পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বঙ্গ-গৌরব ছিল জুনিয়ার ও সিনিয়ার স্কলারশিপ। বঙ্কিম অতি অল্প বয়সেই বেশ কৃতিত্বের সহিত সেই পরীক্ষায় উত্তীৰ্ণ হইয়াছিলেন। কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের** তখন খুব নাম। র্তাহার সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকরা”১১ ও ‘সাধুরঞ্জনের ১২ তখন প্রতিপত্তি কত। কাগজ বাহির হইলে কে আগে লইবে তাহার জন্য কলিকাতার বড়লোকদের ভিতর একটা কড়াকড়ি পড়িয়া যাইত। কত রাজামহারাজার জুড়ি তাহার ছাপাখানার দরজায় আসিয়া দাঁড়াইয়া থাকিত। হিন্দু কলেজের ছাত্র দীনবন্ধু মিত্র,১৩। কৃষ্ণনগর কলেজেব ছাত্র দ্বারকনাথ অধিকারী,১৪ সে কাগজের লেখক ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্ৰ গুপ্তকবির কাগজে কবিতা** লিখিতে আরম্ভ করেন। হুগলি কলেজ হইতে বাহির হইয়া বঙ্কিমচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজে আইন পড়িতে আরম্ভ করেন। সে বাংলা ১২৬২ সালের কথা। সেই বৎসরই বাংলা দেশে বি.এ. পরীক্ষার প্ৰথা প্রবর্তিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্ৰ আইন পড়া ছাড়িয়া বি.এ. পড়িতে লাগিলেন এবং মাত্র দুই মাসের মধ্যেই উচ্চ প্রশংসার সহিত বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলেন এই পরীক্ষায় র্তাহার সতীর্থ ছিলেন যদুনাথ বসু।** বাংলার লাট হ্যালিডে সাহেব বঙ্কিমের কৃতিত্বে মুগ্ধ হইয়া তীহাকে ডাকিয়া ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ প্ৰদান করেন। ডেপুটিগিরি চাকুরি সেকালে একটি পরম গৌরবের বিষয় ছিল। বঙ্কিমচন্দ্ৰ প্ৰথমে যশোহরের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হন। এইখানেই স্বগীয় নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের সঙ্গে তাহার বন্ধুত্ব হয়। বঙ্কিমের বয়স তখন কুড়ি বৎসর। যশোহরে তঁহার প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যু হইলে তিনি বদলির জন্য চেষ্টা করিলেন ; সরকার তাহাকে কঁথিতে স্থানান্তরিত করেন। বঙ্কিমচন্দ্ৰ কঁথিতে অবস্থান কলে** দ্বিতীয়বার বিবাহ করিয়াছিলেন। পরে তিনি খুলনায় এবং খুলনা হইতে ২৪ পরগনার বারুইপুরে বদলি হন। এইখানে অবস্থান সময়ে তাহার সর্বপ্রথম উপন্যাস দুৰ্গেশনন্দিনী প্রকাশিত হয়। ইহার পর তিনি কপালকুণ্ডলা ও মৃণালিনী লেখেন। এই সময় তিনি বাংলা গভর্নমেন্টের সেক্রেটেরিয়েটে অ্যাসিস্ট্যান্টসেক্রেটারির** পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু এ চাকুরি বেশি দিন স্থায়ী হয় নাই, মেকলে সাহেবের সঙ্গে বিবাদ করিয়া তিনি ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের পদেই ফিরিয়া যান এবং কয়েক স্থানে কার্য করার পর ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন । বঙ্কিমচন্দ্ৰ প্ৰতিভাশালী ছাত্র ছিলেন, সুবিচারক ছিলেন, তিনি রায়বাহাদুর** হইয়াছিলেন, সি. আই. ই.২° হইয়াছিলেন। কিন্তু এ সমস্ত তেমন বেশি কথা নহে। সর্বাপেক্ষা বড় কথা তাহার মনীষা, সাহিত্যে র্তাহার অপূর্ব দান। তাহার উপন্যাসসমূহ,২১ র্তাহার ধর্মতত্ত্ব, ২২ তাহার গীতা ব্যাখ্যা, তাহার বিবিধ প্ৰবন্ধ,২৩ তাহার কমলাকাস্তের দপ্তর ২৪ বাংলার বহুমূল্য সম্পদ। তিনি শুধু নিজে লিখিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, তাহার সম্পাদিত বঙ্গদর্শনের ২৫ মধ্যস্থতায় তিনি অনেক লেখক প্রস্তুত করিয়াছিলেন। বাংলার সাহিতাক্ষেত্রে সত্যই তিনি সম্রাটের আসনে সমাসীন ছিলেন। সর্বাপেক্ষা প্রধান কথা তিনি ‘বন্দেমাতরমের স্রষ্টা ছিলেন, ঋষি ছিলেন, মন্ত্রদাতা ছিলেন। আর কিছু না লিখিয়া