পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা। ] শিক্ষণসমস্ত । >86: সেইখানেই তাহার বিকাশ হইতেছে— সমাজের মধ্যে নানা আকারে নানা ভাবে তাহার সঞ্চার হইতেছে-লেখাপড়ায়, কথায়বার্তায়, কাজে-কৰ্ম্মে তাহ অহরহ প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিতেছে। সেখানে জনসমাজ যাহা কালেকালে ননা ঘটনায় নানা লোকের দ্বারায় লাভ করিয়াছে, সঞ্চয় করিয়াছে এবং ভোগ করিতেছে, তাহাই বিদ্যালয়ের ভিতর দিয়া বালকদিগকে পরিবেষণের একটা উপায় করিয়াছে মাত্র । 龜 এইজন্ত সেখানকার বিদ্যালয় সমাজের সঙ্গে মিশিয়া আছে, তাঁহা সমাজের মাটি হইতেই রস টানিতেছে এবং সমাজকেই ফলদান করিতেছে। কিন্তু বিদ্যালয় যেখানে মুরিদিকের সমাজের সঙ্গে এমন এক হইয়া মিশিতে পারে নাই, যাহা বাহির হইতে সমাজের উপরে চাপাইয়া দেওয়া, তাহ শুষ্ক, তাহ নিৰ্জ্জীব। তাহার কাছ হইতে যাহা পাই, তাহা কষ্টে পাই, এবং সে বিদ্যা প্রয়োগ করিবার বেলা কোনো সুবিধা করিয়া উঠিতে পারি না । দশটা হইতে চারটে পর্য্যন্ত যাহা মুখস্থ করি, জীবনের সঙ্গে, চারিদিকের মানুষের সঙ্গে, ঘরের সঙ্গে তাহার মিল দেখিতে পাই না । বাড়ীতে বাপমা-ভাইবন্ধুরা যাহা আলোচনা করেন, বিদ্যালয়েরূশিক্ষার সঙ্গে তাহার যোগ নাই, বরঞ্চ অনেক সময়ে বিরোধ আছে। এমন অবস্থায় বিদ্যালয় একটা এঞ্জিনৰ্মাত্র হইয়া থাকে-তাহ বস্তু জোগায়, প্রাণ জোগায় না। এইজন্ত বলিতেছি, য়ুরোপের বিদ্যালয়ের অবিকল্প বাহ নকল করিলেই আমরা যে সেই একই জিনিষ পাইব, এমন নহে। এই নকলে সেই বেঞ্চি, সেই টেবিল, সেইপ্রকার* কাৰ্য্যপ্রণালী সমস্তই ঠিক মিলাইয় পাওয়া যায়, কিন্তু তাহ আমাদের পক্ষে বোঝা হইয় উঠে । পূৰ্ব্বে যখন আমরা গুরুর কাছে বিদ্যা পাইতাম,-শিক্ষকের কাছে নহে, মানুষের কাছে জ্ঞান চাহিতাম,—কলের কাছে নয়, তখন আমাদের শিক্ষার বিষয় এত বিচিত্র ও বিস্তৃত ছিল না এবং তখন আমাদের সমাজে প্রচলিত ভাব ও মতের সঙ্গে পুথির শিক্ষার কোনো বিরোধ ছিল না। ঠিক সেদিনকে আজ ফিরাইয়া আনিবার চেষ্টা করিলে সেও একটা নকল হইবে মাত্র, তাহার বাহ আয়োজন বোঝা হুইয়া উঠিবে, কোনো কাজেই লাগিবে না । অতএব আমাদের এখনকার প্রয়োজন যদি আমরা ঠিক বুঝি, তবে এমন ব্যবস্থা করিতে হইবে, যাহাতে বিদ্যালয় ঘরের কাজ করিতে পারে; যাহাতে পাঠ্যবিষয়ের বিচিত্রতার সঙ্গে অ্যাপনার সজীবতা মিশিতে পারে ; যাহতে পুথির শিক্ষাদান এবং হৃদয়মনকে গড়িয়া-তোলা, দুই ভারই বিদ্যালয় গ্রহণ করে। দেখিতে হইবে, আমাদের দেশে বিদ্যালয়ের সঙ্গে বিদ্যালয়ের চতুর্দিকের যে বিচ্ছেদ, এমন কি, বিরোধ আছে, তাহার দ্বারা যেন ছাত্রদের মন বিক্ষিপ্ত হইয়া না যায় ও এইরূপে বিদ্যশিক্ষাটা যেন কেবল দিনের মধ্যে কয়েকঘণ্টামাত্র সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হইয়া উঠিয়া বাস্তবিকতাসম্পর্কশূন্ত একটা অত্যন্ত গুরুপাক অীবৃন্ট্রাক্ট, ব্যাপার হইয়া না দাড়ায় । இ. -