পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ব ভারত রেলপথে 为戈仓 কালুনেডাঙ্গা ও রক্তনালী প্রভূতি স্থান মহাবীর লাউসেন ও ইছাই ঘোষের যুদ্ধের স্মৃতি বহন করিতেছে। লাউসেনের সেনাপতি কালু ডোমের হস্তে ইছাই ঘোষ নিহত হন। কোপাই—খানা জংশন হইতে ৩০ মাইল দূর। স্টেশনের অনতিদূরে কোপাই নামক উত্তরবাহিনী নদীর তীরে একটি পীঠস্থান আছে। এখানে দেবীর কঙ্কাল পড়িয়াছিল, দেবীর নাম বেদগৰ্ভা, ভৈরব বুরু। এই স্থান কঙ্কালীতলা নামে পরিচিত। এই স্থানের একটি কুণ্ডের জল বিশেষ পবিত্র বলিয়া বিবেচিত হয়। যাত্রিগণ এই কুণ্ডে দেবীর পূজা করিয়া থাকেন। চৈত্র সংক্রাস্তিতে এখানে একটি মেলা হইয়া থাকে। . . . . . . . . . . আহমদপুর জংশন—খানা জংশন হইতে ৩৬ মাইল। ইহাও একটি বাণিজ্য প্রবান স্থান । ইহা আহমদপুর কাটােয়া নামক নাইট রেলওয়ের সহিত একটি জংশন স্টেশন। - আহমদপুরের দুই মাইল দূরে বেলিয়া বা বেলে নামক গ্রামে ধৰ্ম্মরাজ ঠাকুরের এক মন্দির আছে। বাত রোগের দৈব ঔষধ প্রাপ্তির জন্য এই স্থানে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। রাঢ় দেশে ধৰ্ম্মঠাকুরের যতগুলি মন্দির আছে, বেলের মন্দির তাঁহাদের মধ্যে বিশেষ পরিচিত। সাইথিয়া জংশন—খানা জংশন হইতে ৪৪ মাইল দূর। ইহা বীরভূম জেলার একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। সাঁইথিয়া স্টেশনের নিকটে একটি পীঠস্থান আছে, উহার প্রাচীন নাম নন্দীপুর। এই স্থানে দেবীর হাড় পড়িয়াছিল, দেবীর নাম নন্দিনী, ভৈরব নন্দিকেশ্বর। রেল লাইনের পার্শ্বে একটি প্রাচীন বটবৃক্ষতলে দেবীর পাষাণময়ী মুক্তি বিরাজিত। সাঁইথিয়ার ৬ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব মৌড়েশ্বর গ্রামে মৌড়েশ্বর নামে এক প্রাচীন শিব আছেন। এই গ্রামের রাজা মুকুটরায় বৈষ্ণবশিরোমণি নিত্যানদের মাতামহ ছিলেন। সাঁইথিয়ার পাচ মাইল পূর্বদিকে কোটামুর নামে একটি গ্রাম আছে। প্রবাদ, এই স্থানে হিড়িম্ব ও বক রাক্ষসের বাসস্থান ছিল। অস্বরের কোট বা বাসস্থান বলিয়া গ্রামের নাম কোটামুর হইয়াছে। সাঁইথিয়ার ১১ মাইল পূবর্বদিকে অবস্থিত গনুতিয়া গ্রাম রেশম শিল্পের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিল। - অগুলি জংশন হইতে একটি শাখা লাইন সাঁইথিয়ায় আসিয়া মিলিত হইয়াছে। মল্লারপুর—খান জংশন হইতে ৫৪ মাইল খুর। ইহা একটি সমৃদ্ধিশালী গ্রাম। এই গ্রামে মল্লেশ্বর নামে এক প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ শিব আছেন। গ্রামের পূর্বাংশে শিৰপাহাড়ী নামে একটি পাহাড় আছে। কথিত আছে যে দ্ৰৌপদীর হরণে অকৃতকাৰ্য্য ও ভীম কর্তৃক অপমানিত জয়দ্ৰথ এই শিৰপাহাড়ীতে আসিয়া সিদ্ধনাথ শিবের উপাসনা করিয়া যুদ্ধে অজেয়তার বর লাভ করেন। শিবরাত্রি ও চৈত্র সংক্রান্তির সময় এখানে মেলা হয়। । - মল্লারপুর হইতে ৭ মাইল পূর্বদিকে বীরচন্দ্রপুর ও গর্তবাস নামক স্থানীয় বৈষ্ণবদিগের অতি প্রিয় তীর্থ। গর্ভবাসের প্রাচীন নাম একচক্রপুর বা একচাকা। এই গ্রামের সহিত পাণ্ডবগণের সংখ্রব ছিল বলিয়া কেহ কেহ অনুমান করেন। প্রবাদ অনুসারে এই স্থানে ভীম হিড়িম্ব রাক্ষসকে হত্যা করিয়াছিলেন এবং তাহার ভগ্নী ও ঘটোৎকচের মাতা হিড়িম্বাকে বিবাহ করিয়াছিলেন। একচক্রপুরে নিতানন্দ প্রভুর জন্ম হইয়াছিল। তাহার পিতার নাম হাড়ে। ওখ ও মাতার নাম পদ্মাবতী। অতি আর বয়সেই তিনি সংসার ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হন এবং ভারতের প্রায় সমুদয় তীর্থ পরিভ্রমণ করিয়া নবীপে গিয়া শ্ৰীগৌরাঙ্গদেবের সহিত মিলিত হন।