পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে br) পীরের আস্তানা থাকার জন্য পাণ্ডুয়ায় বহুমুসলমান যাত্রীর সমাগম হয় । পাওয়ায় বহু সত্ৰাস্ত মুসলমান পরিবারের বাস আছে। ইংরেজ রাজত্বের প্রথম যুগে বিচার কার্ঘ্যের সাহায্যের জন্য যখন কাজী নিযুক্ত করা হইত সে সময়ে পাণ্ডুয়া হইতে বহু লোক এই কার্য্য করিতেন। এক কালে পাণ্ডুয়া পাতলা ও মজবুত কাগজের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। উনবিংশ শতাব্দীতে হুগলীর ম্যাজিস্ট্রেট অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেটকে এই কাগজ সরবরাহ করিতেন। পাণ্ডুয়ার নিকটস্থ চাপত গ্রামে ১৭৪১ খৃষ্টাব্দে কবিওয়াল রামনিধি রায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাহার গান “ নিধুর টপপ ” নামে খ্যাত। তাহার সুন্দর প্রেমসঙ্গীতগুলি সেকালে বিশেষ লোকপ্রিয় হইয়াছিল। বৰ্দ্ধমান জংশন—হাওড়া হইতে ৬৭ মাইল দূর। বৰ্দ্ধমান শহরটি বাকী নদীর তীরে অবস্থিত। ইহার ন্যায় প্রাচীন শহর বাংলাদেশে অতি অল্পই আছে। গ্রীকৃ ঐতিহাসিকগণ বণিত গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী পার্থেলিস্ বৰ্ত্তমান বৰ্দ্ধমান বুলিয়া কাহারও কাহারও অভিমত। অনেকে অনুমান করেন যে প্রসিদ্ধ জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীর স্বামীর পূবর্বাশ্রমের নাম “বৰ্দ্ধমান ” হইতেই এই স্থানের নাম বৰ্দ্ধমান হইয়াছে। প্রাচীন জৈন ধৰ্ম্মগ্রন্থ “ অঙ্গ ’ পাঠে জানা যায় যে মহাবীর স্বামী ৫৪২ হইতে ৫৩০ খৃষ্ট পূবর্বাব্দে রাঢ়দেশের চুয়াড়দিগের উন্নতিবিধানে উদ্যমশীল হন। প্রথমে তিনি চুয়াড়গণের নিকট অপমানিত ও প্রহ্ত হন, পরে তিনি তাহাদিগের ও রাঢ়ের অন্যান্য অধিবাসগিণের নিকট পূজিত হন। কথিত আছে, বৰ্ত্তমান বৰ্দ্ধমান নগরেই তিনি প্রথম ধৰ্ম্মপ্রচার করেন। মহাকবি ভারতচন্দ্ৰ বৰ্দ্ধমানকে বিদ্যাসুন্দরের ঘটনাস্থল বলিয়া বণনা করিয়াছেন। ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে আকবরের সেনাদল এই স্থানে দায়ুদ খার পরিজনগণকে বন্দী করে। ১৬০৬ খৃষ্টাব্দে জগৎবিখ্যাত সুন্দরী ইতিহাস প্রসিদ্ধ নূরজাহানের প্রথম স্বামী শের অফগান এই স্থানে নিহত হন। যুবরাজ অবস্থায় জাহাঙ্গীর (সেলিম) নূরজাহান বা মেহেরুরিসার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হইয়া তাহাকে বিবাহ করিতে ইচছা প্রকাশ করেন। কিন্তু সম্রাট আকবর তাহাতে সম্মত না হইয়া শের আফগানের সহিত মেহেরুন্নিসার বিবাহ দেন ও তাহাদিগকে সুদূর বদ্ধমানে পাঠাইয়া দেন। জাহাঙ্গীর বাদশাহ হইয়া কুতৰ-উদ-দীনকে বাংলার শাসন কৰ্ত্ত করিয়া পাঠান। কুতৰ শের আফগানকে পত্নীত্যাগের কথা বলিলে তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে আক্রমণ ও নিহত করেন, কিন্তু কুতবের অস্ত্রাঘাতে নিজেও প্রাণত্যাগ করেন। শের আফগান ও কুতব-উদ-দীনের সমাধি বৰ্দ্ধমান শহরের পীর বহরাম নামক পল্লীতে পাশাপাশি অবস্থিত। শের আফগানের মৃত্যুর পর মেহেরুন্নিসাকে দিল্লীতে লইয়া যাওয়া যায়। পরে তিনি সম্রাটের সহিত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হইয়াছিলেন। ১৬২৪ খৃষ্টাব্দে যুবরাজ খুররম (সাজাহান) পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইয়া দক্ষিণাত্যে পরাজিত হওয়ার পর বাংলায় পলাইয়া আসেন এবং বৰ্দ্ধমান আক্রমণ করেন। ভীষণযুদ্ধে সুবাদার ইব্রাহিম খাঁ নিহত হইলে খুররম তেলিয়াগড়ি দুর্গ অধিকার করেন। ইহার অত্যয়কাল পরেই বৰ্দ্ধমান রাজ্য ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়। বদ্ধমানের যাহা কিছ গৌরব তাহা এই রাজবংশের জন্য। লাহোরের সঙ্গম রায় নামক জনৈক কাপুর ক্ষত্রিয় এই রাজবংশের আদি পুরুষ। তিনি জগন্নাথ দৰ্শন করিয়া প্রত্যাগমন পথে বদ্ধমানের নিকটবৰ্ত্তী বৈকুন্ঠপুর গ্রামে ব্যবসায়ের জন্য বসবাস করেন। তাহার প্রপৌত্র আবু রায় রাজানুগ্রহ লাভে সমর্থ হইয়া বৰ্দ্ধমানের ফৌজদারের অধীনে রেখাবী বাজারের “চৌধুরী” এবং পরে “কোতোয়াল ” নিযুক্ত হন। ইহার সময় হইতেই বৰ্দ্ধমান রাজ্যের সূত্রপাত