পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] আসিতেছে । অথচ প্রতি বৎসর গ্রীষ্মাবকাশের পর যখন ছাত্রগণ এই বাড়ী ভাড়া করিতে আসে, তখন তিনি বলেন—“না, আমার এ বাড়ীতে মেস্ কৰ্ত্তে দেব না। দেখ না, মেসের ছেলেরা বাড়ীটাকে কেমন থাকুপ কোরে ফেলেছে-” পরে ছেলের নিরুপায় হইয়া ৩০২ টাকার স্থলে ৩৫ টাকা ভাড় স্বীকার করিলে তিনি চাবিনাড়ার শব্দ শুনিয়া একবার অনারে প্রবেশ করেন এবং লুসিয়া বলেন—“আচ্ছ, তোমরা যে কয়টি পার, বন্ধুবান্ধব একত্র হইয়া আমার বাড়ীতে থাক, কিন্তু সাবধান—মেস কোরে না ।” এইরূপে বংসর-বৎসর বয়োবুদ্ধির সঙ্গে বাড়ীটির ভাড়াও বৃদ্ধি পাইয়া এবার ৫৩ টাকায় দড়িাইয়াছে। রাখাল, নগেন্দ্র, কুমুদ, উপেন্দ্র প্রভৃতি কয়েকটি ছেলে এবার পাচদিন হোটেলে খাইয়া আষাঢ়মাসের প্রচণ্ড রৌদ্রে হাটাইটি-ছুটােছুটি করিয়া এবং দুইতিনদিন হেদোর বাগানে বেঞ্চের উপর রাত্রিযাপন করিয়া অনেক কষ্টে এই বাড়ী হস্তগত করিয়াছে। এ বাড়ীতে তাহারা বিশটি ছাত্র থাকে, সকলেই পুৰ্ব্ববঙ্গবাসী। কাহারও বাড়ী ঢাকা,কাহারও বাড়ী ফরিদপুর, কাহারও বাড়ী বরিশাল, কাহারও বাড়ী যশোর, কাহারও বাড়ী খুলনা । সুতরাং এটি "বাঙাল মেদ"। আমি যশোর ও খুলনার লোকদিগকে পূর্ববঙ্গবাসী বলিলাম, ইহাতে তাহারা লাঠি লইয়ু আমাকে মারিতে উঠিবেন না ত ?

শ্রাবণমাস-প্রাতঃকাল। বেলা ৯ট বাজিয়াছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, ভোরে,এক পললা বৃষ্টি হইয়া গিয়াছে। তরল মেঘ ভেদ * করিা একটু একটু রৌদ্রের আভা ফুটিয়া

বাঙলার চিত্র। 44 বাহির হইতেছে। কলিকাতাসহরে প্রাতঃকালে বিনা মেঘেও আকাশ অন্ধকারময়, কলের চিম্নিসমুদগীর্ণ ধূমরাশি স্বৰ্য্যদেবকে বড় আমল দিতে চায় না। প্রভাতে বৃষ্টি হওয়াতে রাস্ত কর্দমাক্ত হইয়াছে। ছেকড়া-গাড়ির ছাড় ছাড়শব কোচোয়ানের তাঁদুর সহিত আঘাতপ্রাপ্ত জিহবার টকৃটক্ শব্দের সহিত মিলিত হইয়া শ্রীতিমুখোৎপাদন করিতেছে। থাকিয়া থাকিয়া ট্র্যামগাড়ির ঝনঝন্‌হসহস্শব্দ যেন কৰ্ণ বধির করিতেছে। তাহার উপর আবার দ্রুতগামী যান ফিটন্‌ব্ৰাউহাম্ প্রভৃতি গাড়িসকলের হড় হড়-ঘড়ঘড় শব্দ রাস্ত ও তাহার উভয়পার্শ্বস্থ ভূমি কম্পিত করিয়া এবং উচ্চ অট্টালিকাশ্রেণীর গাত্রে প্রতিধ্বনি তুলিয়া দূরে লীন হইতেছে। থাকিয়-থাকিয় সেই কম্পনের তরঙ্গ আঁসিয়া আমাদের সেই ১৭নম্বর বাড়ীটির ভাঙা খড়ী খড়িগুলিকে ঠকৃঠক্‌ করিয়া কাপাইতেছো গাড়ির শব্দের অন্তরালে ফেরিওয়ালাগণের. বিবিধ ডাক বিবিধ মুরে ও বিবিধ অঙ্গতে শুনু যাইতেছে ; যেমন—“ভাল আব—চাই ভাল আব”—“সেলাই জুতিয়ে-য়ে-য়ে”—ঘি-ঘি”— “ভাঙা ছাতা সারাবে”—“চাই আলু-পটোল” —“চাই বড়-বড় সরপুরিয়ে” ইত্যাদি। মাঝে একজন নেড়ামাথা, • কেীপীনপর, তিলকছাপে ডেড্‌লেটার আফিসের চিঠির ন্তায় সিলমারা বৈরাগী মন্দিরা বাজাইতে বাজাইতে দন্তশূন্তবদনে "হরি বল গেীর নাচে নিতাই নাচে রে” গাইতে গাইতে আড়নয়নে রাস্তার দুই ধারে গবাক্ষশ্রেণীর পানে মিটমিট তাকাইতে তাকাইতে অন্তর্ভূত হইলেন। বেলাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্টায়ু লৈাকচলাচল