পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেরপুর নাটোর রাজবংশের সম্পত্তি । নাটােরের বারদুয়ার কাছারি নাটাের গাজবশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠত হরগৌরী ও অনাদিলিঙ্গ শিবের মন্দির এখানকার প্রধান দ্রষ্টব্য। শেরপুর একটি বিখ্যাত বাণিজ্যের স্থান। এখানকার কপর্দুল নামে বহুমূল্য রেশমী মশারি প্রসিদ্ধ ছিল। . প্ৰশেরপুরের চার মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাজবাড়ী মুকুল নামক স্থানে একটি রাজপ্রাসাদের ধংসাবশেষ দুষ্ট হয়। প্রবাদ, এই স্থানে বল্লাল সেনের একটি বাড়ী ছিল। কিংবদন্তী অনুসারে বল্লাল সেন বৃদ্ধকালে একটি তথাকথিত নীচ জাতীয় যুবতীর রূপে মুগ্ধ হইয় তাহাকে বিবাহ করেন এবং তজজন্য তাহার পুত্র যুবরাজ লক্ষ্মণ গেনের সহিত তাহার মনোমালিন্য হইলে তিনি রাজ্য ছাড়িয়া এই স্থানে আসিয়া বাস করেন। এখানে চওঁীপুকুর, কাপ্পী পুকুর প্রভৃতি নামে অভিহিত কয়েকটি প্রাচীন পুস্করিণী আছে। পরে এই স্থানে মুকুন্দ নামে কোনও রাজা ছিলেন বলিয়া কথিত । ভগ্নাবশেষ হইতে বুঝিতে পারা যায় যে ইহা একটি নগরী বিশেষ ছিল। শেরপুর হইতে প্রায় দক্ষিণে ১০ মাইল দূরে অবস্থিত ভবানীপুর একটি প্রসিদ্ধ তীর্থস্থান। শেরপর হইতে রাণীর জাঙ্গল নামে একটি সুউচচ পথ ভবানীপুর পর্য্যস্ত গিয়াছে। সাঁতৈলের রাণী সত্যবতী ইহা নিৰ্মাণ করিয়াছিলেন বলিয়া খ্যাত। শেরপুর একপঞ্চাশং শক্তি মহাপীঠের অন্যতম বলিয়া খ্যাত। এই স্থানের পূর্বনাম ছিল ভাবত এবং ইহার পার্শ্ব দিয়া করতোয় নদী প্রবাহিত ছিল। এখন করতোয় এই স্থান হইতে প্রায় চার মাইল দুরে সরিয়া গিয়াছে। শাস্ত্র অনুসারে করতোয় তীরে সতীর তয় পড়িয়াছিল, দেৰীয় নাম অপর্ণা, ভৈরব বামন। কথিত আছে, পূবেৰ্ব এই মহাপীঠ অরণ্যমধ্যে গুপ্ত অবস্থায় ছিল। মনোহর নামক একজন উদাসীন এই মহাপীঠের আবিষ্কার করেন। ইহার আবিষ্কার সম্বন্ধে ও শাঁখারীর নিকট হইতে বালিকা বেশে দেবীর শাখা লওয়া ও পুষ্করিণী হইতে শাখা পরিহিত হস্ত উত্তোলন করা এবং কপিলী গাভীর দুগ্ধ দানের কাহিনী প্রচলিত আছে। মনোহর করতোয় তীরে এক পণ কুটিরের মধ্যে দেবী মত্তির প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। কথিত আছে, জনৈক মুঘল রাজপুরুষ এই দেবীর নিকট মানত করিবার ফলে রাজরোষ হইতে উদ্ধার লাভ করিয়া দেবীর জন্য একটি সুন্দর যুগা মন্দির নির্মাণ করাইয়া দেন। পরে সৈিতলের রাজা রামকৃষ্ণ একটি পশ্চিমম্বারী সুন্দর মন্দির নির্মাণ করাইয়া তন্মধ্যে দেবী মুক্তিকে স্থানান্তরিত করেন। কিন্তু দেবী স্বপ্নে আদেশ করেন যে মুঘল রাজপুরুষ নিৰ্ম্মিত মন্দিরে থাকিতেই তাহার ইচছা । সুতরাং নুতন মন্দির হইতে দেবীপ্রতিমা পুনরায় আদি মন্দিরে স্থানান্তরিত হইলেন। শাস্ত্র অনুসারে এই দেবীর নাম অপর্ণ হইলেও সাধারণের নিকট ইনি ভবানী নামে সুপরিচিত এবং দেবীর নাম হইতে প্রাচীন ভাবতার নৰ নাম ভবানীপুর হয়। ভবানীপুর নাটাের রাজবংশের সম্পত্তি। নাটোরের রাণী ভবানী দেবীমন্দিরের পার্শ্বে একটি বারস্বারী মন্দির নির্মাণ করিয়া তন্মধ্যে ভবানীশ্বর গামে এক শিবপ্রতিষ্ঠা করেন। তাছার দত্তক পুত্র মহারাজ রামকৃষ্ণ একজন উচচাঙ্গের সাধক ছিলেন। তিনি এখানে এক পঞ্চমুৰ্ত্তী আসন নিৰ্মাণ করিয়া যোগ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন বলিয়া প্রসিদ্ধি আছে। রাজা রামকৃষ্ণের পঞ্চমুতী আসন আজিও দেখিতে, পাওয়া যায়। এখানে পাঠাধোয় নামে একটি প্রকাও দীঘি ও একটি জলটুঙ্গির ভগ্নাবশেষ আছে। ভবানী দেবীর মাহাত্ম্য সম্বন্ধে উত্তরবঙ্গে বহু অস্তুত কাহিনী প্রচলিত আছে। এখানে প্রত্যহ বহু মণ চাউলের অনুতোগ হয় এবং সমাগত অতিথি অভ্যাগতগণকে অন্ন প্রসাদ প্রদান করা হয়। দেবীর আদেশ অনুসারে দেবীর ভোগে প্রত্যহ বোয়াল মাছ দেওয়া হয়। এখাঙ্গ শ্যামা পূজা ও