বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত >金á তাহাকে “দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন” নামে অভিহিত করিলেন এবং সেই “দেশপ্ৰিয়” বিশেষণে আজও তিনি বিঘোষিত হইয়া থাকেন। ১৯২২-২৩ খ্রিস্টাব্দে তঁহাকে নিখিল ভারত কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির সদস্য করা হইয়াছিল। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের পক্ষ হইতে স্বরাজ্য ব্যবস্থাপক সভাসমূহে প্রবেশ করিলেন। যতীন্দ্রমোহন ব্যবস্থাপক সভায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের দক্ষিণ হস্তস্বরূপ হইলেন; তঁহাকে স্বরাজ্যদলের সম্পাদক করা হইল। সেই সময়ে চিত্তরঞ্জন অসুস্থ হইয়া পাটনা গমন করিলে বাংলার গভর্নর পরামর্শের জন্য যতীন্দ্রমোহনকেই লাটপ্ৰসাদে নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। পর বৎসর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মৃত্যু হইলে যতীন্দ্রমোহনই বাংলার রাজনীতিক নেতা বলিয়া ঘোষিত হইলেন। তাহাকে একসঙ্গে তিনটি প্রধান ও সম্মানজনক কার্যের ভার দেওয়া হইল-(১) তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হইলেন,৯ (২) তিঁহাকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি করা হইল, এবং (৩) বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় তিনি স্বরাজ্যদলের নেতা হইলেন। ১৯২৪ খ্রিস্টােব্দ হইতে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি তারিখে তিন নম্বর রেগুলেশন আইন অনুসারে ধূত হওয়া পর্যন্ত তিনি তাহার মত সরল, উদার, অমায়িক ও সর্বজনপ্রিয় ব্যক্তি অতি অল্পই দেখিতে পাওয়া যায়। রাজনীতিক কার্যের অবসরে নিজ গ্রাসাচ্ছাদন সংগ্রহের জন্য মধ্যে তঁহাকে ব্যারিস্টারি করিতে হইয়াছিল বটে, কিন্তু তিনি কখনও তাঁহাতে মন দিতে পারেন নাই। প্রথম জীবনেই তিনি পিতৃদত্ত অর্থ নানা সৎকার্যে ব্যয় করিয়া ফেলিয়াছিলেন। কাজেই জীবনের শেষ কয় বৎসর তাহাকে বিশেষভাবেই অর্থাভাব ভোগ করিতে হইয়াছিল। কিন্তু সে অর্থাভাবের মধ্যেও তিনি দেশের কাজে কোনোদিন পশ্চাৎপদ ছিলেন না। বোম্বাইয়ে বাওলা হত্যা মামলায় তিনি যেভাবে আইনজ্ঞানের পরিচয় দেন, তাহতে সমগ্র ভারত চমৎকৃত হইয়া যায়। তিনি ইচ্ছা করিলে তাহার পর ব্যারিস্টারি দ্বারা প্রভূত অর্থ উপাৰ্জন করিতে পারিতেন, কিন্তু দেশসেবা তাঁহাকে দারিদ্র্যের পথেই লইয়া গিয়াছিল। ঐ কয় বৎসর তিনি সর্বত্র সম্মান লাভ করিয়াছিলেন। তিনি কানপুর ও মাদ্রাজে কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগদান করিতে যাইলে তঁহকে অভিনন্দন প্ৰদান করা হইয়াছিল। বসিরহাটে প্ৰাদেশিক সম্মেলনের অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করিয়াছিলেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার কংগ্রেসের অধিবেশনে তঁহকে অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতি হইতে হইয়াছিল। দারিদ্র্যাভোগের জন্য র্তাহার শরীর ক্রমে অসুস্থ হইয়া পড়িল এবং চিকিৎসকগণের পরামর্শে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে নষ্টস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের আশায় তিনি বিলাত যাত্রা করিলেন। বিলাত হইতে ফিরিবার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি তিনি ধূত হইলেন। র্তাহার স্বাস্থ্য ক্রমেই নষ্ট হইতে লাগিল। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন গভর্নমেন্ট তাঁহাকে রাঁচিতে স্থানান্তরিত করিলেন।” সেইখানে রাজবন্দি অবস্থাতেই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুলাই**। দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন দেশবাসীকে শোকসাগরে ভাসাইয়া পরলোকগমন করেন।