বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢९९ শেষ করিয়াও অনাবশুকে আপনার আনন্দ ব্যক্ত করে। এই রসের অতিরিক্ততাই সঙ্গীতকে, ছন্দকে, নানাপ্রকার ললিতকলাকে আশ্রয় করিতে চায়। তাহাই ব্যবহারের অতীত অহেতুক হইয়া অনিৰ্ব্বচনীয়রূপে আপনাকে প্রকাশ করিতে চায়। নায়কনায়িকার যে প্রেম কেবলমাত্র দর্শনম্পর্শনের মধ্যেই গাহিয়া উঠে ঃ– জনম অবধি হম রূপ নেহারিন্থ, নয়ন না তিরপিত ভেল ।* লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখলু, তবু হিয় জুড়ন না গেল ॥ —তাঁর সে মুহুর্তকালের দেখা-শুনা কেবল সেই মুহূর্তটুকুর মধ্যে নিজেকে ধারণ করিতে পারে না বলিয়াই লক্ষ লক্ষ যুগের আকাঙ্ক্ষা সঙ্গীতের মধ্যে স্বষ্টিন করিয়া বঁাচে না । অতএব যে রস মানবের সর্বপ্রকার প্রয়োজনুমাত্রকে অতিক্রম করিয়া বাহিরের দিকে ধারিত হয়, তাহাই সাহিত্যরস। এইরূপ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পৎকেই আমরা ঐশ্বৰ্য্য বলিয়া থাকি। সাহিত্য মানবহৃদয়ের ঐশ্বৰ্য্য। ঐশ্বৰ্য্যেই সকল মানুষ সম্মিলিত হয়—যাহা অতিরিক্ত, তাহাই সৰ্ব্বসাধারণের । , , - ময়ূরশরীরের যে উদ্যমটা অতিরিক্ত, তাহাই তাহার বিপুল পুচ্ছে অনাবশ্বক বর্ণচ্ছটায় বিচিত্র হইয়া উঠে—এই কলাপশোভা ময়ূরের একৃলার" মহে, তাহা বিশ্বের। . প্রভাতের আলোকে পার্থীর আনন্দ যখন তাহার আহারবিহারের প্রয়োজনকে ছাপাইয়া উঠিতে থাকে, তখনি সেই গানের অপরিমিত ঐশ্বর্ঘ্যে পার্থী বিশ্বসাধারণের সহিত নিজের: যোগস্থাপন বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, ফাল্গুন। করে। সাহিত্যেও তেম্নি মানুষ আষাঢ়ের ‘ মেঘের মত যে রসের ধারা এবং যে জ্ঞানের ভার নিজের প্রয়োজনের মধ্যে আর ধারণ করিয়া রাখিতে পারে না, তাহাকেই বিশ্বমানবের মধ্যে বর্ষণ করিতে থাকে। এই উপায়েই সাহিত্যের দ্বারাই হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়, মনের সঙ্গে মন মিলিত হইয়া মানুষ ক্রমাগত স্বকীয়, এমন কি, স্বজাতীয় স্বাতস্থ্যের উদ্ধে বিপুল বিশ্বমানবে পরিণত হইবার অভিমুখে চলিয়াছে। এই কারণেই আমি মনে করি, আমাদের ভাষায় “সাহিত্য”শব্দটি সার্থক। " ইহাতে আমরা নিজের অত্যাবশ্বককে অতিক্রম করিয়া উদারভাবে মানুষের ও বিশ্বপ্রকৃতির সাহিত্য লাভ করি । কোনো দেশে , যখন অতিমাত্রায় প্রয়োজনের কাড়াকড়ি পড়িয়া যায়, তখন সেখানে সাহিত্য নিৰ্জ্জব হইয়া পড়ে। কারণ, প্রয়োজন পরকে আঘাত করে, পরকে আকর্ষণ করে না । জৰ্ম্মণিতে যখন লেসিং, গ্যটে, শিলর, হাইনে, হেগেল, কান্ট, হুম্বোল্ড,

  • সাহিত্যের অমরাবতী স্বজন করিয়াছিল,

তখন জৰ্ম্মণির বাণিজ্যতরী-রণতরী ঝড়ের মেঘের মত পাল ফুলাইয়৷ পৃথিবী আচ্ছন্ন করিতে ছুটে নাই। আজ বৈশুযুগে জৰ্ম্মণির যতই মেদবৃদ্ধি হইতেছে, ততই তাহার সাহিত্যের হৃৎপিণ্ড বলহীন হইয়া পড়িতেছে। ইংরেজও আজ নিজের ভাণ্ডার পূরণ করা, দুৰ্ব্বলকে দুৰ্ব্বলতর করা এবং সমস্ত পৃথিবীতে, একমাত্র অ্যাংলোস্তাকৃশ মহিমাকেই গণ্ডারের • নাসাগ্র-স্থিত একশৃঙ্গের মত ভীষণভাবে উষ্ঠত রাখাকেই ধৰ্ম্ম বলিয়া গণ্য করিয়াছে, তাই, a সেখানে সাহিত্যরঙ্গভূমিতে “একে একে