পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহেন্দ্ৰলাল সরকার RS বাল্যকালে মাতুলালয়ে মাতৃপিতৃহীন” মহেন্দ্রলালকে বাজার মাথায় করিয়া আনিতে হইত। বাড়িতে আলোকের অভাবে অনেক সময় তিনি রাস্তার আলোকের সাহায্যে পাঠ প্ৰস্তুত করিতেন। এত কষ্টের মধ্যে কাটিলেও, স্কুলে মহেন্দ্রলাল একজন মেধাবী ছাত্র বলিয়া গণ্য হইয়াছিলেন। প্রধান শিক্ষক উমাচরণ মিত্রের ইংরেজি উচ্চারণ বিশুদ্ধ ও মধুর ছিল। মহেন্দ্রলাল বাল্যকাল হইতেই উমাচরণ বাবুর অনুকরণে পাঠ ও আবৃত্তি করিতে চেষ্টা করিতেন। এই অনুকরণ চেষ্টার ফলেই কালে তিনি বিশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য যশোভাজন হইয়াছিলেন। মহেন্দ্রলাল অল্পবয়সেই সুন্দর ইংরেজি রচনা করিতে পারিতেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্রলাল হেয়ার স্কুল হইতে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান লাভ করিয়া জুনিয়ার স্কলারশিপ লাভ করেন এবং হিন্দু কলেজে প্রবিষ্ট হন।” হিন্দু কলেজ হইতে সিনিয়র বৃত্তি লাভ করিয়া ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেডিক্যাল কলেজে প্রবেশ করেন। বিজ্ঞানের প্রতি প্ৰগাঢ় অনুরাগই মহেন্দ্রলালের মেডিক্যাল কলেজে প্রবেশের কারণ। মহেন্দ্রলাল মেডিক্যাল কলেজে ছয় বৎসর পাঠ করিয়া ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে এল. এম. এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অনেকগুলি পদক পারিতোষিক ও বৃত্তি লাভ করিয়াছিলেন। তিনি যখন মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বার্ষিক শ্রেণির ছাত্র ছিলেন, সেই সময় উচ্চশ্রেণির ছাত্রদিগের অনুরোধে এবং অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকগণের অনুমতি লইয়া, ‘চক্ষুর গঠন ও কার্যপ্ৰণালী” সম্বন্ধে কলেজে। কয়েকটি সারগর্ভ বক্তৃতা প্ৰদান করেন। এই বক্তৃতায় তিনি সকলেরই প্ৰশংসাভাজন হইয়াছিলেন। তাহার নিজ প্রতিভাশুণে অল্পকালের মধ্যেই তিনি শহরের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক হইয়া উঠিয়াছিলেন। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্রলাল সর্বোচ্চ ডাক্তারি পরীক্ষা এম ডি” পাশ করিয়া প্ৰথম স্থান অধিকার করেন। এই সময় হইতেই তাহার খ্যাতি চারিদিকে আরও বিশেষভাবে বিস্তুত হইয়া পড়ে। এই বৎসরই কলকাতায় ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বঙ্গীয় শাখা * প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি প্ৰথমে এই অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ও তিন বৎসর পরে সহকারী সভাপতি মনোনীত হন। এই শাখা প্রতিষ্ঠাকালীন সভায় মহেন্দ্রলাল হোমিওপ্যাথির নিন্দা করিয়া বক্তৃতা করিয়াছিলেন। তখন তাহার দৃঢ় মত” ছিল-‘হােমিওপ্যাথি চিকিৎসায় যে সকল রোগী আরোগ্য হয়, তাহা ঔষধের গুণে নহে, রোগীকে বিশেষ ভাবে পরিচর্য করার ফলেই সম্ভব হয়। সেই সময় তাহার কোনো বন্ধু তীহাকে একখানি ইংরেজি হােমিওপ্যাথিক পুস্তক^* সমালোচনার জন্য প্ৰদান করেন। মহেন্দ্রলাল মনে করিলেন, হােমিওপ্যাথি যে বিজ্ঞানমূলক চিকিৎসা নয়, তাহা প্রমাণ করিবার এই একটা বিশেষ সুযোগ। কিন্তু পুস্তকখানি পাঠ করিয়াই তঁহার ধারণা জন্মিল যে, হােমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্ৰণালী সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান না থাকিলে ইহার যথাযথ সমালোচনা করা অসম্ভব। তিনি সেইজন্য একজন বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথের ১২ রোগীদিগের চিকিৎসা-কাৰ্য বিশেষভাবে লক্ষ্য করিতে আরম্ভ

  • ‘মাতাপিতৃহীন’ শুদ্ধ ব্যবহার।