বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*28 বঙ্গ-গৌরব এমন একটা দীপ্তি ছিল যে, এই বালক যে কালে অসাধারণ ব্যক্তি হইবে তাহা বুঝিতে পারা যাইত। অরবিন্দের চরিত্রের ভিতরও একটি স্নিগ্ধ মধুর ভাব বিদ্যমান ছিল। তাহার শিক্ষক এবং সহপাঠীগণ সকলেই তাহার গুণে মুগ্ধ ছিলেন, সকলেই তাঁহাকে অন্তরের সহিত ভালবাসিতেন। দাৰ্জিলিং-এ দুই বৎসর পড়িবার পর অরবিন্দের পিতা ছেলেদের লইয়া বিলাত গমন করেন এবং সেখানে তাহারা যাহাতে সুশিক্ষা পায় তাহার যথোচিত ব্যবস্থা করেন। এই সময়ে অরবিন্দের বয়স সাত বৎসর মাত্র। অরবিন্দ বারো বৎসর বিলাতে ছিলেন। শিশুকাল হইতেই এইরূপে ভারতবর্ষের সংস্পর্শ হইতে দুরে থাকায় এবং বিদেশি শিক্ষা ও সভ্যতার ভিতর বাড়িয়া উঠাব ফলে নিজের দেশ সম্বন্ধে তাহার কোন জ্ঞানই ছিল না ; এমন কি, নিজের মাতৃভাষা সম্বন্ধেও তিনি সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ছিলেন। অবশ্য পরে আই.সি.এস পরীক্ষা দেওয়ার সময় তঁহাকে বাংলাভাষা শিখিতে হইয়াছিল। অরবিন্দ কিছুকাল ম্যাঞ্চেস্টারে এবং পরে লন্ডনের সেন্ট পলস স্কুলে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু অরবিন্দের জীবন এ সময়ে খুব সচ্ছল অবস্থার ভিতর দিয়া অতিবাহিত হয় নাই। পিতা কৃষ্ণধন বাবু যদিও প্রচুর অর্থ উপার্জন করিতেন, বংশগত বদ্যান্যতাগুণে র্তাহার খরচও আবার তেমনি অধিক ছিল। অনেক সময়ে তিনি এমন ভাবে অর্থদান করিয়া ফেলিতেন যে, তাহার ফলে পুত্ৰদিগকে দারুণ অভাবে পড়িতে হইত। কিন্তু অরবিন্দকে এই অভাবের তাড়না খুব বেশি সহ্য করতে হয় নাই। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি পরীক্ষায় পাশ করিয়া যে বৃত্তি পাইতেন, তাহার নিজের খরচ তাহাতেই প্রায় চলিয়া যাইত । অরবিন্দের বয়স যখন মাত্র আঠারো, সেই সময় অর্থাৎ ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইসি.এস পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় সমস্ত বিষয়েই তিনি পাশ করিয়াছিলেন, কেবল অশ্বারোহণ করিতে পারেন নাই বলিয়া তাহার আই-সি-এস হওয়া ঘটে নাই। ইহার পর তিনি ক্লাসিকস। সাহিত্যে উচ্চতম পরীক্ষা দিতে কৃতসঙ্কল্প হন এবং কিংস কলেজে বৃত্তিধারী ছাত্র হিসাবে পড়িতে থাকেন। এই সময়ে অরবিন্দের পিতার মৃত্যু হয় এবং অরবিন্দ তখন সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী হইতে বাধ্য হন। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ক্লাসিকসের পরীক্ষায় অরবিন্দ প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। ইহার পরেই অর্থে পার্জনের জন্য র্তাহার চাকুরি গ্রহণ অপরিহার্য হইয়া পড়ে। সৌভাগ্যক্রমে এই সময়ে বরোদার গইকোয়াড়ের সঙ্গে তাহার পরিচয় হইল। তিনি অরবিন্দকে নিজের কনফিডেন্সিয়্যাল সেক্রেটারিরূপে গ্ৰহণ করিয়া বরোদায় প্রত্যাবর্তন করিলেন। অরবিন্দের বয়স তখন একুশ বৎসর মাত্র। পাশ্চাত্য সভ্যতা এবং ইউরোপীয় আবেষ্টনের ভিতর বাড়িয়া উঠার ফলে অরবিন্দ ইউরোপীয় ইতিহাস ও সভ্যতা সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞানার্জন করিয়াছিলেন এবং ইংরেজি ভাষায় তাহার অসাধারণ দক্ষতা জন্মিয়াছিল। কিন্তু ভারতবর্ষ ও ভারতীয় জীবন সম্বন্ধে