পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরোজিনী নাইডু \ শ্ৰীযুক্তা সরোজিনী শুধু গৃহধর্মপালন ও কবিতা রচনা লইয়াই নিজেকে ব্যাপৃত রাখিতে পারেন নাই। তিনি যখন প্ৰাপ্তবয়স্ক তখন দেশে রাজনীতির প্রবল বন্যা উপস্থিত হইয়াছে; সরোজিনীও সেই বন্যার জলে নিজেকে ভাসাইয়া দিলেন। উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তিনি অনর্গল অতি মনোহর বক্তৃতা দিতে পারেন। তাহাঁই প্রথম র্তাহাকে রাজনীতিক্ষেত্রে টানিয়া আনে। সমাজনীতি, ধর্মনীতি ও রাজনীতি সম্বন্ধে তাহার গভীর জ্ঞান আছে। তিনি একাল পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়া আসিতেছেন। যৌবনকালে তিনি কয়েকবার ইউরোপে যাইয়া ভারতের ধর্ম ও সমাজ সম্বন্ধে বক্তৃতা করিয়া আসিয়াছিলেন। তাহার পর মধ্যে মধ্যে ভারতের রাজনীতিক্ষেত্রেও তঁহাকে বক্তৃতা করিতে হইতেছে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সমগ্ৰ দেশ যখন অসহযোগ আন্দোলন আরম্ভ করিল, তখন শ্ৰীযুক্তা নাইডুও আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। বাহ্যদৃষ্টিতে তাহাকে যতই বিলাসী বলিয়া মনে হউক না কেন, তাহার প্রাণ দেশের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করিতে সর্বদাই উৎসুক ছিল। শ্ৰীযুক্তা নাইডু গান্ধীজির প্রবর্তিত আন্দোলনে যোগদান করিয়া সমগ্ৰ ভারত পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন ও র্তাহার আবেগময়ী ভাষায় বক্তৃতা করিয়া দেশবাসী সকলকে স্বমতে আনয়ন করিতে লাগিলেন। তঁহার কর্মের জন্য দেশবাসীও তঁহাকে উপযুক্ত সম্মান প্ৰদৰ্শন করিতে কোন দিন কার্পণ্য করে নাই। সরোজিনী প্ৰায় সমগ্র জীবনই কংগ্রেসের প্রত্যেক অধিবেশনে যোগদান করিয়া আসিতেছেন এবং তঁহার বক্তৃতা শুনিবার জন্য কংগ্রেসে উপস্থিত সকলেই সাগ্রহে প্ৰতীক্ষা করে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে নিখিল ভারত কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয়, শ্ৰীযুক্তা সরোজিনী নাইডু তাহাতে সভানেত্রী নির্বাচিত হইয়াছিলেন এবং তঁহার কার্য সুসম্পন্ন করিয়া সকলকে চমৎকৃত করিয়াছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পঞ্চাশ বৎসরের ইতিহাসে স্বগীয়া অ্যানি বেসান্ত ও শ্ৰীযুক্ত নেলি সেনগুপ্ত' নামী দুইজন শ্বেতাঙ্গিনী মহিলা উহার সভানেত্রী হইয়াছেন বটে, কিন্তু শ্ৰীযুক্ত সরোজিনী নাইডু ভিন্ন অপর কোন ভারতীয় মহিলার ভাগ্যে এই সৌভাগ্য প্ৰাপ্তি হয় নাই। al শুধু রাজনীতিক আন্দোলন নহে, মহিলাপ্ৰগতি আন্দােলন পরিচালনেও শ্ৰীযুক্ত সরোজিনীকে সর্বদা অগ্রণী হইয়া কাৰ্য করিতে দেখা গিয়াছে। সরোজিনী হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করিয়া মাদ্রাজে পালিত হইয়াছেন বটে, কিন্তু বোম্বাই শহরেই চিরদিন তাহার কর্মক্ষেত্র। বোম্বাইয়ের মহিলাগণের মধ্যে আজ যে জাগরণের সাড়া পাওয়া যায়, গত অসহযোগ আন্দোলনের সময় বোম্বাইয়ের মহিলাবৃন্দ যে সাড়া দিয়াছিলেন, তাহার মূলে শ্ৰীযুক্তা নাইডুর প্রচারকার্য ছিল। তিনি বোম্বাইয়ে বহু মহিলাসমিতি প্রতিষ্ঠা করিয়া মহিলাগণের সর্ববিধ শিক্ষার ও উন্নতির ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন। তাহার অসামান্য বাগ্নিতা দ্বারা তিনি সকল কার্যেই সাফল্য লাভ করিতে পারেন। সমাজনীতি ও ধর্মনীতির আন্দোলনেও তাহার দান অল্প নহে। সকল বিষয়ে তিনি উদারপন্থী বলিয়া তাহার মত সর্বত্ৰ সাগ্রহে অনুবর্তিত হইয়া থাকে।