পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে )ひa পূৰ্ব্বস্থলী স্টেশন হইতে আন্দাজ ৬ মাইল পশ্চিমে মস্তেশ্বর থানায় শুকরো বা শুরো বলিয় যে গ্রাম আছে উহার প্রাচীন নাম শুরনগর বলিয়া কথিত। মহারাজ আদিশূরের বৃদ্ধাবস্থায় গৌড়ীয় বৌদ্ধগণ তাহাকে সিংহাসনচু্যত করিয়া পরম বৌদ্ধ গোপাল দেবকে সিংহাসনে বসাইলে আদিশূরের পুত্র ভূশর গৌড় ত্যাগ করিয়া রাঢ়দেশে ব্রাহ্মণ রাজাদের সান্নিধ্যে শুরনগর স্থাপন করিয়া তথায় রাজধানী প্রতিষ্ঠিত করেন। ভুপুর ও তাঁহার পুত্র ক্ষিতিশূর ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করিতে যত্নবান হন। ক্ষিতিশূর গৌড়ের বৌদ্ধ নৃপতি দেবপালের নিকট পরাজিত হইয় তাহার বশ্যত স্বীকার করেন বলিয়া কথিত ; শুকরোর ৩ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে রাইগার সহিত মহারাজ আদিশূরের সম্বন্ধ ছিল বলিয়া কথিত। সমুদ্রগড় স্টেশন দ্রষ্টব্য। পূববস্থলী স্টেশন হইতে আন্দাজ ১১ মাইল পশ্চিমে শুক্রো ছাড়াইয়া মন্তেশ্বর থানার অন্তর্গত দেলুড় গ্রামে “চৈতন্য ভাগবত ” প্রণেতা বৃন্দাবন দাস প্রতিষ্ঠিত একটি পুরাতন মন্দির আছে । বৈষ্ণবগণের নিকট উহা দেলুড় শ্রীপটি নামে পরিচিত। অগ্রদ্বীপ—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ৫৭ মাইল দূর। ইহা প্রাচীন নবদ্বীপের অন্তর্গত একটি পল্লী। এখানে চারি শত বৎসরের অধিককাল পূবেৰ্বর প্রতিষ্ঠিত গোপীনাথ নামক এক বিগ্রহ আছেন। চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুর এই বিগ্রহের প্রতিষ্ঠাতা । চৈতন্যদেব যখন গঙ্গাতীরের পথ দিয়া বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন তখন গোবিন্দ ঘোষ তাহার সহচর ছিলেন। একদিন আহারের পর চৈতন্যদেব মুখশুদ্ধি চাহিলে গোবিন্দ নিকটস্থ এক গৃহস্থ বাঢ়ি হইতে একটি হরিতকী চাহিয়া আনিয়া উহার এক খণ্ড তাহাকে প্রদান করেন। পরদিন অগ্রদ্বীপে পৌছিয়া ভোজনাস্তে চৈতন্যদেব গোবিন্দের নিকট পুনরায় মুখশুদ্ধি চাহিলে গোবিন্দ পূবর্ব দিনের সঞ্চিত হরিতকী খণ্ড তাহাকে তৎক্ষণাৎ বাহির করিয়া দিলেন । ইহা দেখিয়া ঈষৎ হাস্য সহকারে চৈতন্যদেব বলিলেন, “ গোবিন্দ, তোমার বিষয় বাসনা এখনও যায় নাই ; বৃন্দাবনে তোমার যাওয়া হইবে না। ” ইহাতে গোবিন্দ অতিশয় দুঃখিত ও কাতর হইয়া বলিলেন, “তোমার সেবা করিব বলিয়াই আমি গৃহ হইতে বাহির হইয়াছি, আমি তোমাকে ছাড়িয়া কিছুতেই এখানে থাকিব না।” তখন চৈতন্যদেব বলিলেন, “ তুমি এখানে এক বিষ্ণুবিগ্রহ স্থাপন করিয়া তাহার সেবা কর, তাহ হইলে আমার সেবা করা হইবে।” শ্রীচৈতন্যদেবের কথা মত গোবিন্দ ঘোষ গোপীনাথ বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে যে গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুরের অস্তিমকালে তাহার ভক্তগণ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করেন যে তাঁহাদের মধ্যে কে তাহার শ্রাদ্ধের অধিকারী হইবেন । ইহাতে ঘোষ ঠাকুর উত্তর দেন যে গোপীনাথকে তিনি পুত্রবৎ স্নেহ করেন, গোপীনাথ দেবই তাহার শ্রাদ্ধের অধিকারী। আজিও প্রতি বৎসর চৈত্র মাসের কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথিতে গোপীনাথ বিগ্রহকে শ্রাদ্ধোপযোগী বেশভমায় সজ্জিত করা হয়। বাৰুণী উপলক্ষে অগ্রদ্বীপে বহু লোকের সমাগম হইয়া থাকে। কৰ্ত্তাভজা সম্প্রদায়ের অনুরূপ সাহেৰধনী নামক সম্প্রদায়ের একটি উৎসব প্রতি বৎসর চৈত্র মাসে অগ্রদ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়। সাহেবধনী নামক একজন ফকিরের দুই জন হিন্দু ও এক জন মুসলমান শিষ্য মিলিয়৷ এই সম্প্রদায়ের প্রবর্তন করেন। দাইহাট—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ৬১ মাইল। কথিত আছে, মহারাষ্ট্র বগীদলের নেতা ভাস্কর পণ্ডিত এই স্থানে ছাউনি করিয়া দুর্গা পূজা করিয়াছিলেন। বৰ্দ্ধমান রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আৰুরায় হইতে মহারাজ জগৎরাম রায়ের চিতাভষ্ম এই স্থানে রক্ষিত আছে।