমার ধীশক্তির অবিশ্রাম প্রেররিতা বলিয়া তাহাকে অব্যবহিতভাবে উপলব্ধি করিতে পারি। বাহিরে জগৎ এবং আমার অন্তরে ধী, এ দুইই একই শক্তির বিকাশ, ইহা জানিলে জগতের সহিত আমার চিত্তের এবং আমার চিত্তের সহিত সেই সচ্চিদানন্দের ঘনিষ্ঠ যোগ অনুভব করিয়া সঙ্কীর্ণত হইতে, স্বার্থ হইতে, ভয় হইতে, বিষাদ হইতে মুক্তিলাভ করি। এইরূপে গায়ত্রীমন্ত্রে বাহিরের সহিত অস্তরের, এবং অস্তরের সহিত অন্তরতমের যোগসাধন করে । ব্ৰহ্মকে ধ্যান করিবার এই যে প্রাচীন বৈদিক পদ্ধতি, ইহা যেমন উদার, তেমনি সরল। ইহা সৰ্ব্বপ্রকার-কৃত্রিমতা-পরিশূন্ত । বাহিরের বিশ্বজগৎ এবং অস্তরের ধী, ইহা কাহাকেও কোথাও অনুসন্ধান করিয়া বেড়াইতে হয় না—ইহা ছাড়া আমাদের আর কিছুই নাই। এই জগৎকে এবং এই বুদ্ধিকে তাহার অশ্রাত্মশক্তি দ্বায়া তিনিই অহরহ প্রেরণ করিতেছেন, এই কথা স্মরণ করিলে তাহার সহিত আমাদের সম্বন্ধ যেমন গভীরভাবে, সমগ্রভাবে, একান্তভাবে হৃদয়ঙ্গম হয়, এমন আর কোন কৌশলে, কোন আয়োজনে, কোন কৃত্রিম উপায়ে, কোন কল্পনানৈপুণ্যে হইতে পারে, তাহা আমি জানি না । ইহার মধ্যে তর্কবিতর্কের কোনো স্থান নাই, মতবাদ নাই, ব্যক্তিবিশেষগত প্রকৃতির কোনো সঙ্কীর্ণতা নাই । আমাদের এই ব্রহ্মের ধ্যান শ্বেরূপ সরল অথচ বিরাটু, আমাদের উপনিষদের প্রার্থনাটিও ঠিক সেইরূপ । ●ል বিদেশীরা এবং তাহাদের প্রিয়ছাত্র স্বদেশীরা বলেন, প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র পাপের প্রতি প্রচুর মনোযোগ করে নাই, ইহাই হিন্দুধৰ্ম্মের অসম্পূর্ণতা ও নিকৃষ্টতার পরিচয় । —বস্তুত ইহাই হিন্দুধৰ্ম্মের শ্রেষ্ঠতার প্রমাণ । আমরা পাপপুণ্যের একেবারে মূলে গিয়াছিলাম। অনন্ত আনন্দস্বরূপের সহিত