পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর SG ইহা অপেক্ষাও শোচনীয়। দুইবেলা নুন ভাত, বৈকালে একমুঠো ছোলা-ভিজা ইহাই ছিল নিত্যকার আহার। দৈবাৎ যদি কোনো দিন মাছ জুটিত, মাছ ও তরকারির ঝোল রাধিয়া একবেলা শুধু ঝোল, পরের বেলায় শুকনো তরকারি, তার পরদিনে সেই মাছ অম্বলে দিয়া তাহার খানিকটা, এমনি করিয়া চারি পাঁচদিন তাহার জের চালাইয়া। তবে মাছটুকু খাইতে পাইতেন। কিন্তু ইহাই বিদ্যাসাগরের সম্পূর্ণ পরিচয় নহে। বিদ্যাসাগরের বিদ্যাসাগরত্ব ছিল তঁহার দয়ার ভাণ্ডারে। তিনি সকল বিদ্যার সার শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন ; তাহা সর্বজীবে সমভাবে দয়া বিতরণ। দয়ায় তাহার পাত্ৰাপাত্র ভেদ ছিল না। তিনি মাইকেল মধুসূদনের মত লোককে টাকা দিয়া কতবার সাহায্য করিয়াছেন। বিসূচিকা-রোগাক্রান্ত, সর্বাঙ্গবিষ্ঠালিপ্ত, পথে পতিত ভিখারিনিকেও তুলিয়া সাহায্যদানে তিনি কোনোরূপ কুষ্ঠিত হইতেন না। এই দয়াই তাঁহাকে বিধবা-বিবাহ আন্দোলনে প্রবর্তিত করিয়াছিল। বাল্যবিধবাদের দুঃখে৷ র্তাহার প্রাণ গালিয়াছিল, তাই তিনি তঁহাদের পুনরায় বিবাহ দিতে বদ্ধ পরিকর হইয়াছিলেন। বিধবাবিবাহ বৈধ কি অবৈধ, সে বিষয়ে মতভেদ থাকিতে পারে, কিন্তু বিদ্যাসাগরের সহস্ৰদয়তা সম্বন্ধে কাহারও মতদ্বৈধা নাই। এ জন্য তিনি যে পরিশ্রম, যত্ন ও অর্থব্যয় করিয়াছিলেন, সে শুধু তঁহাতেই সম্ভব। শুনিয়াছি। এইরূপ একটা বিবাহেই তাহার দশ হাজার টাকা খরচ হইয়াছিল। দেশের দুর্দশায় সত্যই তাহার প্রাণ কঁদিত, দেশের জন্য তিনি অনেক করিয়া গিয়াছেন। শিক্ষাই সকল উন্নতির মূল, তাই শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং বালক বালিকা সকলেরই শিক্ষার সুব্যবস্থায় উদ্যোগী হইয়াছিলেন। আবার মাতৃভাষার সাহায্য ব্যতীত কোন শিক্ষাই সম্পূর্ণ হইতে পারে না; সেজন্য বাংলা ভাষাকে তিনি নূতন রূপে গড়িয়া তুলিয়াছিলেন ; নানা বিষয়ের বই লিখিয়া ভাষা-শিক্ষার পথ সুগম করিয়া দিয়াছিলেন। শিক্ষার প্রাথমিক পদ্ধতির জন্য বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি এই তিনটি ভাষার এ-দেশীয় শিক্ষাথীমাত্রেই তাহার নিকট ঋণী। কলিকাতার মেট্রোপলিটান (বর্তমান বিদ্যাসাগর) কলেজ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের अटूलनेौम कठि Ah ১২৪৮ সালে তিনি ৫০ টাকা মাহিনায় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের হেড পণ্ডিত নিযুক্ত হন; ইহাই তাঁহার প্রথম চাকুরি। তারপর তিনি সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্টান্টসেক্রেটারির পদ হন, কিন্তু সেক্রেটারির সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় তিনি সে চাকুরি পরিত্যাগ করেন। পুনরায় তিনি ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে কিছুদিন কার্য করিয়ছিলেন, বেতন হইয়াছিল ৮০ টাকা। পরে ৫০০ টাকা বেতনে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হইয়া আসেন। কয়েক বৎসর এক সঙ্গে ইনস্পেক্টরের কার্য করার জন্য তিনি আরও পাঁচশত টাকা পাইতেন। কিন্তু এত টাকার প্রলোভনও তেঁহকে বধিয়া রাখিতে পারে নাই। এই চির-স্বাধীন, তেজস্বী, পুরুষ-সিংহ কিছুকাল পরে চিরদিনের মত চাকুরি ত্যাগ করেন। তাহার পোশাক ছিল পরনে মোটা থান ধুতি, গায়ে একখানা মোটা সাদা উডানি,