বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] শিক্ষাসমস্ত । } ("} সহায়তা করিবে। দুধ-ঘি প্রভৃতির জন্য গোরু থাকিবে এবং গোপালনে ছাত্রদিগকে যোগ দিতে হইবে। পাঠের বিশ্রামকালে তাহারা স্বহস্তে বাগান করিবে, গাছের গোড়া খুড়িবে, গাছে জল দিবে, বেড়া বাবে। এইরূপে যুহারা প্রকৃতির সঙ্গে, কেবল ভাবের নহে, কাজের সম্বন্ধও পাতাইতে থাকিবে। অনুকূল ঋতুতে বড়-বড় ছায়াময় গাছের তলায় ছাত্রদের ক্লাস বসিবে। তাহীদের শিক্ষার কতক অংশ অধ্যাপকের সহিত তরুশ্রেণীর মধ্যে বেড়াইতে বেড়াইতে সমাধা হইবে । সন্ধ্যার অবকাশ * তাহারা নক্ষত্রপরিচয়ে, সঙ্গীতচর্চায়, পুরাণকথা ও ইতিহাসের গল্প শুনিয়া যাপন করিবে । অপরাধ করিলে ছাত্রগণ আমাদের প্রাচীন প্রথা অনুসারে প্রায়শ্চিত্ত’ পালন করিবে । শাস্তি পরের নিকট হইতে আপরাধের প্রতিফল, প্রায়শ্চিত্ত নিজের দ্বার অপরাধের সংশোধন । দণ্ডস্বীকার করা যে নিজেরই কৰ্ত্তব্য এবং না করিলে যে গ্লানিমোচন হয় না, এই শিক্ষা বাল্যকাল হইতেই হওয়া চাই—পরের নিকটে নিজেকে দণ্ডনীয় করিবার হীনতা মমুষোচিত নহে । যদি অভয় পাই, তবে এই প্রসঙ্গে সাইসে ভর করিয়া আর-একটা কথা বলিয়া রাখি। এই বিদ্যালয়ে বেঞ্চি-টেবিল-চৌকির প্রয়োজন নাই। আমি " ইংরেজিসামগ্রীর বিরুদ্ধে গোড়ামি করিয়া এই কথা বলিতেছি, এমন কেহ যেন না মনে করেন। আমার বক্তব্য এই ধে, আমাদের বিদ্যালয়ে অনাবশ্বককে খৰ্ব্ব করিবার একটা আদর্শ সৰ্ব্বপ্রকারে স্পষ্ট করিয়া তুলিতে হইবে। চৌকি-টেবিল-ডেস্ক সকল মানুষের সকল সময়ে জোট সহজ নহে, কিন্তু ভূমিতল কেহ কড়িয়া লইবে না। চৌকিটেবিলে সত্যসত্যই "ভূমিতলকে কাড়িয়া লয় | এমন দশা ঘটে যে, ভূমিতল ব্যবহার করিতে বাধ্য হইলে সুখ পাই না, সুবিধা হয় না। ইহা একটা প্রকাগু ক্ষতি । আমাদের দেশ শীতের দেশ নহে, আমাদের বেশভূষা এমন নয় যে, আমরা নীচে বসিতে পারিন, অথচ পরদেশের অভ্যাসে আমরা আস্বাবের বাহুল্য স্বষ্টি করিয়া কষ্ট বাড়াইতেছি। অনাবশ্বককে যে পরিমাণে অত্যাবগুক করিয়া তুলিব, সেই পরিমাণে আমাদের শক্তির অপব্যয় ঘটবে। অথচ ধনী যুরোপের মত আমাদের সম্বল নাই ; তাহার পক্ষে যাহা সহজ, আমাদের পক্ষে তাহ ভার। কোনো-একটা সৎকৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করিতে গেলেই গোড়াতে ঘরবাড়ী ও আস্ বাপত্রের হিসাব খতাইয়া চক্ষে অন্ধকার দেখিতে হয়। এই হিসাবের মধ্যে অনাবশুকের দৌরাত্ম্য বারো-আনা। আমরা কেহ সাহস করিয়া বলিতে পারি না, আমৰু মাটির ঘরে কাজ আরম্ভ করিব, আমরা নীচে অসিনপাতিয়া সভা করিব। এ কথা বলিতে পারিলে আমাদের অৰ্দ্ধেক ভারলাঘব হইয়া যায়, অথচ কাজের বিশেষ তারতম্য হয় না । কিন্তু যে দেশে শক্তির সীমা নাই, দ্ধে দেশে ধন কানায়কানায় ভরিয়া উপচিয়া পড়িতেছে,সেইদেশের আদর্শে সমস্ত কাজের পত্তন না করিলে আমাদের লজ্জ দূর হয় না, আমাদের কল্পনা তৃপ্ত হয় না। ইহাতে আমাদের ক্ষুদ্র শক্তির অধিকাংশই আয়োজমে নিঃশেষিত হইয়া যায়, আসল জিনিষকে খোরাক জোগাইতে পারি না। যতদিন মেঝেতে খড়ি