পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাজি মহম্মদ মহসীন VVð রাত্রে নিয়মিত ভাবে নগরীর পথে পথে ভ্ৰমণ করা তাহার। আর একটি অভ্যাস ছিল। এইরূপ ভ্ৰমণে বহির্গত হইয়া তিনি গোপনে লোকের সুখ-দুঃখের সংবাদ লইতেন এবং তৎক্ষণাৎ তাহার প্রতিকার করিতেন। রোগী, দুঃখী যখন যেখানে দেখিয়াছেন, তখনই তাহাদের কাছে যাইয়া, তিনি মধুর বচনে এবং সাহায্য দ্বারা তাহদের অভাব-অভিযোগ দূর করিয়াছেন। এইরূপে কত লোকের যে কত উপকার তিনি করিয়া গিয়াছেন, তাহার নাই। তঁহার এই দান সেবার ব্যাপারে তিনি হিন্দু, মুসলমান, ইতর, ভদ্র ভেদ করেন নাই। যেখানেই দান এবং সেবালাভের যোগ্য পাত্ৰ দেখিতে পাইয়াছেন, সেইখানেই তাহার অকৃপণ হস্ত অকুষ্ঠিত ভাবে দান করিয়াছে। কিন্তু তাহার এই দানের সংবাদ তিনি ঘুণাক্ষরেও কাহাকে জানিতে দিতেন না ; কারণ দুঃখীর দুঃখ-মোচনই তাহার উদ্দেশ্য ছিল-পৃথিবীতে যশঃ বা নাম ক্রয় করার অভিলাষ তাহার ছিল না। ধর্মের ঢাক আপনি বাজিয়া উঠে। তাই মহসীনের এই মহৎ কার্যের কথাও গোপন রহিল না। তঁহার এই উদারতা গুণে মুগ্ধ হইয়া সকলেই তঁহার প্রশংসা করিতে লাগিল এবং তঁহার বিশেষ অনুগত হইয়া উঠিল। দয়া, পরোপকার ভিন্ন আরও নানা গুণে মহসীনের হৃদয় বিকশিত হইয়া উঠিয়ছিল। দাসদাসী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব প্রভৃতি সকলের সঙ্গেই তিনি অতিশয় মধুর ও সদয় ব্যবহার করিতেন। কোনো কারণেই কখন কাহার উপরে বিরক্ত বা ক্রুদ্ধ হইতেন না। বা কৰ্কশ ব্যবহার করিতেন না। মুসলমান হইলেও মহসীন হিন্দুদের শাস্ত্রের প্রতি কখনও অশ্রদ্ধা প্ৰকাশ করেন নাই ; সকল শাস্ত্রের বাণীই তিনি অমূল্য বলিয়া মনে করিতেন। নিজে পরম পণ্ডিত ছিলেন বলিয়া মহসীন শিক্ষার মূল্য বুঝিতেন। দেশের লোক যাহাতে শিক্ষিত হইয়া দেশের উন্নতি সাধন করিতে পারে, এজন্য তিনি হুগলিতে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। জাতিধর্মনির্বিশেষে সকলকেই সেই বিদ্যালয়ে বিদ্যালাভের জন্য পথ উন্মুক্ত করিয়া দেন। এতদভিন্ন ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোহর প্রভৃতি স্থানের মাদ্রাসার উন্নতির জন্যও তিনি মুক্তহস্তে দান করিয়া মুসলমান ছাত্ৰগণের শিক্ষালাভের পথ প্রশস্ত করিয়া গিয়াছেন। অবশেষে ইংরেজি ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে এক উইল করিয়া তিনি তঁাহার বিপুল সম্পত্তি সমস্তই ধৰ্মকার্যের জন্য উৎসর্গ করিয়া দেন। উইলের পর মহসীন মাত্র ছয় বৎসর জীবিত ছিলেন। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে এই পরোপকারী, দাতা এবং দয়ার অবতার মহসীন সংসারের সকলকে কাদাইয়া পরলোকগমন করেন । বন্দােবস্ত প্রভৃতি সকল ভার গভর্নমেন্টের হাতে গিয়া পড়িল। এই অর্থের যাহাতে সদব্যবহার হয়, গভর্নমেন্ট তাহা করিতে ত্রুটি করেন নাই। এই অর্থেই হুগলিতে প্ৰকাণ্ড বাটী ক্রয় করিয়া ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজেই অধুনা হুগলি কলেজ নামে প্ৰসিদ্ধ। মানুজনের পিতা আগা মতােহর হুগলিতে একটি ইমামবাড়ি প্রতিষ্ঠা করিয়া «یسسپه:if#}