বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গরহস্য - ভূবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ ir বঙ্গরহস্য। একজন ঘটক মধ্যে মধ্যে দর্শন দেন, কিন্তু ভঁহাদের আর পূর্ব-সন্মান পুৰ্ব্ব-গৌরব কিছুই নাই। কেহই আয় তঁহাদের মুখাপেক্ষী নহেন ঘটকের পরিবর্তে অধুনা গোটাকতক প্রৌঢ় অথবা বৃদ্ধ স্ত্রীলোক ভদ্রলোকের গৃহে গৃহে বিবাহের ঘটকালি করিয়া ফিরিতেছে। তাহদের উপাধি হইয়াছে ঘটুকী। তাহারা যে কে, কি জাতি, কেহই সে কথা জিজ্ঞাসা করে না ; সুক্ষ্ম পরিচয় লইতে গেলে প্ৰকাশ হইয়া পড়িতে পারে, কেহ কেহ হয় তো স্থানবিশেষের অবীরা তপস্বিনী ; অথচ তাহারা বহু মানে গৃহীত হইয়া অবাধে ভদ্রলোকের অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া কুলাচার্যের কাৰ্য্য করে। কুলাচাৰ্য্যের কাৰ্য্যের মধ্যে তাহারা জানে, ব্ৰাহ্মণের কন্যা শূদ্রের বধু অষ্টতে পারে না, বন্দোপাধ্যায়ের কন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বধু হইতে পারে না, বসুর কন্যা বসুর বধু হইতে পারে না, এই পৰ্য্যন্ত। আর তাহারা জানে, কত ভরি সোণা, কত ভরি রূপা । n ঐ সকল ঘটুকী অন্তঃপুর মধ্যে আর কি কি কাৰ্য্য করে, তাহাও আমরা শুনিয়াছি। তাহারা কুলের কুমারীগুলিকে উলঙ্গিনী করিয়া আপাদ-মস্তক পরীক্ষা করে। “পরীক্ষাপূর্বক দারপরিগ্রহ” এই একটী শাস্ত্রের বচন। “ সে পরীক্ষার অর্থ জ্যোতিষবাক্যপ্রমাণে লক্ষণালক্ষণ নিরূপণ । অজ্ঞাতকুলশীল অথবা বাজারের স্ত্রীলোকেরা সেইরূপে পরীক্ষা করিতে পারে, এইরূপ বিশ্বাস কবিয়া যে বাটীর কর্তারা তাহাদিগকে ঐ রূপ কাৰ্য্যে স্বাধীনতা দেন, তাহাদিগকে কি বলিয়া প্রশংসা করিতে ইচ্ছা হয়, তাহা আমরা ভাবিয়া পাই না। পূর্বে বলা হইল, ঘটুকীরা কে কি জাতি, তাহা জানা যায় না ; অথচ তাহারা ব্ৰাহ্মণ কায়স্থ উভয় জাতির পুত্ৰ-কন্যার বিবাহে অসঙ্কোচে ঘটকালী করে। ব্ৰাহ্মণের পরিচয় তাহারা কি জানে, কায়ন্থের পরিচয়ই বা তাহারা কি জানে, এ কথাও কেহ তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করেন না। বরাকর্তা জিজ্ঞাসা করেন কেবল সোণ-রূপার স্থা, দান-সজ্জার কথা আর পাত্রের বিস্তা-পরীক্ষার পাশের কথা । কৰ্ত্তার গৃহিণীও ঐ সকল কথার অতিরিক্ত অন্য কথা জিজ্ঞাসা করেন না ; জিজ্ঞাসা করেন কেবল মেয়োটীর রূপ কেমন-গুণ কেমন। আর কিছু জিজ্ঞাসা না। করিবার হেতু এই যে এখন আর কুলপরিচয় জানিবার প্রয়োজন হয় না। যে সকল কথা আমরা বলিতেছি, তাহা যেন বিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রবন্ধ। এরূপ বর্ণনা দর্শন করিয়া সাধারণ লোকে আমাদের বিবাহবাজারের নিগুঢ় অঙ্গ