পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূবর্ব ভারত রেলপথে כל כ প্রণেতা লোচন দাসের জন্মস্থান। লোচন দাসের সমাজ বা সমাধির আকৃতি ছোট পিরামিডের রত। এখানকার গৌর-নিতাইএর মন্দির বৈষ্ণবগণের বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান। “চৈতন্য মঙ্গল ” ছাড়া লোচন দাস “ আনন্দ লতিক৷ ” ও “দুর্লভসার ” নামে আরও দুইখানি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। কাটোয়া হইতে আহম্মদপুরের দিকে কাটােয়া হইতে ১০ মাইল দুর নিরোল স্টেশনের এক মাইল দক্ষিণে কেতুগ্রাম একটি পীঠস্থান। এই স্থানের প্রাচীন নাম বহুলা। এখানে দেবীর বাম পদ পতিত হইয়াছিল। দেবী বহুলা ও ভৈরব ভীরুক এখানে নিত্য পূজিত হন। কাটোয়৷ হইতে এই লাইনে বীরভূম জেলার অন্তগত লাভপুর স্টেশন ২৫ মাইল দূর। লাভপুরও একটি মহাপীঠ। এখানে দেবীর অধ:ওষ্ঠ পড়িয়াছিল, দেবীর নাম ফুল্লরা, ভৈরব বিল্বেশ। দেবীর কোন বিগ্রহ নাই, প্রায় দশ বার হাত বিস্তৃত একখানি শিলাখণ্ড দেবীর ওষ্ঠরূপে পূজিত হয়। এই স্থানে তান্ত্রিকমতে শিবাভোগ দেওয়া হয়। ভোগ দিবার সময়ে “রূপী সুপী ? বলিয়া ডাকিলে বহু শৃগাল পালিত পশুর ন্যায় আহারের জন্য জঙ্গল হইতে আসিয়া থাকে। মন্দিরের পাশে দলদলি নামক একটি মজা দীঘি আছে। প্রবাদ রামচন্দ্র যখন অকালে দুগা পূজা করেন তখন এই দেবী দহ হইতেই নাকি নীলোৎপল লইয়াছিলেন। লাভপুর একটি বদ্ধিষ্ণু ভদ্রপল্লী। এখানে বন্দ্যোপাধ্যায় উপাধিধারী একঘর জমিদারের বাস । লাভপুরের দুই মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে দুবসে গোপালপর নামে একটি গ্রাম আছে।প্রবাদ, এই স্থানে দুবর্বাসা ঋষির আশ্রম ছিল এবং ইহা হইতেই গ্রামের নাম দুবসে গোপালপুর হইয়াছে। সালার—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ৭৬ মাইল। স্টেশন হইতে ৩ মাইল পূবর্বদিকে কাগ্রাম পরাতন কঙ্কগ্রাম নগর বলিয়া অনেকে অনুমান করেন। পূবর্বকালে অজয় ও ভাগীরথীর মধ্যবৰ্ত্তী ভভাগ কঙ্কগ্রামভুক্তি নামে অভিহিত হইত। ইহারই প্রধান নগর কঙ্কগ্রাম চৈনিক পরিব্রাজক যুয়ান চোয়াং বণিত কাজঙ্গল বলিয়া অনুমিত হয় । তিনি এ অঞ্চলে অনেক মন্দির ও বিহার দেখিয়াছিলেন, এগুলি সম্ভবতঃ এখনও মাটির নীচে গুপ্ত হইয়া আছে। মালিহাট হলট্—ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ৭৮ মাইল। মালিহাট বা মেলেটি প্রসিদ্ধ পদকর্তা যদুনন্দন দাসের জন্মস্থান। পূবর্ব-বঙ্গ রেলপথের বহরমপুর স্টেশন দ্রষ্টব্য। ఓు. বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ শ্রীনিবাস আচার্য্যের প্রপৌত্র রাধামোহন ঠাকুরও খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাবদীর শেষভাগে এই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তৎকালে তাহার ন্যায় পণ্ডিত বৈষ্ণব সমাজে আর কেহ ছিলেন না। একবার ভক্ত বৈষ্ণব জয়পুররাজ জয়সিংহের সভায় বৃন্দাবনস্থ গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের সহিত পশ্চিম দেশীয় বৈষ্ণবগণের পরকীয়া ও স্বকীয়া মত লইয়া বিচার হয়। গৌড়ীয়গণের পরাজয় ঘটিলে তাহারা এই বিচার বাংলা দেশের পণ্ডিতগণের সহিত করিয়া শেষ সিদ্ধান্ত করিতে অনুরোধ করেন। রাজা তখন বিচারে জয়ী স্বকীয়া মতাবলম্বী নিজ সভাসদৃ কৃষ্ণদেব ভট্টাচাৰ্য্যকে বাংলায় প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে প্রয়াগ বারাণসী প্রভৃতি স্থানে নিজ মত প্রতিষ্ঠা করিয়া তিনি শ্ৰীখণ্ড ও যাজিগ্রামে উপস্থিত হইলে, বৈষ্ণব পণ্ডিতগণ রাধামোহনের সহিত বিচার প্রার্থনা করিলেন। নবাব মুর্শিদ কুলী বঁ। এই বিচারের অনুমতি প্রদান করেন এবং নবদ্বীপ, ওড়িষ্যা বারাণসী প্রভৃতি স্থানের পণ্ডিতগণ সভায় আগমন করেন। কৃষ্ণদেব রাধামোহনের নিকট পরাজিত হইয়া পরকীয়া মত অবলম্বন করিয়া তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং বৃন্দাবন প্রভৃতি স্থানে গিয়া এই মতের পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭১৮ খৃষ্টাবেদ এই বিচার হইয়াছিল। ইহা ছাড়া রাধামোহনের নাম বৈষ্ণব-পদাবলী সংগ্রাহক