বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূব ভারত রেলপথে $) জঙ্গীপুর শহর হইতে তিন মাইল উত্তর-পূবেৰ ভাগীরথীর পূবর্বকুলে গিরিয়া নামে একটি গ্রাম আছে। ইহার চারিপাশে নদীর উভয় কুলে প্রায় ৮/১০ মাইল ব্যাপী প্রান্তর গিরিয়ার প্রাস্তর নামে অভিহিত। ভাগীরথীর পশ্চিমে অবস্থিত এই প্রাস্তরের অংশকে সূতীর ময়দানও বলা হয় ; গিরিয়ার ৬ মাইল উত্তরে সূতী একটি প্রসিদ্ধ স্থান। এই গিরিয়ার প্রাস্তর দুইবার সমরক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে। গিরিয়ার প্রথম যুদ্ধ ১৭৪০ খৃষ্টাব্দের শেষভাগে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলী খার দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খাঁ ও তাঁহার বিহারের সুবাদার বিদ্রোহী আলিবর্দী খাঁর মধ্যে গিরিয়া গ্রামের নিকটে ভাগীরথীর পূর্ববতীরে সংঘটিত হয়। যুদ্ধে সরফরাজ নিহত হন। পূৰব-বঙ্গ রেলপথের মুর্শিদাবাদ স্টেশন দ্রষ্টব্য। নবাবের মৃত্যুর পর তাহার অনুরক্ত সেনাপতি গওস খাঁ তাহার দুই পত্রের সহিত বীর বিক্রমে যুদ্ধ করিয়া নিহত হন। আলিবর্দী খ সম্পূর্ণ জয়লাভ করেন। গওস খার বীরত্ব ও প্রভুভক্তি এ অঞ্চলে গ্রাম্য গাথায় স্থান পাইয়াছে। যে স্থানে গওস খ নিহত হন তথায় একটি দরগাহ নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল; পরে তাহার গুরু ফকির শাহ্ হায়দরী তাহার ও তাহার পুত্রদ্বয়ের মৃতদেহ ভাগলপুরে লইয়া গিয়া পুনরায় সমাহিত করেন। গিরিয়ার আদি দরগাহটি ভাগীরথী গর্ভে যাইলে, নদীর পশ্চিম কলে চাদপুর গ্রামে একটি ক্ষুদ্র দরগাহ্ নিৰ্ম্মিত হয় ; উহা এ অঞ্চলের মুসলমানগণের বিশেষ শ্রদ্ধার স্থল। এই যুদ্ধে গওস খাঁর পতনের পরই নবাব সরফরাজ খাঁর রাজপুত জাতীয় সেনাপতি বিজয় সিংহ সাহসের সহিত যুদ্ধ করিতে করিতে নিহত হন; তাহার সহিত তাহার নবমবৰ্ষীয় পুত্র জালিম সিংহ রণক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল ; বালক পিতার মৃতদেহ রক্ষাথে তরবারী হস্তে জয়োনমত্ত শক্র সৈন্যদের সম্মুখে অগ্রসর হইয়া বীরদপে তাহাদের আটকাইয়া রাখিল যাহাতে পিতার মৃতদেহ কেহ স্পর্শ করিতে না পারে। রিয়াজ-উস-সলাতীনে লিখিত আছে যে আলিবর্দী খা বালকের এইরুপ দুবর্বার সাহসে মুগ্ধ হইয়া নিজ হিন্দু সেনাগণের সাহায্যে বিজয় সিংহের মৃতদেহের শাস্ত্রমত সৎকারের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছিলেন। আলিবদীর কয়েকটি গোলন্দাজ সৈন্য বালককে স্কন্ধে করিয়া নৃত্য করিয়াছিল। এই ঘটনা স্মরণ করিয়া গিরিয়া গ্রামের এক মাইল দক্ষিণ-পূবেৰ মিঠপুর গ্রাম হইতে পূবর্বদিকে খামর গ্রাম পৰ্য্যন্ত গিরিয়া-প্রাস্তরের অংশটি আজও “জালিম সিংহের মাঠ” নামে পরিচিত । গিরিয়ার দ্বিতীয় যুদ্ধ ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে বাঁশলই নদীর সঙ্গমের নিকট নবাব মীর কাসিম ও ইংরেজ সৈন্যের মধ্যে ১৭৬৩ খৃষ্টাবেদর অগস্ট মাসে সংঘটিত হয়। ইহা সূতীর যুদ্ধ নামেও অভিহিত হয়। মুর্শিদাবাদে মোতিঝিলের নিকট মীর কাসিমের সৈন্যদল পরাজিত হইয়া নীর কাসিম প্রেরিত সসৈন্য সেনাপতি সমরু, মার্কার, আসাদ উল্লা প্রভৃতির সহিত সূতীর নিকটে মিলিত হন। মেজর আডামসের অধীনে ইংরেজগণ ভাগীরথী পার হইয়া উত্তরে আগাইয়া যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে মীর কাসিমের সেনাদল পরাজিত হইয়া রাজমহলের নিকট উৰুয়ানালায় পলায়ন করিয়া শিবির স্থাপন করেন। তথায় ইংরেজ সৈন্য শিবির আক্রমণ করিয়া নবাব পক্ষকে একেবারে বিপর্য্যস্ত করিয়া দেয়। বিভারিজ সাহেব গিরিয়া প্রান্তরকে মুর্শিদাবাদের পাণিপথ বলিয়াছেন। রাজধানী দিল্লীর অনতিদূরে পাণিপথে যেরূপ মুঘল সম্রাজ্যের সূত্রপাত ও মহারাষ্ট্ৰীয় শক্তির পরাভব ঘটে, গিরিয়ার রণ ক্ষেত্রে সেইরূপ আলিবর্দী খাঁর অভু্যদয় ও মীর কাসিমের পরাভব ঘটে। খিদিরপুর হলট-ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে ১৪১ মাইল। স্টেশন হইতে প্রায় ২ মাইল পশ্চিমে মহেশাল গ্রামে প্রায় দেড় মাইল দীর্ঘ একটি প্রকাও দীঘি আছে; ইহার নিকট