পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত

পরলোকগত দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের জীবনী অদ্ভুত বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরূপ অসাধারণ বৈচিত্র্যময় জীবনী সচরাচর কোথাও দেখা যায় না। যতীন্দ্রমোহন ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত বরমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত চট্টগ্রামের স্বনামখ্যাত উকিল ছিলেন। যতীন্দ্রমোহনের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে দেশে যে জাতীয়তা প্রচার আন্দোলন আরম্ভ হইয়াছিল, যাত্রামোহন তাহার একজন অক্লান্তকর্মী নেতা ছিলেন। যাত্রামোহন যেমন একদিকে ওকালতি দ্বারা প্রচুর অর্থার্জন করিতেন, অপর দিকে তেমনিই দেশের সকল প্রকার জনহিতকর ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সাহায্য দান করায় তিনি দেশে সকলের শ্রদ্ধাভাজন হইয়াছিলেন। এইরূপ পিতার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করায় প্রথম জীবন হইতেই যতীন্দ্রমোহনের মনও উচ্চভাবধারায় অনুপ্রাণিত হইয়াছিল ।

 যতীন্দ্রমোহন কলকাতা ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, হেয়ার স্কুলও ও প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষালাভ করেন। পিতা পুত্রকে শুধু এদেশের শিক্ষা প্রদান করিয়াই সন্তুষ্ট থাকিবার মত লোক ছিলেন না, তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য পুত্রকে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করেন। তখনও যতীন্দ্রমোহন বয়ঃপ্রাপ্ত হন নাই। বিলাতে যাইয়া তিনি কেম্ব্রিজের ডাউনিং কলেজে শিক্ষালাভ করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইনের প্রথম পরীক্ষা পাশ করেন ও ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এ উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথমে তিনি আইন পরীক্ষা পাশ করিয়া এল. এল. বি উপাধি প্রাপ্ত হন এবং সেই বৎসরই জুন মাসে ব্যারিস্টার বলিয়া ঘোষিত হন।

 এই সময় যতীন্দ্রমোহনের জীবনে সংগ্রামের যুগ আরম্ভ হইল। প্রথমেই বলিয়াছি, তিনি সাধারণ মানুষ ছিলেন না; তাঁহার জীবন সংগ্রামময় ছিল এবং সর্বদা কোনো না কোনো সংগ্রামে লিপ্ত থাকিতে তিনি আনন্দ বোধ করিতেন। সাধারণ লোক হইলে তিনি কলিকাতা হইতেই এম. এ. বি. এল্ পাশ করিয়া চট্টগ্রামে পিতার নিকট যাইয়া ওকালতি আরম্ভ করিতেন। যতীন্দ্রমোহন সে সুগম পথ ত্যাগ করিয়া বিলাতে যাইয়া ব্যারিস্টার হইলেন এবং কলিকাতায় ফিরিয়া আত্মনির্ভরশীল হইয়া ব্যারিস্টারি দ্বারা অর্থার্জনের সঙ্কল্প করিলেন। বিলাতে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি নেলী গ্রে নাম্নী এক ইংরেজ রমণীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন। যতীন্দ্রমোহন জার্নিতেন, এই বিবাহ তাঁহার মাতাপিতা অনুমোদন করিবেন না এবং এই বিবাহের ফলে তাঁহাকে জীবনসংগ্রামে অধিকতর বিপদের সম্মুখীন হইতে হইবে। তাহা জানিয়াও তিনি নেলীকে বিবাহ করিয়া কলিকাতায় ফিরিয়া আসিলেন।