পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নাগপুর রেলপথে ఎచి 3 আন্দুল—হাওড়া হইতে ৮ মাইল দূর। আলুলের রাজবাড়ীর নাম অনেকের নিকট সুপরিচিত। রামলোচন রায় নামক এক ভদ্রলোক লর্ড ক্লাইভের দেওয়ান ছিলেন, তিনিই এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। মুঘল রাজত্বকালের শেষ দিকে রামলোচনের জ্যেষ্ঠপুত্র দিল্লীর বাদশাহের নিকট হইতে “ রাজা " উপাধি লাভ করেন। সেই সময় হইতে এই বংশ রাজবংশ বলিয়া পরিচিত। আঙ্গুলের বর্তমান জমিদারগণ এই রাজবংশের দৌহিত্র। আলুলের কালীকীৰ্ত্তন গান এক সময়ে ভক্ত সমাজে বিশেষ সমাদর লাভ করিয়াছিল। সিদ্ধেশ্বরী দেবীর প্রাচীন মন্দির এখানকার একটি দ্রষ্টব্য বস্তু। • সুবিখ্যাত সাহিত্যসেবী ও সাংবাদিক রায় সাহেব বিহারীলাল সরকার আলুলের অধিবাসী ছিলেন। সরকার মহাশয় “শকুন্তলা তত্ত্ব ” “ বিদ্যাসাগর চরিত ” ও “ ইংরাজের জয়” প্রভৃতি গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি বহুকাল “বঙ্গবাসী ” সাপ্তাহিক পত্রের সম্পাদক ছিলেন। সাঁকরাইল—হাওড়া হইতে ১০ মাইল দূর। ইহা ভাগীরথী ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত একটি সমৃদ্ধ স্থান। এখানে উচচ ইংরেজী বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, চতুপাঠ, গ্রন্থাগার, ক্লাব ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভূতি আছে। এখানে বিশালাক্ষী দেবীর একটি প্রাচীন মন্দির আছে। হেষ্টিংসের শাসনকালে এখানে মদনরায় নামক রাজা উপাধিধারী এক জমিদারের বাস ছিল। যে স্থানে তাহার বাসগৃহ ছিল, তথায় এখন “বেলভেডিয়ার ” জুটমিল নামে একটি বড় পাটকল হইয়াছে। }য়া—হাওড়া হইতে ২০ মাইল দূর। ইহা হাওড়া জেলার একটি মহকুমা। এই স্থানটি গঙ্গার উপর অবস্থিত। এখানকার ইলিশ মাছ ও পাস্তুয়া খুব বিখ্যাত। উলুবেড়িয়ার গঙ্গাতীরে অতি সুন্দর একটি কালীবাড়ী আছে। এখান হইতে “ মেদিনীপুর কেনাল” নামক খাল ও “ওড়িষ্যা ট্রাঙ্ক রোড" নামক রাস্তা বাহির হইয়াছে। - বীরশিবপুর—হাওড়া হইতে ২৩ মাইল দুর। এখানকার মাঠে শিকারীর পার্থী শিকার করিতে আসেন। এখান হইতে প্রায় ৪ মাইল দূরে কাণসোণা গ্রামে পীর গোরাচাঁদের আস্তান ও পুকুর আছে। রোগমুক্তি কামনায় হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকেই এই পুকুরে স্নান করিয়া থাকেন। - দেউলটি—হাওড়া জেলার শেষ স্টেশন দেউলটি, হাওড়া হইতে ৩২ মাইল দূর। এখানে অনেক ফুলের বাগান আছে; এখানকার গোলাপ খুব বিখ্যাত। রুগ্ন গবাদি পশুর শুশ্ৰুষার জন্য এখানে একটি গোশালা ও তৎসংলগু গোচরভূমি আছে। দেউলটিতে নামিয়া সামতাৰেড় নামক একখানি ছোট গ্রামে যাইতে হয়। এই গ্রাম ছোট হইলেও বাংলা সাহিত্যে ইহা এক বিশিষ্ট স্বান অধিকার করিয়া আছে। বাংলার অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র সামতাবেড়ে একখানি মনোরম পল্লী ভবন নিৰ্মাণ করিয়া বহুকাল সেইখানেই অতিবাহিত করিয়াছিলেন। শরৎচন্দ্রের জীবদ্দশায় এই পল্লীখনি নবীন সাহিত্যিকদের তীর্থে পরিণত হইয়াছিল।