পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহর্ষি দেবেন্দ্ৰনাথ ঠাকুর কলিকাতা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির নাম আজ বাংলা দেশের প্রায় সকলের কাছেই সুপরিচিত। বহুকাল হইতেই এই ঠাকুরবাড়ি দেশ-দেশান্তরে খ্যাতি লাভ করিয়া আসিতেছে। বুদ্ধিতে, ধনে, সম্পদে, কুলে, শীলে, দানশীলতায় এবং অন্যান্য বিবিধ গুণে এই ঠাকুরবংশের অনুরূপ আর একটা বড় বংশ দেখা যায় না। এই ঠাকুর পরিবারে স্বগীয় দ্বারকানাথ ঠাকুর স্বনামধন্য পুরুষ ছিলেন। মহাসম্মানকর “প্রিন্স’ উপাধি তাহার নামকে ভূষিত করিয়াছিল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দ্বারকানাথেরই পুত্র। ইংরেজি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে দেবেন্দ্রনাথেরই জন্ম হয়। দেবেন্দ্রনাথের জন্মের দ্বারা কেবলমাত্র ঠাকুরবংশ নহে, বাংলাদেশও ধন্য হইয়াছে। অতি বাল্যকালেই দেবেন্দ্রনাথের ভিতর ধীর, স্থির, সদাপ্রসন্ন ভাব ও বুদ্ধির প্রখরতা সুপরিস্ফুট হইয়া উঠে। উপনয়নক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ব্রাহ্মণের নিত্যকর্মগুলি তিনি অনায়াসেই অধিগত করিয়া লইয়াছিলেন। তখন হইতেই তিনি অতি নিবিষ্ট চিত্তে পূজাআরাধনা করিতেন। শৈশব হইতেই দেবেন্দ্ৰনাথ পরম শুদ্ধাচারী, কর্তব্যনিষ্ঠ, ন্যায়পরায়ণ, পরিশ্রমী ও ধামিক ছিলেন। বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে যাহাতে ধর্মশিক্ষার অভাব না হয়, এবং ইংরেজি শিক্ষার প্রথম আমলে সেই ধর্মবিপ্লবের যুগে খ্রিস্টান মিশনারিদের স্থাপিত স্কুলসমূহে অধ্যয়ন করিয়া ছাত্রেরা যাহাতে বিপথে ধাবিত না হইতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে রামমোহন রায় নিজ বন্ধুদের সহায়তায় একটি পৃথক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। দ্বারকানাথের নিজ বাটীর বালকগণ এবং তঁহার আত্মীয়-বন্ধুদের অনেক ছেলে তখন এই স্কুলেই পাঠাভ্যাস করিত। দেবেন্দ্রনাথকে যথাসময়ে এই স্কুলেই ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। এই বিদ্যালয়ে কয়েক বৎসর অধ্যয়ন করিয়া বালক দেবেন্দ্ৰনাথ অতি আশ্চর্যােরাপ জ্ঞানলাভ করেন। তিনি যে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন, তাহাও বিস্ময়কর। ইহার পর উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য দ্বারকানাথ তঁহাকে চৌদ্দ বৎসর বয়সে হিন্দু কলেজে ভরতি করিয়া দিয়াছিলেন। রামমোহন দ্বারকানাথের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। রামমোহনের অভিলাষ অনুযায়ী দ্বারকানাথের সুবৃহৎ বাসভবনের এক অংশে ব্রাহ্মধর্মের প্রথম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মন্দিরটিই আদি ব্রাহ্মসমাজ” নামে সুপরিচিত। রামমোহনের গভীর বিশ্বাস জন্মিয়াছিল যে, তিনি যে ব্ৰাহ্মধর্মের প্রতিষ্ঠা করিয়া গেলেন, দেবেন্দ্রনাথ হইতেই তাহার প্রসার ও শ্ৰীবৃদ্ধি সাধিত হইবে। দেবেন্দ্রনাথও রামমোহনের একান্ত গুণমুগ্ধ ও পরম ভক্ত হইয়া পড়েন। রামমোহন যখন স্বদেশ ছাড়িয়া বিলাত গমন করেন, সেই সময়