বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আসাম বাংলা রেলপথে ➢öፋ >૨૦ খৃষ্টাব্দে দুহ্য হইতে ১৩৩ স্থানীয় রাজা ছেংখোম্পার সময়ে গৌড়েশ্বরের বীর সেনাপতি হীরাবন্ত খাঁ বহু সৈন্য লইয়া ত্রিপুর রাজ্য আক্রমণ করেন। রাজা ভীত হইয়া সন্ধির জন্য ব্যগ্র হইলে রাণী ত্রিপুরাসুন্দরী ভীত স্বামীকে ভৎসনা করিয়া হস্তিপৃষ্ঠে চড়িয়া স্বয়ং সৈন্যদলের নেতৃত্ব করেন। রাজাও তখন বাধ্য হইয়া রণক্ষেত্রে উপস্থিত হইলেন। রাণীর সাহস ও উৎসাহ দেখিয়া ত্রিপুর সৈন্য প্রচণ্ড বেগে গৌড়সৈন্যদলকে আক্রমণ করিয়া ছত্রভঙ্গ করিয়া দিল। কথিত আছে, এই যুদ্ধে এক লক্ষ সৈন্য প্রাণ হারাইয়াছিল। রাজা দেখিয়াছিলেন একটি মুণ্ডহীন কবন্ধ এক দণ্ড আকাশে নাচিয়া ভূতলে লুষ্ঠিত হইল। একলক্ষ সৈন্যের মৃত্যু হইলে যুদ্ধক্ষেত্রে নাকি কবন্ধ দৃষ্টিগোচর হয়। যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া ছেংখোম্প হতাহত সৈন্যে সমাকীর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে বসিবার এক তিলও স্থান পাইলেন না ; তাহার জামাতা যুদ্ধে নিহত একটি প্রকাণ্ড হাতীর দস্ত দুইটি কাটিয়া শ্বশুরের জন্য আসন করিয়া দিলেন। জামাতার বল দেখিয়া রাজা ভীত হইলেন এবং তাঁহাকে সেনাপতির পদে অধিষ্ঠিত করিলেন। তখন হইতে ত্রিপুরার রাজ জামাতারা সেনাপতির পদ পাইয়া আসিতেছেন। মহারাজ রত্নফার সময় হইতে ত্রিপুরার রাজার গৌড়েশ্বর সুলতান সামসুদিন প্রদত্ত মাণিক্য উপাধি গ্রহণ করিয়া আসিতেছেন। রত্নফা বাংলা হইতে ১০,০০০ ঘর বাঙালী লইয়া গিয়া নিজরাজ্যে বসতি করান। তদবধি বাংলার সংস্কৃতি ত্রিপুরায় প্রবেশ করে। ত্রিপুর রাজবংশের সবর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ধন্যমাণিক্য (১৪৬৩—১৫১৬ খৃষ্টাব্দ) । ইহার স্ত্রী ছিলেন ইতিহাসপ্রসিদ্ধ রাণী কমলা দেবী এবং সেনাপতি ছিলেন চয়চাগ। পূবেব পাবর্বত্য ত্রিপুরায় সহস্ৰ সহস্র বাঙালীকে বলি দেওয়া হইত। ধন্যমাণিক্য এই বলি বন্ধ করেন। তিনি অনেক দীঘি, মন্দির ও মঠ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। তিনি বীর ও রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং সেনাপতি মহাবীর চয়চাগের সাহায্যে বহু রাজ্য জয় করিয়া ত্রিপুর রাজ্যকে সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। কথিত আছে, ত্রিহুত দেশ হইতে ওস্তাদ আনাইয়া তিনি রাজ্যে নৃত্যগীত শিখাইবার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি বাংলাভাষাকে উৎকর্ষ দিয়াছিলেন। রাণী কমলা দেবী তাহার যোগ্য সহধৰ্ম্মিণী ছিলেন এবং তাহার সম্বন্ধে বহু পল্লীগীতি ত্রিপুরার সবর্বত্র প্রচলিত আছে। ধন্যমাণিক্য র্তাহার সৈন্যদলে জাতিভেদের বৈষম্য দূর করিবার জন্য একটি বৃহৎ ভোজের আয়োজন করেন এবং সৈন্যের পঙক্তি ভোজনে বসিলে তাহার আদেশ অনুসারে এক তথাকথিত নীচ জাতীয় কুকী-সরদার সৈন্যদের গুণিবার ছল করিয়া একটি কাঠি দিয়া সকলের মস্তক স্পর্শ করে। রাজভয়ে কেহ প্রতিবাদ করিতে সাহসী হয় নাই। এই সকল সৈন্য “কাঠি ছোয়া” নামে পরিচিত হইয়াছিল। এই বংশের বিজয় মাণিক্যও (১৫২৯—১৫৭০ খৃষ্টাব্দ) প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম, সুবর্ণগ্রাম প্রভৃতি জয় করেন। এই অভিযানের সময় তিনি ব্ৰহ্মপুত্রের উপর এক পুল বাধিয়াছিলেন এবং তাঁহার সাথে ৫০,০০০ লোকের এক বহর ছিল। কৈলাগড়ে “বিজয়-নন্দিনী ” নামক একটি বৃহৎ খাল কাটাইয়াছিলেন এবং কৈলাগড় ইহতে শ্রীহট্ট পৰ্য্যন্ত একটি রাজপথ নিৰ্মাণ করাইয়াছিলেন, “উহা ত্রিপুরার জাঙ্গাল” নামে অভিহিত। মহারাজ অমরমাণিক্যের (১৫৯৭—১৬১১ খৃষ্টাব্দ) প্রধান কীৰ্ত্তি প্রসিদ্ধ দীধি "অমর-সাগর ”। এই দীঘি খননের জন্য ভাওয়ালের রাজা, বন-ভাওয়ালের জমিদার, সরাইলের ঈশা খাঁ ও ভুলুয়ার