পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূদেব মুখোপাধ্যায় যে সকল মহাপুরুষ ইংরেজ রাজত্বের প্রথম ভাগে এদেশে জন্মগ্রহণ করিয়া ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তন ও প্রচারের ব্ৰত গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং ইংরেজি শিক্ষা গ্ৰহণ করিয়াও ইংরেজি সভ্যতায় মুগ্ধ হন নাই তাঁহাদের মধ্যে স্বৰ্গত ভূদেব মুখোপাধ্যায় মহাশয় অন্যতম। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইবার পূর্বেই ভূদেব উচ্চ শিক্ষা লাভ করিয়া এদেশে শিক্ষা-প্রচারের ব্রত গ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি নিজে ইংরেজি শিক্ষিত ছিলেন বটে, কিন্তু র্তাহার পিতা একজন খ্যাতনামা সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন এবং নিজ টােলে অধ্যয়ন অধ্যাপনা করিয়াই জীবন কাটাইয়া দিয়াছিলেন। ভুদেবের পিতার নাম ছিল পণ্ডিত বিশ্বনাথ তর্কভূষণ। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ তারিখে কলিকাতায় ভুদেবের জন্ম হয়। তিনি বাল্যকাল হইতেই ইংরেজি প্রথায় শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন ; প্রথমে কিছুকাল তাঁহাকে সংস্কৃত কলেজে পড়িতে হইয়াছিল বটে, কিন্তু পরে তিনি হিন্দু কলেজে প্রবিষ্ট হইয়া তথায় একজন উৎকৃষ্ট ছাত্র বলিয়া পরিচিত হইয়াছিলেন। ভূদেব স্কুলে পঠদ্দশাতে প্রতি বৎসর নানাপ্রকার পুরস্কারাদি লাভ করিতেন। ভূদেব যখন কলিকাতা হিন্দু কলেজের ছাত্র তখন কলিকাতায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জীবনযাত্ৰা-প্ৰণালী লইয়া বিষম বিরোধ চলিতেছিল। ঐ সময়ে ভুদেবের সহপাঠী মাইকেল মধুসুদন দত্ত মহাশয় খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন; ভূদেবও অজ্ঞাতসারে ক্ৰমে সেই দিকে আকৃষ্ট হইতেছিলেন। পুত্রের এই ভাবগতিক দেখিয়া পিতা বিশ্বনাথ স্থির থাকিতে পারেন নাই। তিনি পুত্ৰকে দিয়া প্ৰতিজ্ঞা করাইয়া লইয়াছিলেন যে ভুদেব কখনও অখাদ্য ভোজন বা অপেয় পান করিবেন না। পিতার এই উপদেশ তিনি সারা জীবন পালন করিয়াছিলেন। এবং উত্তরকালে নিষ্ঠাবান হিন্দু বলিয়াই তাঁহার প্রসিদ্ধি হইয়াছিল। হিন্দু কলেজের পাঠ সমাপনের পর বহুদিন ভূদেব কোনো ভাল কাজ সংগ্ৰহ করিতে পারেন নাই। সে সময়ে তিনি নানাস্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিয়া বেড়াইতেন। দরিদ্র ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের সস্তান ভুদেবের পক্ষে কোন কাৰ্য গ্ৰহণ না করিয়া এই ভাবে শিক্ষাবিস্তারে আত্মনিয়োগ করা সম্ভবপর হইল না; তিনি সুবিধা পাইয়াই মাসিক ৫০৫ টাকা বেতনে গভর্নমেন্ট স্কুলের শিক্ষকের কার্য গ্রহণ করিয়াছিলেন। ইহাই ভুদেবের শিক্ষা ও মনোবৃত্তি অনুসারী পেশা ছিল। শিক্ষকতার মধ্য দিয়া তিনি দেশসেবা করিতে প্ৰথম হইতেই সঙ্কল্প করিয়াছিলেন। কিন্তু ভূদেবের মত একজন অসাধারণ শক্তিশালী ব্যক্তির পক্ষে শিক্ষকতাই শেষ কার্য বলিয়া গৃহীত হয় নাই। তঁহার শিক্ষকতা কার্যে মুগ্ধ হইয়া গভর্নমেন্ট ঠাঁহাকে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে স্কুলসমুহের অতিরিক্ত পরিদর্শকের কার্যে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। অবসর গ্রহণের