পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼOᎸ. বাংলায় ভ্রমণ হইত এবং তিনি যাহা কিছু শুনিতেন এক পক্ষকাল ধরিয়া অবিকল মনে রাখিতে পারিতেন বলিয়৷ তাহার নাম হয় পক্ষধর। শলাকা পরীক্ষা এই প্রকার—একটি সূক্ষ্মাগ্র লৌহশলাকা সবলে পুথির উপর নিক্ষেপ করিলে সবৰ্বশেষে যে পত্র খানি বিদ্ধ হয়, পরীক্ষার্থী ছাত্রকে সেই পত্ৰখানি ব্যাখ্য করিতে দেওয়া হয়। বাসুদেব এই ভাবে শত শলাকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলে পক্ষধর মিশ্র তাহাকে “সাবর্বভৌম ” উপাধি প্রদান করেন। তৎকালে মিথিলা ছাড়া অন্যত্র ন্যায়শাস্ত্রের অধ্যাপনা ছিল না। পরীক্ষোত্তীর্ণ ছাত্র যাহাতে ন্যায় শাস্ত্রের পুঁথি বা উহার কোন অংশ স্বদেশে না লইয়া যাইতে পারে তৎপ্রতি মিথিলার পণ্ডিতদিগের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। বাসুদেব অনন্যস্থলভ মেধাশক্তি বলে গঙ্গেশ উপাধ্যায় কৃত চারি খণ্ড চিন্তামণি শাস্ত্র ও উদয়ন আচার্যের ন্যায় কুসুমাঞ্জলির শ্লোকাংশ কণঠস্থ করিয়া নবদ্বীপে আসিয়া ন্যায় গ্রন্থের প্রচলন ও অধ্যাপনা করেন। তাহার প্রতিভার নিকট ন্যায়শাস্ত্রে মিথিলার একাধিপত্য আর টিকিতে পারে নাই। উত্তরকালে বাসুদেব সাবর্বভৌম ওড়িষ্যারাজ প্রতাপ রুদ্রদেবের সভাপণ্ডিত পদে বৃত হইয়াছিলেন এবং তথায় শ্রীচৈতন্য দেবের সংস্পশে আসিয়া তাহার অনুরাগী ভক্ত হন। বাসুদেব সাবর্বভেীমের শিষ্যগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক রঘুনাথ শিরোমণি ও “অনুমান মণিব্যাখ্যা ” প্রণেতা কণাদ প্রধান। রঘুনাথ বাসুদেবের নিকট পাঠ সমাপনান্তে মিথিলার পক্ষধর মিশ্রের নিকট প্রেরিত হন। পক্ষধর রঘুনাথের মেধা দেখিয়া অতিমাত্র বিঘ্নিত হন এবং সভা করিয়া তাহাকে সবর্বপ্রথম নবদ্বীপ হইতে উপাধি বিতরণের ক্ষমতা ও অধিকার প্রদান করেন। কথিত আছে রঘুনাথ নবদ্বীপে ফিরিয়া হরিঘোষ নামক একব্যক্তি প্রদত্ত গোশালায় তাহার চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন। তাহার এত ছাত্র হইয়াছিল যে তাহাদের পাঠ অভ্যাসের কোলাহল বহু দূর হইতে শুনা যাইত; ইহা হইতেই "হরিঘোষের গোয়াল ” এই প্রবাদ বাক্যের উৎপত্তি বলিয়া কথিত। নবদ্বীপে বহুকাল হইতে ন্যায়ের চচর্চা থাকিলেও রঘুনাথের সময় হইতেই নবদ্বীপে ন্যায়ের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাহার সময় হইতেই নবদ্বীপের নৈয়ায়িকগণের মধ্যে একজন করিয়া প্রধান নৈয়ায়িক পদে বৃত হইয়া আসিতেছেন। রঘুনাথের গ্রন্থগুলির মধ্যে “চিন্তামণি-দীধিতি” বা "নব্যন্যায় ” সবর্ধপ্রধান। নৈয়ায়িক মথুরানাথ তর্কবাগীশ, ভবানন্দ সিদ্ধাস্তবাগীশ, রঘুদেব ন্যায়ালঙ্কার, জগদীশ তর্কালঙ্কার ন্যায় শাস্ত্রের যে সকল মূল্যবান ভাষ্য প্রভৃতি রচনা করিয়াছিলেন সে গুলি আজও যথাক্রমে “ মাথুরী রহস্য ” “ ভবানন্দী " “ রঘুদেৰী ” ও “ জগদীশী ” নামে পরিচিত। বিশ্বনাথ ন্যায়পঞ্চাননের “ভাষা-পরিচ্ছেদ ” নামক প্রসিদ্ধ ন্যায় শাস্ত্রের ভাষ্য আজও ভারতের সবর্বত্র অধীত হয় ; কথিত আছে তাহার পিতা বিদ্যানিবাস মুগ্ধবোধ ব্যকরণের টীকা লিখিয়া এদেশে কলাপ ব্যাকরণের পরিবর্তে মুগ্ধবোধের প্রচলন করেন ; তিনি বারাণসীতে জগৎগুরু নারায়ণ ভট্টকে বিচারে পরাস্ত করিয়াছিলেন। রামনাথ তর্কসিদ্ধাস্তের সময়ে নবদ্বীপের সকল পণ্ডিত চতুষ্পাঠী চালাইবার জন্য কৃষ্ণনগরের । রাজাদিগের সাহায্য গ্রহণ করিতেন ; কিন্তু রামনাথ অসাধারণ আত্মমর্য্যাদা সম্পন্ন ছিলেন, সেজন্য রাজার নিকট হইতে কোনও সাহায্য গ্রহণ করিতে সম্মত হন নাই এবং নবদ্বীপের নিকট বনমধ্যে দারিদ্র্যের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাহার টোল চালাইতেন, এজন্য তিনি বুনো রামনাথ নামে খ্যাত। নবদ্বীপের আনন্দরাম তর্কবাগীশ পূজার অর্ঘ্য দিবার সুবিধার জন্য কোশার মুখ বড় করিয়াছিলেন, তদবধি কোশার অপর নাম আনন্দার্থ্য । - ন্যায় শাস্ত্রের ন্যায় সমৃতি শাস্ত্রেও বহুকাল অবধি নবদ্বীপের প্রাধান্য স্থাপিত হইয়াছে। মনুসংহিতার টক “মনুথ মুক্তাবলী ” প্রণেতা সুপ্রসিদ্ধ বাঙালী কুল্লুকভট অনুমান খৃষ্টীয় চতুর্দশ