পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ &ኃ বঙ্গ-গৌরব মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন অর্থাৎ বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপকের* পদ গ্রহণ করিয়াছিলেন। তৎপরে আরও কয়েকটি কলেজে অধ্যাপকতা করিয়া অবশেষে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বহুবাজারে একটি ক্ষুদ্র বিদ্যালয়ের কর্মভার গ্রহণ করেন। এই বিদ্যালয়টিই সুরেন্দ্রনাথের চেষ্টা, অধ্যবসায় এবং যত্নে পরে রিপন কলেজে পরিণত হইয়াছিল। সুরেন্দ্রনাথের এই রিপন কলেজ এখনও বিদ্যমান আছে। অধ্যাপক হিসাবে সুরেন্দ্রনাথের খ্যাতি অসাধারণ ছিল। তিনি যখনই যে কলেজে গমন করিয়াছেন, শত শত ছাত্র তাহার অনুসরণ করিয়া সেই কলেজে যোগদান করিয়াছে। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই কলিকাতায় ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনেরই প্রতিষ্ঠা হয়। ইহার প্রতিষ্ঠার সহিত সুরেন্দ্রনাথের জীবনের একটি গভীর দুঃখ ও শোকের কাহিনি জড়িত। অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোক্তাদের ভিতর সুরেন্দ্ৰনাথ একজন প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। সমিতির প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে আলোচনার দিন সুরেন্দ্রনাথের একমাত্র পুত্রের মৃত্যু হয়।” কিন্তু এত বড় একটা শোেকও তীহাকে কৰ্তব্যপথ হইতে বিচ্যুত করিতে পারে নাই। অপরান্ত্রে যথাসময়ে তিনি সভায় উপস্থিত হইয়া বক্তৃতা করিয়াছিলেন এবং সমিতি-সম্পৰ্কীয় অন্যান্য ব্যাপার নির্বাহ করিয়াছিলেন। এই ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার দ্বারা সুরেন্দ্রনাথ দেশের যে অপরিসীম উপকার সাধন করিয়াছেন, তাহার জন্য ভারতবাসী চিরকাল তাঁহার কাছে কৃতজ্ঞ থাকিবে। সমগ্ৰ ভারতকে মিলনের সূত্রে আবদ্ধ করিয়া তাহার কর্মধারাকে একই লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করিবার জন্য এই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। ইহার দ্বারা ভারতের বহু কল্যাণ সাধিত হইয়াছে। ইহার প্রতিষ্ঠার ফলেই জাতীয় মহাসভার (Indian National Congress) (33 23 ভারতবর্ষের সর্ববিষয়ে উন্নতিসাধন করাই ছিল সুরেন্দ্রনাথের জীবনের সাধনা। ভারতের বড়লাট লর্ড লিটন যখন মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা হরণ, বিদেশি বস্ত্রের উপর আমদানি শুষ্ক তুলিয়া দেওয়া প্রভৃতি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন, সুরেন্দ্রনাথ নিভীকভাবে তাঁহাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করিয়াছিলেন। ফলে লর্ড লিটন পদত্যাগ করিতে বাধ্য হন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথের দেশব্যাপী আন্দোলনের অসীম ক্ষমতা দেখা গিয়াছিল। তঁহার চেষ্টা ও তুমুল আন্দোলনের ফলেই কার্জন সাহেবের বঙ্গভঙ্গের ব্যবস্থা পরিবর্তিত হইয়াছিল। এই সময় সুরেন্দ্ৰনাথ বাংলা দেশের মুকুটহীন রাজা’ নামে অভিহিত হইয়াছিলেন। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ কলিকতা কর্পোরেশনের সভ্য নিযুক্ত হন। ইহার কিছু দিন পরেই বারাকপুর মিউনিসিপ্যালিটি তাঁহাকে সভাপতির আসনে বরণ করে। এই উভয় প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে তিনি জনসাধারণের প্রভূত কল্যাণ সাধন করিয়াছিলেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলিকতা কর্পোরেশন হইতে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য মনোনীত হন। মিউনিসিপ্যালিটির কর্তব্য সম্বন্ধে সুরেন্দ্রনাথের জ্ঞান এত গভীর ছিল যে, কলকাতা কর্পোরেশনের তখনকার চেয়ারম্যান স্যার হেনরি হ্যারিসন তাঁহাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করিতেন।