অক্ষয়কুমার দত্ত s এই সময়ে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত “তত্ত্ববোধিনী সভার’ উদ্যোগে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা নামে একটি পাঠশালা স্থাপিত হয়। ঈশ্বর গুপ্ত মহাশয়ের চেষ্টায় অক্ষয়কুমার এই বিদ্যালয়ের অন্যতম শিক্ষক নিযুক্ত হন। তঁহাকে সাহিত্য, ভূগোল ও পদার্থবিজ্ঞান পড়াইতে হইত। তখন ভূগোল সম্বন্ধীয় ভাল বাংলা গ্ৰন্থ ছিল না। অক্ষয়কুমার এই অভাব দূরীকরণের জন্য স্বয়ং একখানি ভূগোল” প্রণয়ন ও প্রকাশিত করেন । ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী সভা হইতে তত্ত্ববোধিনী পত্রিক’ নামে একখানি মাসিক পত্র প্রকাশিত হয়। অক্ষয়কুমারের বিশুদ্ধ রচনা পদ্ধতি দেখিয়া মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ মুন্ধ হইয়া তীহাকে উহার সম্পাদকের পদে নিযুক্ত করেন। অক্ষয়কুমার প্রায় তেরো বৎসর কাল অসাধারণ কৃতিত্বের সহিত এই পত্র সম্পাদন করেন। এই পত্রে তীহার সাহিত্য, বিজ্ঞান, পুরাতত্ত্ব, দর্শন প্রভৃতি নানা বিষয়ের অসংখ্য প্ৰবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই সকল সন্দর্ভ বাংলা গদ্য সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ রত্ন বলিলে অত্যুক্তি হয় না। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে অক্ষয়কুমার ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার” নামক দুইখণ্ডে সম্পূর্ণ একটি জ্ঞানপ্ৰদ গ্ৰন্থ প্রকাশিত করেন। ইহার পর চারুপাঠ” প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ নামক দুইখানি গ্রন্থে তাহার অনেকগুলি সন্দর্ভ গ্রন্থকারে প্রকাশিত করেন। তিনি এতদব্যতীত বহু বিদ্বৎসভায় বক্তৃতাদি করিতেন। অত্যধিক মানসিক পরিশ্রমে একদিন তিনি মূৰ্ছিত হইয়া পড়েন এবং তাহার শিরোরোগের সূত্রপাত হয় ; কিন্তু মাতৃভাষায় উন্নতির জন্য তিনি সামান্য বেতনে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদনা করিতে লাগিলেন। তিনি কখনও নিজ আর্থিক উন্নতির চেষ্টা করেন নাই, কিংবা সাহিত্য হইতে অবসর গ্রহণ করেন নাই। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতায় নির্ম্যাল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইলে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর শিক্ষাবিভাগের কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিলেন অক্ষয়কুমারকে ১৫০ বেতনে প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত করা হউক। তত্ত্ববোধিনী সভা হইতে অক্ষয়কুমার সামান্য বেতন পাইতেন, অন্য কেহ হইলে এরূপ উচ্চ পদ লাভ করিয়া আনন্দিত হইতেন। কিন্তু তিনি আনন্দিত হইলেন না। র্তাহার অজ্ঞাতসারে বিদ্যাসাগর মহাশয় শিক্ষাবিভাগে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়কে অপদস্থ হইতে হইবে ভাবিয়া তিনি এই কার্য গ্ৰহণ করিলেন বটে, কিন্তু তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় পূর্বের ন্যায় লিখিতে লাগিলেন। অক্ষয়কুমার নর্মাল বিদ্যালয়ে ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি পড়াইতেন। বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় ভাল গ্রন্থ বাংলা ভাষায় তখন ছিল না। বলিয়া তিনি স্বয়ং পদাৰ্থ বিদ্যা” অর্থাৎ ‘জড়ের গুণ ও গতির নিয়ম’ নামক একখানি গ্ৰন্থ প্রণয়ন করেন। এই গ্রন্থের বহু সংস্করণ মুদ্রিত হইয়াছিল। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে শিরোরোগের জন্য অক্ষয়কুমার অবসর গ্রহণ করিতে বাধ্য হন। তিনি নানা স্থানে স্বাস্থ্যলাভের জন্য পরিভ্রমণ করিয়া অবশেষে বালীতে* একটি উদ্যানবাটিকা নির্মাণ করিয়া বাস করিতে আরম্ভ করেন। তিনি এই উদ্যানবাটিকার নাম