পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] অঙ্কিত—সেই গগনচুম্বী প্রাকারের গায়ে এই মন্দিরটি ঠেস্ দিয়া রহিয়াছে। এই সকল ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এতটা শব্দকোলাহল আমি প্রত্যাশা করি নাই । কিন্তু ভারতবর্যে, নগরাদি যতই জনপরিত্যক্ত হউক না,-মন্দিরাদি যতই ভগ্নদশাপন্ন হউক না, পূজা-অনুষ্ঠানের কোথাও গতিরোধ হয় না ; দেবসেবা বরাবরই সমান চলিতে থাকে ... কয়েক মিনিট ধরিয়া, কুঁশির ঘন্টা-মূগরিত সেই ক্ষুদ্র মন্দিরটির দিকে আমি মাপা তুলিয়৷ ছিলাম , তাহার পর যেই ভূতলের দিকে দৃষ্টিপাত করিলাম, অমনি আমার নিজের ছায়া দেখিয়া চমকিত হইলাম,---ছায়াটি বেশ পরিস্ফুট ও সহসা-অঙ্কিত । সহজবুদ্ধিতে প্রথমে আমার এইরূপ মনে হইল, বুঝি কেহ আমার পিছনে কোন এক অপূৰ্ব্ব আলোকের দীপ ধরিয়াছে কিংবা হয় ত কেহ বৈদ্যুতিক দীপের শুল রশ্মি আমার উপর প্রক্ষেপ করিয়াছে ;–কিন্তু আসলে তাহ নহে । যাহার কথা আমি ভুলিয়া গিয়াছিলাম, সেই গোলাকার পূর্ণচন্দ্র সেই রাজদরবারের চন্দ্রম, ইহারি মধ্যে স্বপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া স্বকার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছেন ;–এতই সহস, এদেশে দিবাবসান হয়। অন্ত স্থাবরপদার্থেরও স্বপরিস্ফুট ছায়া সৰ্ব্ব পুতিত হইয়াছে – মধ্যে-মধ্যে ছায়া-আলোকের দ্বন্দ্ব চলিতেছে । চান্দ্র-দরবারের ছাদের উপর চন্দ্রম স্বকীয় শুভ্রমহিমায় বিরাজ করিতেছেন ।... উক্ত উৎকট বৰ্ব্বর বাস্তধবনি থামিয়া গেলে আমি'নীচে নামিব ; এই সময়ে, কত খাড়া সিড়ি দিয়া, কত সরু বারওrপথ দিয়া, কত দুর্ভিক্ষপীড়িত ভারতে। २¢¢ দালানের মধ্য দিয়া একাকী এই রাত্রিকালে আমায় নামিতে হইবে ;—আর রাত্রিকালে এই প্রাসাদ বানর ও অপচ্ছায়াদিগেরই আশ্রয়স্থান । তাই, ওই বাপ্তধবনি না থামিলে আমার চলিতে সাহস হইতেছে না। ബ് বড়ই বিলম্ব হইতেছে,—বড়ই বিলম্ব হইতেছে । এই সময়ের মধ্যে আকাশে সমস্ত তারাই ফুটিয়া উঠিল। এই স্থানটি যেমন একদিকে রাজপ্রতাপে মহিমান্তি-তেমনি আবার নিভৃত-নিরালয়। যে রাজারা এই চাদনী-দুরবারের কল্পনা করিয়াছিলেন, তাহাদের কল্পনার দৌড় না জানি কত ছিল । সাঙ্গ হউক, অৰ্দ্ধঘণ্টার পরে, ঢাকের বাদ্য ও পবিত্র শখের নিনাদ একটু প্রশমিত ইষ্টল। শঙ্খনাদের টানটা এখনো চলিয়াছে— তবে, একটু মৃদুভাবে ; মধ্যে-মধ্যে আবার যেন প্রাণপণে ধ্বনিত হইতেছে ;—তবে এখন একটু রহিয়া-রহিয়া। এইবার যেন শব্দটার , মরণযন্ত্রণা উপস্থিত,—এইবার মরিল ;–সমস্ত শক্তি নিঃশেষিত হওয়াতেইযেন মরিল । আবার সব নিস্তব্ধ । সকলুের তলদেশ,—উপত্যকার গভীর অন্তস্তল— অম্বরের ধ্বংসাবশেষে সমাচ্ছন্ন। সেইখান হইতে শৃগালের শোকবিষ্ণু তীক্ষ কণ্ঠস্বর আবার শুনা যাইতে লাগিল । • আবার যখন আমি নীচে নাবিতে লাগিলাম, তখন সিঁড়ির মধ্যে—প্রাসাদের নিম্নস্থ দালানগুলার মধ্যে, তেমন অন্ধকার আর নাই। সে সমস্তই চন্দ্রমার, শুভ্ৰকিরণে —নীলাভ কিরণে-অস্তুবিদ্ধ হইয়াছে ; দন্তাকৃতি ছোট ছোট জানলার ফাক দিয়া