পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাজি মহম্মদ মহসীন VSS হাজি ফয়জুল্লাকে পতিত্বে বরণ করিয়া তিনি ভিন্ন সংসার পাতিয়া বসিলেন। ১৭৩২ খ্রিস্টাব্দে ইহাদের এক পুত্র সস্তান জন্মগ্রহণ করে। এই পুত্ৰই কালে হাজি মহম্মদ মহম্মদ মহসীন নামে বিখ্যাত হইয়াছিলেন। ঐশ্বৰ্যশালী জনক জননীর গৃহে জন্মগ্রহণ করিয়া মহসীন শৈশব হইতেই সুখ-বিলাসের মধ্যে বর্ধিত হইয়া উঠিতে লাগিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই, সুখ-বিলাসের দিকে র্তাহার বিন্দুমাত্রও আকর্ষণ ছিল না। পরবর্তীকালে মহসীনের জীবনে যে ভোগের প্রতি অনাসক্তি, পরোপকারস্পপৃহা, দয়া, ধর্মভাব, জ্ঞান-পিপাসা প্রভৃতি সদগুণরাশি বিকশিত হইয়া উঠিয়াছিল, অতি শৈশবেই তাহার অন্ধুর তঁহার জীবনে এবং প্রতি কার্যে দেখা ििष्ट्रेन्न । বিদ্যাশিক্ষার উপযুক্ত বয়স সমাগত হইলে মহসীনের শিক্ষার ভার সিরাজী নামে জনৈক শিক্ষকের উপর অৰ্পিত হয়। সিরাজী যেমন অসামান্য পণ্ডিত, তেমনি চরিত্রবান এবং সাংসারিক সর্ববিষয়ে বহুদশী ছিলেন। নানা দেশ ভ্ৰমণ করিয়া তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছিলেন। মহসীনের কাছে সর্বদাই তিন তঁহার এই সকল ভ্রমণকাহিনির কথা বলিতেন। দেশ বিদেশের সেই সকল গল্প শুনিয়া মহসীনের মনেও বাল্যকাল হইতেই দেশভ্রমণের ইচ্ছা প্রবল হইয়া উঠে। সিরাজীর নিকট শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া মহসীন মুর্শিদাবাদ গমন করেন এবং তথাকার মক্তবে অধ্যয়ন করিতে থাকেন। তৎকালে মুর্শিদাবাদের এই মক্তবই মুসলমান বিদ্যার্থীদের উচ্চতম শিক্ষার কেন্দ্ৰস্থল ছিল। যথাসময়ে এখানকার পাঠও তিনি শেষ করিলেন। কিন্তু তথাপি তাহার জ্ঞানপিপাসার পরিতৃপ্তি হইল না। আরও অধিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার আকাঙক্ষণ তঁহার বলবতী হইয়া উঠিল। অনতিকাল পরেই মহসীন বঙ্গদেশ পরিত্যাগ করিয়া দেশভ্রমণে বহির্গত হইলেন। তিনি ভারতবর্ষের নানা স্থান ও আরব, পারস্য, তুরস্ক, মিশর প্রভৃতি বহুদেশে ভ্ৰমণ করেন। আরবি এবং পারসি ভাষায় তাহার অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল। সর্বস্থানের লোকের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, শিক্ষাদীক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি বহু জ্ঞানলাভ করিয়াছিলেন। জ্ঞানচর্চার সঙ্গেসঙ্গে নানাবিধ ব্যায়াম করিয়া মহসীন শরীরকেও অত্যন্ত সুস্থ এবং সবল করিয়া তুলিয়ছিলেন। দেশদেশাস্তরে ঘুরিয়া পণ্ডিত্য ও জ্ঞানলাভ করাই তঁহার জীবনের একমাত্ৰ উদ্দেশ্য ছিল ; সংসারধর্ম পালন বা ভোগবিলাসের কামনা তাহার অস্তরে বিন্দুমাত্রও ছিল না। আগা মতাহরের কন্যা মানুজান এবং হাজি ফয়জুল্লার পুত্ৰ মহম্মদ মহসীন বিভিন্ন পিতার সন্তান হইলেও একই মাতৃগর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া ভ্রাতা ভগিনীর মধ্যে একটি আন্তরিক প্রীতির বন্ধন ছিল। মনুজন মহসীন অপেক্ষা আট বৎসরের বড় ছিলেন এবং তিনিও শৈশবে মহসীনের শিক্ষাগুরু। সিরাজীর নিকট শিক্ষালাভ করিয়া অতিশয় বিদূষী ও তীক্ষ্ণবুদ্ধিশালিনী রমণীরূপে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। মনুজন পিতার অমিত ঐশ্বর্যের একমাত্র উত্তরাধিকারিণী হইয়াছিলেন, সে কথা পূর্বেই বলা হইয়াছে।