পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(খ) খড়গপুর—আদড় মেদিনীপুর—খড়গপুর জংশন হইতে ৮ মাইল দূর। ইহা কংসাবতী বা কাসাই নদীর তীরে অবস্থিত। মেদিনীপুর শহরটি খুব প্রাচীন। রাজা প্রাণকরের পুত্র সুপ্রসিদ্ধ মেদিনীকোষ অভিধান প্রণেতা মেদিনীকর কর্তৃক এই নগর প্রতিষ্ঠিত হয় বলিয়া জনশ্রুতি আছে, এবং সেই জন্যই ইহার নাম মেদিনীপুর। আইন-ই-আকবরীতে একটি সুবৃহৎ নগর বলিয়া মেদিনীপুরের উল্লেখ আছে। এখানে একটি প্রাচীন প্রস্তর নিৰ্ম্মিত দুগ আছে। কবে কাহার দ্বারা ইহা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল তাহা জানা যায় নাই। সম্ভবতঃ মেদিনীকর কর্তৃক নগর স্থাপনের সময়েই ইহা নিৰ্ম্মিত হইয় থাকিবে। মুঘলযুগে ইহা একটি প্রধান সেনা-নিবাস ছিল। নবাব আলিবর্দী, নবাব সিরাজউদৌলা, মীরজাফর, মীরকাসেম প্রভূতি এই দুগে বাস করিয়া গিয়াছেন। কিছুকালের জন্য ইহা মহারাষ্ট্ৰীয়গণের অধিকারভুক্ত হইয়াছিল। বৰ্গীর হাঙ্গামায় মেদিনীপুর বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছিল। ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির আমলেও ইহা সেনা-নিবাস রূপে ব্যবহৃত হইত। অতঃপর কিছুদিন ইহা জেলখানায় পরিণত হইয়াছিল। বৰ্ত্তমানে ইহা পরিত্যক্ত এবং পুরাতন জেলখানা নামে পরিচিত। মেদিনীপুর শহরের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি সুন্দর। রেল স্টেশনের পশ্চিম-দক্ষিণাংশে “ গোপ " নামে একটি ক্ষুদ্র পাহাড় আছে। জনশ্রুতি, এই স্থানে মহাভারতোক্ত বিরাট রাজার দক্ষিণ গো-গৃহ ছিল। দেখিলে মনে হয় গোপগিরি পূবেৰ্ব একটি দুর্গ ছিল এবং তদুপযোগী করিয়া পাহাড়টিকে কাটিয়া লওয়া হইয়াছিল। আইন-ই-আকবরীতে মেদিনীপুরে দুইটি দুর্গের উল্লেখ আছে। একটির কথা বলা হইয়াছে। অনেকে অনুমান করেন দ্বিতীয় দুর্গটি এই গোপ-গিরি। এখন এই পাহাড়ের উপর মেদিনীপুর জেলার প্রসিদ্ধ জমিদার নাড়াজোলের রাজভবন অবস্থিত। মেদিনীপুরের প্রাস্তবাহিনী কাসাই নদীর উপর প্রায় অৰ্দ্ধ মাইল দীর্ঘ একটি সেতু আছে। এই সেতুর নিকট হজরত পীর লোহানির সমাধি অবস্থিত। পীর সাহেবের অলৌকিক ক্ষমতা সম্বন্ধে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই ইনি শ্রদ্ধার পাত্র। সমাধির নিকটেই একটি পরিত্যক্ত প্রাচীন মন্দির আছে। কথিত আছে, ইহা রঙ্কিনী দেবীর মন্দির এবং পূবেৰ্ব নাকি পালা করিয়া গ্রামবাসিগণকে এই দেবীর নিকট প্রত্যহ একটি নরবলি দিতে হইত। একদিন একটি অসহায়া বিধবার একমাত্র পুত্রের পালা উপস্থিত হওয়ায় বিধবার করুণ ক্ৰন্দনে দয়ার্দ্র হইয়া পীরসাহেব বিধবার পুত্রের পরিবর্তে স্বয়ং দেবীর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। দেবীর সহিত তাহার ভীষণ যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে দেবী পরাজিত হইয়া মন্দিরের চূড়া ভাঙ্গিয়া দিয়া পশ্চিমদিকে এক গভীর জঙ্গলের মধ্যে পলায়ন করেন এবং এক রজকের গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করেন। উত্তরকালে এই রজক নাকি দেবীর অনুগ্রহে ধলভূমের রাজা হুইয়াছিলেন। মেদিনীপুর শহরে মুসলমানগণের আরও একটি পবিত্র স্থান আছে। উহা সুবিখ্যাত পীর হজরত মুরসেদ আলি শাহসাহেবের দরগাহ্ এবং খানকা শরীফ নামে পরিচিত। এখানে প্রতি বৎসর শাহ্ সাহেবের উৰ্ব বা মৃত্যুতিথি উপলক্ষে বাংলার বিভিন্ন স্থান হইতে বহু মুসলমান যাত্রীর সমাগম হয় | হিন্দু দেবদেবীর মধ্যে ওড়িয়া রাজাদের প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ মন্দির, বগীদের সময়ের শীতল মন্দির, হনুমানজীর মন্দির, বিবিগঞ্জের দুর্গ মন্দির, কর্ণেলগোলার রাম মন্দির, শিববাজারের দ্বাদশ শিবালয় ও রাসমঞ্চ এবং হবিবপুর ও নুতন বাজারের কালী মন্দির সমধিক প্রসিদ্ধ। Tofan.