বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জগদীশচন্দ্ৰ বসু Ved কলিকাতা সেন্টজেভিয়ার্স কলেজ হইতে বি. এ. পাশ করিয়া বিলাতে গিয়া সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রথমে অভিলাষী হন। কিন্তু তাহার পিতা এ শিক্ষালাভের জন্য তাহার বিলাত গমনের পক্ষপাতী ছিলেন না। জগদীশচন্দ্ৰ জ্ঞানী হােন, বিদ্বান হােন, যশস্বী হােন। ইহাই তেঁাহার ইচ্ছা ছিল। সুতরাং সিভিল সার্ভিসের পরিবর্তে ডাক্তারি বা বিজ্ঞান পড়িবার জন্য তিনি পুত্রকে বিলাত পাঠাইয়া দিলেন। জগদীশচন্দ্ৰ প্ৰথমে লন্ডনে গিয়া ডাক্তারি পড়িতে আরম্ভ করেন। কিন্তু ডাক্তারি পড়া তাহার সহ্য হইল না। কিছুকাল পরে তিনি তাহ ছাড়িয়া দিয়া বিজ্ঞান পড়ায় মনোনিবেশ করিলেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রাইস্ট কলেজ হইতে তিনি বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বৃত্তি লাভ করেন এবং পর বৎসর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এসসি. উপাধি প্ৰাপ্ত হন। এই সময়েই তিনি সেখানকার পণ্ডিতদের নিকট হইতে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার এক নতুন অনুপ্রেরণা লাভ করিয়াছিলেন। এই অনুপ্রেরণার তুলনায় তাহার পরীক্ষায় পাশ করাটা অত্যন্ত অকিঞ্চিৎকর বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। দেশে ফিরিয়া জগদীশচন্দ্ৰ কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের বিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। কিন্তু প্রেসিডেন্সি কলেজে তখন ভাল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার ছিল না ; সুতরাং জগদীশচন্দ্ৰকে বাধ্য হইয়া প্রথম হইতে নিজের পরীক্ষাগার গড়িয়া তুলিতে হইয়াছিল। ইহার দশ বৎসর পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি ছোট পরীক্ষাগার স্থাপনের ব্যবস্থা श्। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্ৰ বৈজ্ঞানিক প্ৰবন্ধ লিখিতে আরম্ভ করেন এবং সাময়িক পত্রে তাহা প্রকাশিত হইতে থাকে। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি একটি সুচিন্তিত প্ৰবন্ধ লিখিয়া “রয়েল সোসাইটি’র নিকট প্রেরণ করেন। প্রবন্ধের মৌলিকতার জন্য তাহা রয়েল সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সোসাইটি বৈজ্ঞানিক কাজ চালাইবার জন্য তঁহাকে কিঞ্চিৎ অর্থ সাহায্যও করিয়াছিল। রয়েল সোসাইটির কাগজে প্ৰবন্ধ বাহির হওয়া তখনকার দিনে অতিশয় গৌরবের বিষয় ছিল। ইহার দুই বৎসর পরে বাংলা গভর্নমেন্টও জগদীশচন্দ্রের প্রতিভা বুঝিতে পারেন। সুতরাং তঁহার কার্য পরিচালনার জন্য গভর্নমেন্ট তঁহাকে তখন কতকগুলি বিশেষ সুবিধাও প্রদান করিয়াছিলেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ও এই সময়ে এই ভারতীয় বৈজ্ঞানিকের গুণাবলিতে মুগ্ধ হইয়া তীহাকে ডি. এস-সি উপাধিতে ভূষিত করে। তারের সাহায্য ব্যতিরেকে তাড়িত-বার্তার আদান-প্ৰদান করা সম্ভব কিনা জগদীশচন্দ্ৰ তাহা লইয়া গবেষণা করিতে আরম্ভ করিলেন। এই সময়ে পৃথিবীর আরও দুজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক এই ব্যাপার লইয়া গবেষণা করিতেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, একই সময়ে পৃথিবীর তিন জন শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিকের মনে একই বিষয়ে গবেষণার কথা উদিত হইয়াছিল। কিন্তু জগদীশচন্দ্ৰই সর্বপ্রথমে এই গবেষণায় কৃতকার্য হন এবং পরীক্ষার দ্বারা দেখাইয়া দেন যে, বিনা তারেও তড়িত-বার্তা প্রেরণ করা সম্ভব। এই অত্যক্তৃত আবিষ্কারের ফলে জগদীশচন্দ্রের নাম দেশে-বিদেশে ছড়াইয়া পড়ে।