পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন কলিকাতার মলঙ্গা লেনের একটি বাড়িতে বাংলার গর্ব। ও গৌরব আশুতোষ মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তঁহার পিতা গঙ্গাপ্ৰসাদ মুখোপাধ্যায় ডাক্তার ছিলেন। বি. এ পাশ করিয়া তিনি ডাক্তারি পড়িতে যান। তখনকার দিনে বিএ পাশের পক্ষে ভাল চাকুরি মেলা কঠিন ছিল না। কিন্তু চাকুরির পরাধীনতা তাহার ধাতে সহিবে না বলিয়াই তিনি চাকুরির চেষ্টা না করিয় ডাক্তারি পড়তে প্ৰবৃত্ত হইয়াছিলেন। পিতার এই স্বাধীনতার স্পাহা আশুতোষেও বিদ্যমান ছিল। আশুতোষ জীবনে কখন কাহারও কাছে মস্তক অবনত করেন নাই। মাতা জগত্তারিণী দেবীর* প্রভাবও পুত্রের উপর কম ছিল না। র্তাহার আদর্শও পুত্রকে বহুগুণে গুণান্বিত করিয়া তুলিয়ছিল। তিনি বাজে কথা বলিয়া ছেলের সময় নষ্ট না করিয়া চোখের সম্মুখে ভাল ভাল আদর্শ স্থাপিত করিতেন। তঁহাকে যে বড় হইতে হইবে, মহৎ হইতে হইবে, জননীর একাগ্ৰতার ভিতর দিয়াই তাহার ছাপ র্তাহার মনে মধ্যে মুদ্রিত হইয়া গিয়াছিল। আশুতোষকে সর্বপ্রথমে চক্রবেড়িয়া শিশু-বিদ্যালয়ে ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। দুই বৎসরের ভিতরেই তাহার এখানকার শিক্ষা হইয়া গেল, সাধারণ ছাত্রের পক্ষে এ শিক্ষা শেষ করিতে অনুন পাঁচ বৎসরের প্রয়োজন হইত। আশুতোষের অসাধারণ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি শিক্ষা-ক্ষেত্রে সর্বত্র এইরূপ অনন্য-সাধারণ প্রতিভার পরিচয় প্রদান করিয়াছে। চক্রবেড়িয়ার শিশু-বিদ্যালয় ত্যাগের পর আশুতোষ কিছুদিন অন্য কোন বিদ্যালয়ে ভরতি না হইয়া গৃহেই লেখাপড়া শিখিতে থাকেন। গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হইল। পিতাও পুত্রকে অবসর সময়ে নানা বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। তাড়না না করিয়া লেখাপড়ার প্রতি অনুরাগ বৃদ্ধি করা এবং শিশুদের স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসাকে জাগ্ৰত করিয়া তোলাই ছিল এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য। বলা বাহুল্য, গঙ্গাপ্রসাদের এ উদ্দেশ্য পূর্ণ মাত্রায় সফল হইয়াছিল। বালকের পাঠের অনুরাগ এতই বাড়িয়া উঠিয়ছিল যে, দিবারাত্রি সে পুস্তককে কাছছাড়া করিত না। ইহার ফল আশুতোষের মনের পক্ষে যতই শুভ হউক কেন, তাহার দেহের পক্ষে শুভ হইল না। অতিরিক্ত পরিশ্রমে ১২৮১ সালে তঁহার হৃদস্পন্দন রোগের সৃষ্টি হইল। শঙ্কিত পিতা পুত্রের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তঁহাকে বায়ু পরিবর্তনের জন্য মথুরায় পঠাইয়া দিলেন। মথুরার বাতাসে আশুতোষ অতি অল্পকালের মধ্যে রোগমুক্ত হইলেন।

  • y Says