পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 S, -6 কয়েক জন সঙ্গীর সাহায্যে হাতে-লেখা একখানি কাগজ বাহির করিলেন। সে সময় হিন্দু কলেজের অধ্যাপক রামচন্দ্র মিত্রের একখানি কাগজ ছিল—“জ্ঞানান্বেষণ”।* মিত্র মহাশয় এই হাতেলেখা পত্রিকায় মধুসূদনের রচনা পাঠে প্রীত হইয়া বাছা বাছা কতকগুলি কবিতা লইয়া জ্ঞানান্বেষণে” ছাপিতে আরম্ভ করিলেন। মধুসূদন এইরূপে লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যসাধনা আরম্ভ করিয়া দিলেন। তখন কলিকাতায় সাহেবদের বিশেষ প্রতিপত্তি। তঁহাদের আদর্শে অনুপ্ৰাণিত হইয়া শৌখিন মধুসূদন সাহেব হইবার ঝোঁকে মাতিয়া উঠিলেন। বিলাত যাইব, ইংরেজিতে কবিতা লিখিয়া বড় কবি বলিয়া নাম কিনিব, মেম বিবাহ করিব, ইহাই তখন তাহার জীবনের চরম কাম্য হইয়া উঠিল। তাহার ফলে তিনি একদিন পাদরিদের শরণাপন্ন হইয়া খ্রিস্টধর্ম অবলম্বন করিলেন। র্তাহার সাহেব সাজিবার ইচ্ছা খুব প্রবল ছিল, সুতরাং তিনি হিন্দু কলেজ ৭ ছাড়িয়া বিশপ কলেজেন্ট গেলেন এবং সাহেবদের ছাত্রাবাসে থাকিয়া লেখাপড়া ও সাহেবিয়ানা দুই-ই শিক্ষা করিতে লাগিলেন। এ সময় তাহার পিতা তাহার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করিতেন। লেখাপড়া শেষ হইল। তঁহার পিতা তাঁহাকে খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করিতে বলায় মধুসূদন সম্মত হইলেন না, কাজেই পিতা খরচপত্র বন্ধ করিয়া দিলেন। এদিকে আত্মীয়স্বজনগণ বিমুখ হইলেন। খ্রিস্টান করিবার সময় যাহারা নানারূপ প্রলোভন দেখাইয়াছিলেন, সেই পাদরির দলও সরিয়া পড়িলেন। মধুসূদনের তখন উভয় সঙ্কট! শেষে নিজের পুস্তকাদি বিক্রয় করিয়া এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি মাদ্রাজে যান। সেখানে সাহেবের অরফ্যান স্কুলের মাস্টারি ও একখানি পত্রিকার সহকারি সম্পাদকের কাজ লইয়া তিনি জীবিকানির্বাহ করিতে লাগিলেন। মাদ্রাজে রেবেকা ম্যাকটাভিস নামী এক মহিলার সহিত র্তাহার বিবাহ হয়। মাদ্রাজে যাওয়ার এক বৎসর পরে তিনি ‘ক্যাপটিভ লেডি’*’ নামে একখানি ইংরেজি কাব্য লিখিয়া প্ৰকাশ করেন। বই লিখিয়া সুখ্যাতি মিলিল, কিন্তু অর্থাগম হইল না। একে ত ইংরেজ পত্নীকে লইয়া সংসার খরচই চলে না, তাহার উপর ছাপাখানার দেনা; নানা কারণে বিরক্ত হইয়া তিনি পত্নীকে পরিত্যাগ করিলেন। কিছুদিন পরে মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁহার একটি চাকুরি হয়। সেখানে মাহিনী কিছু বেশি ছিল, এতদভিন্ন তিনি ‘স্পেকটেটর’ ** পত্রের বেতনভোগী সহকারী নিযুক্ত হইয়াছিলেন। এই সময় মধুসূদন হেনরিয়েটা ১২ নামী আর একটি মহিলাকে বিবাহ করেন। তঁহার ইংরেজি কাব্যের বিলাতে খুব নাম হইয়াছিল; কাব্যখনি তিনি আরও অনেকের নিকট সমালোচনার জন্য পাঠাইয়া দেন। বিখ্যাত বেথুন সাহেব তঁহাকে লেখেন, ‘মাতৃভাষায় না লিখিলে কোন লেখক প্রতিষ্ঠাভাজন হইতে পারেন না”। বেথুনের এই অভিমতে তঁহার চৈতন্যোদয় হয়। তিনি মাতৃভাষায় লিখিবার জন্য গ্রিক, লাতিন, তেলুগু ও সংস্কৃত ভাষা শিখিতে এবং ঐ সমস্ত ভাষা হইতে উপকরণ সংগ্ৰহ করিতে আরম্ভ করেন ।