পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরলা দেবী চৌধুরানি > 登ー উভয় শাখায় সমান পারদর্শিনী। তিনি বীণ, সেতার, এসরাজ প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে যেমন নিপুণা, পিয়ানো, বেহালা, অর্গান প্রভৃতি বৈদেশিক বাদ্যযন্ত্রেও তেমনিই পটিয়সী। দ্বাদশবর্ষীয়া বালিকা সরলা দেবীর সঙ্গীত-রচনা ও সুর-সংযোজনায় অদ্ভুত কৃতিত্ব দেখিয়া স্বয়ং রবীন্দ্ৰনাথ তাহাকে সর্বদা উৎসাহ দিতেন। শ্ৰীযুক্ত সরলা দেবীর মাতাপিত কনিষ্ঠা কন্যার বিবাহের জন্য তেমন উৎসুক ছিলেন না ; কারণ, তাহাদের ইচ্ছা ছিল তাঁহাকে তঁাহারা থিওসিফিকাল সোসাইটির অধীনে অধ্যাত্মা তত্ত্বানুসন্ধানে উৎসর্গ করিয়া দিবেন। এই সময় থিয়োজফিস্ট মাদাম ব্লাভাটীর তীহারা একান্ত অনুগত হইয়া পড়িয়াছিলেন। সরলা দেবীর শৈশব হইতেই জ্ঞানলিন্সা অত্যন্ত প্রবল ছিল। এজন্য তঁহার ভ্রাতা জ্যোৎস্না ঘোষাল যখন “সিভিল সার্ভিস” পরীক্ষা দিবার জন্য বিলাত যাত্ৰা করেন, তখন সরলা দেবীও বিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে ভ্রাতার সহযাত্রীরূপে বিলাত যাইতে উৎসুক হইয়াছিলেন। সেকালে কুমারী কন্যার বিলাত যাওয়া সম্বন্ধে মহর্ষি দেবেন্দ্ৰনাথ সম্মতি দিতে না পারায় সরলা দেবীর বিলাত যাওয়া সম্ভব হয় নাই। কিন্তু তাহার অভিজ্ঞতা অর্জনের ইচ্ছা বিশেষ তীব্র ছিল। তাই সুযোগ লাভ করিবামাত্ৰ মহীশূরে গিয়া সেখানকার ‘মহারাণী বালিকাবিদ্যালয়ে’ ।তিনি শিক্ষয়িত্রীরূপে প্ৰবেশ করেন। এবার আর কেহ তাহাকে বাধা দিলেন না। র্তাহার সেই সময়ের রচিত কতককগুলি প্ৰবন্ধ ও কবিতা অতি চিত্তাকর্ষক। এক বৎসর দক্ষতার সহিত মহীশূর বালিকা-বিদ্যালয়ের কার্য পরিচালনার পর সরলা দেবী তাহার জননীর অসুস্থতা নিবন্ধন “ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদন ভার গ্রহণ করিবার জন্য বাংলাদেশে ফিরিয়া আসেন। এই সময় তাহার জীবনের প্রধান ব্রত হইয়াছিল। দেশের ছেলেদের মনে বীরত্বের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করিয়া তাহদের সাহসী ও শক্তিশালী করিয়া তোলা। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রাচীন হিন্দু আদর্শে এক মল্লক্ষেত্ৰ স্থাপন করিয়া তরুণ বঙ্গযুবকদের মধ্যে ব্যায়াম, লাঠি-খেলা, অসি-ক্ৰীড়া, মুষ্টিযুদ্ধ প্রভৃতি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। ইহাই তাহার প্রবর্তিত “বীরাষ্টমী” উৎসবের মূল। ইহার ফলেই বাঙালি যুবকেরা দিন দিন শক্তিশালী হইয়া উঠিতেছে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গজনিত দেশব্যাপী স্বদেশী আন্দোলনের পূর্বে দেশীয় শিল্পসামগ্ৰী ব্যবহারের জন্য দেশবাসীকে উদ্ধৃদ্ধ করিয়া তুলিতে সরলা দেবী অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়াছিলেন। হিন্দু মুসলমানের ঐক্য, সাম্যতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, দেশীয় শিল্পের পুনরুদ্ধজীবন, এবং দেশবাসীর দৈহিক ও নৈতিক চরিত্রবল গঠন যে ভারতের উন্নতির এক একটি সুদৃঢ় সোপান, ত্রিশ বৎসর পূর্বে অ্যালবার্ট হলেই এক সভায় বাংলার এই মহিলাই প্ৰথম একথা উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করিয়াছিলেন। কিন্তু জাতীয় জীবনের কেবল এই একটা দিক মাত্ৰ লইয়াই তিনি ক্ষান্ত ছিলেন না। দেশের সাহিত্য ও সঙ্গীতের ভিতর দিয়াও দেশপ্রেমের একটা অনুপ্রেরণা জাগাঁইয়া তোলার দিকেও তঁহার লক্ষ্য অবহিত ছিল। তিনি ইংরেজি, বাংলা ছাড়া ফরাসি, উর্দু, হিন্দি ও