বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, প্রথম পরিচ্ছেদ । সুবর্ণরেখার তীরে তীরে নীলাচলের রাজপথ কিয়দুর পর্যন্ত চলিয়। গিয়াছে । দাতনের অনতিদূরে অকস্মাৎ নিবিড়-অরণ্য-মধ্যে যখন ইহার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হইত, সে প্রায় দুইশত বৎসরের কথা । সে জঙ্গল এখন আর নাই । তাহার স্থানে অশ্বথবটের ছায়াস্নিগ্ধ সোনাকোণী নামে গ্রাম বসিয়াছে। গ্রামখানির, প্রায় তিনদিক্‌ বেড়িয়া স্বর্ণপ্ৰসবিনী সুবর্ণরেখা সাগরসঙ্গমে চলিয়াছেন। তাহার প্রসাদে গ্রামবাসীদের অল্পবন্ধের ক্লেশ নাই, কিন্তু মাঝে মাঝে ঝারিখ গুপ্রদেশের এই শৈলস্বতাটি সহসা বঙ্গাগৰ্ভভৈরবী মূৰ্ত্তিতে যখন দেখা দেন, তখন ধনপ্রাণ লইয়া টানাটানি পড়িয়া যায় । 影 নদীতীরে অনেকগুলি প্রাচীন নিম্ব ও বিস্ব বৃক্ষের অন্তরালে জীর্ণ শিবমন্দির এবং তাহারই অনতিদূরে প্রকাগুবটতরুমূলে অষ্টধাতুময়ী ক্ষুদ্র কালিকামূৰ্ত্তি । জনশ্রুতি এষ্ট যে, এখানে অরণ্যমধ্যে ডাকাইতদের আডিডা ছিল এবং দেবদেবীর ঐই যুগলমূৰ্ত্তি তাহাদেরই স্থাপিত। সেকালে ডাকাতের বিস্তর নরবলি দিয়া দেবীকে পরিতুষ্ট করিত, কিন্তু দেবাদিদেব, ভূতনাথ,গৃহিণীর এই বীভৎস রুচির প্রতিশদ করায় সে প্রথা শেনকোণীর অভু্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে লোপ পাইয়াছে। এমন কি, কালিকাসতী পতির আজ্ঞা শিরোধাৰ্য্য বৃদি, লাটুমড়ার বাল পর্যন্ত রহিত করিয়াছেন। শাক্তদের মুখে এই ইতিহাস শোনা যায়। বৈষ্ণবদের কাহিনী অন্তরূপ। র্তাহারা বলেন, দস্থাপতি এক ভক্ত গোসাইকে ধরিয়া লইয়া গিয়া তাহার প্রভাবে শেষে বৈরাগ্য অবলম্বন করে এবং যথাকালে সে শিবমূৰ্ত্তির প্রতিষ্ঠা ও বলি নিবারণ করিয়া পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছিল। কালক্রমে সুবর্ণরেখা এই দেবস্থানের এত কাছে সরিয়া আসিয়াছে যে, বর্ষাপ্রবাহ আজিও প্রাচীনকীৰ্ত্তি লোপ না করায় দৈবশক্তির অদ্ভূত মাতম জনসাধারণের ভয়ভক্তি যুগপৎ উদ্রিক্ত করিয়া থাকে । এষ্ট জাগ্রত-জীবন্ত দেবতাদ্বয়ের বাৎসরিক উৎসব চৈত্রমাসের শেষভাগে আরম্ভ হষ্টয়া সংক্রান্তির দিনে শেষ হয় এবং সেই উপলক্ষ্যে চিরদিন এখানে সমারোহে মেলা বসিয়া আসিতেছে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ । কিন্তু সেকালের মত জমাট উৎসব এখন আর হয় না। তখন দেবীর পূজা একদিনেই শেষ হইত বটে, কিন্তু মহাদেবের মস্তকে দুধগঙ্গাজল ঢালিবার জন্ত পনরদিন ধরিয়াক্রমাগত দূরদূরান্তর হইতে বস্ত্রীলঙ্কারভূষিত এবং বেত্রগুচ্ছধারী গাজনের সন্ন্যাসিদল এই তীর্থে আগমন করিত। আর কত স্ত্রীপুরুষ মাননা করিয়া যে ধরণ দিতে আসিত, তাহার সংখ্যা হসন' এই একপক্ষকাল উত্তরে মেদিনীপুর এবং দক্ষিণে বালেশ্বরের পথে অহোরাত্র দেখা যাইত, ভক্তের অর্ঘ্য লইয়াসাষ্টঙ্গ ভূমিতে