বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8O বঙ্গ-গৌরব বক্তৃতাগুলিই রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ প্রভৃতি নামে প্রকাশিত হইয়াছে। যে কোনো জাতির পক্ষে এগুলি দুর্লভ সম্পত্তি। প্ৰায় সাড়ে তিন বৎসর আমেরিকা ও ইউরোপে বেদাস্তধর্মের মত প্রচার করিয়া ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্বামীজি ভারতবর্ষে ফিরিয়া আসেন। তঁহার সঙ্গে কপ্তেন সেভিয়ার* এবং তাহার পত্নী ও মিঃ গুডউইনও** আগমন করেন। ইহারা স্বামীজির শিষ্যত্ব গ্ৰহণ “অদ্বৈত আশ্রম”। ১১ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। হিতকর কাজেরও সাড়া পড়িয়া গেল। এই সকল কাজের লোক গড়িয়া তুলিবার জন্য বেলুড় ও হিমালয়ে দুইটি মঠ স্থাপিত হইল। বর্তমানের রামকৃষ্ণ মিশন সেই সময়েরই সৃষ্টি। স্বামীজির তখনকার কর্মশক্তি অদ্ভুত ছিল। দেশের দুর্ভিক্ষ প্রশমনের জন্য তিনি সাহায্যসমিতি স্থাপন করিলেন; প্লেগরোগাক্রান্তদের জন্য সেবাসমিতি স্থাপিত হইল; মাদ্রাজে মঠ গড়িয়া উঠিল; ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রচারক প্রেরিত হইল; অস্ট্রেলিয়ায়, নিউজিল্যান্ডে, ও লঙ্কায় প্রচার-কাৰ্য আরম্ভ হইয়া গেল। লোকশিক্ষার জন্য ‘ব্রহ্মবাদিন, ‘প্রবুদ্ধ ভারত’, ১৩ ‘উদ্বোধন”১৪ নামক তিনখানা পত্রিকা প্ৰকাশিত হইল। বিবেকানন্দ কর্মস্রোতে ভাসিতে লাগিলেন। কিন্তু দেহেরও সহ্য করিবার একটা সীমা আছে। এই সীমার দিকে স্বামীজির লক্ষ্য ছিল না; তাই অতিরিক্ত পরিশ্রমে তাহার শরীর ভাঙিয়া পড়িল। ডাক্তারেরা অবশেষে এখানে শরীর সুস্থ হওয়া অসম্ভব দেখিয়া তীহাকে আবার ইউরোপ আমেরিকা ঘুরিয়া আসিতে উপদেশ দিলেন। বিবেকানন্দকে লইয়া জাহাজ আবার সমুদ্রে ভাসিল। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে একটি ধর্ম-মহাসভার অধিবেশন হয়। এবার সেই মহাসভায় তিনি ফরাসি ভাষায় হিন্দু দর্শন সম্বন্ধে বক্তৃতা প্ৰদান করিলেন। তিনি স্বাস্থ্যলাভের জন্য গিয়াছিলেন। কিন্তু কাজ সমানভাবে চলিতে থাকে, তবে স্বাস্থ্য ভাল হইবে কি প্রকারে ? বিবেকানন্দের শরীর সারিল না। অবশেষে ভগ্নস্বাস্থ্য লইয়াই তিনি দেশে ফিরিয়া আসিলেন। দেশে কার্যের চাপে তাহার ভগ্নস্বাস্থ্য আরও ভাঙিয়া পড়িল—তথাপি তাহার কার্যের বিরাম छिेन ना । ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই বিবেকানন্দের আত্মা দেহমুক্ত হয়। সেদিনও তিনি ছাত্রদিগকে পাণিনি ব্যাকরণ** ও বেদ সম্বন্ধে উপদেশ দিয়াছিলেন। তাহার পর সন্ধ্যার সময় ধ্যানস্থ হন। তঁহার সে ধ্যান আর ভাঙে নাই। সেই ধ্যানস্থ অবস্থাতেই রাত্রি ৯টার সময় তাহার অমর আত্মা দেহত্যাগ করিয়া অনন্তে মিলাইয়া গেল। বিবেকানন্দ ৩৯ বৎসর বয়সে দেহত্যাগ করেন; কিন্তু তিনি অদ্ভুত মনীষা, অবিচলিত কর্ম ও একাগ্ৰ সাধনার দ্বারা নব্যভারতের সূচনা করিয়া গিয়াছেন। তঁহার অলোকসামান্য প্রতিভা, অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও অদম্য কর্মশক্তিই তঁহাকে ভারতবাসী, শুধু ভার ৩বাসী কেন, বিশ্ববাসীর নিকট বরণীয় করিয়া রাখিয়াছে।