পাতা:বনে পাহাড়ে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

चन-*८फ़्) RR হঠাৎ মনে হোল বনের সেই স্বর্ণচাঁপার সুগন্ধ নয় তো ? কিন্তু এখন তো চাপাফুল ফুটবার সময়ও নয় । বড় সুগন্ধ ফুলটার-যে অজানা ফুলাই হোক বনের,-অন্ধকারের মধ্যে নির্জন আকাশতলে তার এই প্ৰাণঢাল আত্ম-নিবেদন নিশ্চয় ব্যর্থ নয়। বিশ্বের বড় গোরস্থালিতে এতটুকু জিনিসের অপচয় হবার যো নেই । অদ্ভুত গম্ভীর শোভা এই নিবিড় নির্জন অরণ্যানীর। মাথার ওপরে ঝকঝকে তারা ছিটানো আকাশ, চারিধারে শৈলশ্রেণী, তাদের ছোট বড় চুড়া যেন আকাশের গায়ে ঠেকেচে-মাঝে মাঝে দু একটা রাত-জাগা পাখীর ডাক, সর্বোপরি একটা গহন গভীর রহস্য যেন এই রাত্রে এই বনভূমির অঙ্গে অঙ্গে মাখানো। শোওয়া কি যায় ? এমন রাত্রি নিদ্রার জন্যে তৈরী হয়নি। —আমরা জেগে বসে থাকি, কি বলেন মিঃ সিংহ ? -খুব ভালো । মনে হোল এমন বিরাট অরণ্য কখনো দেখিনি জীবনে । এমন বিরাট বনস্পতি শ্রেণীর সমাবেশ, সঙ্গে সঙ্গে এই অদ্ভুত-দর্শন শৈলশ্রেণী দুইয়ের এই যোগাযোগই এই অরণ্যকে সুন্দরতর, অধিকতর রহস্যময় করচে ; এ দেখবার সুযোগ বা ক’জনের ভাগ্যে ঘটে ? রেলপথের নিকটবৰ্ত্তী স্থানসমূহে অনেকে সহজেই যেতে পারেন বটে, যেমন মধুপুর, সিমুলতলা ইত্যাদি, কিন্তু সে সব স্থানে মানুষের ভিড়, ছোট বড় ঘরবাড়ীর ভিড়। দূরে বা নিকটে এমন ধরনের অরণ্য নেই। দেওঘর থেকে ১৪১৫ মাইল দূরে এক বিরাট জঙ্গল আছে বটে, কানিবেলের জঙ্গল ; সেটা লছমীপুর গাড়োয়ালি ষ্টেটের অন্তভুক্ত। আমি একবার ভাগলপুর থেকে দেওঘর পর্য্যন্ত পদব্ৰজে আসি সেই ঘন বনের মধ্যে দিয়ে। সে বন বড় একটা মালভূমির ওপর, তার শেষ প্ৰান্ত থেকে দূরস্থিত ত্ৰিকূট পাহাড় নীলমেঘের মত দেখা যায়, কিন্তু সে এমন শৈলমালবেষ্টিত নয়, এতবড় বনস্পতির সমাবেশও নেই সেখানে। ষ্টেটের লোক কাঠ বেচে জঙ্গল অনেক নষ্ট করে ফেলেচে।