পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগাম বাংলা রেলপথে 3快○ হবিগঞ্জ হইতে বিথঙ্গল প্রায় ১২ মাইল। শ্রীহট্ট হইতে সটীমারযোগেও যাওয়া যায়। বাণিয়াচঙ্গ—হবিগঞ্জ হইতে জলসুখা পৰ্য্যস্ত যে রাস্ত গিয়াছে উহার উপর হবিগঞ্জ হইতে প্রায় ১৬ মাইল দুরে বাণিয়াচঙ্গ অবস্থিত। ইহার পরিমাণ প্রায় ৮ বগ মাইল এবং লোকসংখ্যা প্রায় ৩০,০০০। ইহাকে ভারতের বৃহত্তম গ্রাম বলিয়া দাবী করা হয়। বস্তুতঃ ইহা একটি নগরের সমান। ইহার চারিদিক পরিখা ও মাটির পাচীল দিয়া ঘেরা এবং দূর হইতে ইহাকে একটি প্রকাও পাহাড়ের মত মনে হয়। * বাণিয়াচঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা কেশব মিশ্র কান্যকুব্জ হইতে বাণিজ্য সূত্রে এ অঞ্চলে আগমন করেন বলিয়া কথিত। জনশ্রুতি যে একটি পাষাণময়ী কালীমূৰ্ত্তি লইয়া নৌকায় সাগর সমান হাওরে চলিতে চলিতে দেবীর দৈনিক পূজার জন্য শুষ্ক ভূমি না পাইয়া চিন্তিত হইয়া পড়েন ; এমন সময়ে সন্ধ্যার পূবেৰ্ব একটি ভূমি দেখিতে পাইয়া তথায় দেবীর সিংহাসন স্থাপন করিয়া সে দিনের পূজা সমাপন করেন। কিন্তু তথা হইতে কালীমূৰ্ত্তিকে কিছুতেই উঠাইতে না পারায়, দেবীর ইচছা মনে করিয়া তিনি ঐ স্থানেই বাস করিতে আরম্ভ করেন । কেশবের কৰ্ম্মচারী একজন বণিক জাতীয় বা বাণিয়া থাকায় এবং চঙ্গ জাতীয় মাঝি এই দুইটি মিলিয়া স্থানটির নাম বাণিয়াচঙ্গ হইয়াছে বলিয়া কথিত। কেহ বা বলেন যে এই স্থানটি বাণিয়া বা ব্যবসায়ীর পক্ষে চঙ্গ অথাৎ সুন্দর এই ভাবিয়া বণিক কেশব মিশ্র এই স্থানটির নামকরণ করেন বাণিয়াচঙ্গ। কেশব মিশ্র কন্যকুজ হইতে অনেক লোক আনাইয়া এই স্থানে বাস করিতে দেন এবং ক্রমে নিজ আধিপত্য বিস্তার করিয়া এই স্থানের রাজা হইয়া বসেন। কেশব মিশ্রের বংশের পদ্মনাভ রাজ্য অনেক বাড়াইয়াছিলেন। বাণিয়াচঙ্গের প্রকাণ্ড পুষ্করিণী সাগরদীঘি তিনিই খনন করাইয়াছিলেন। তিনি প্রজাদিগের জন্য এক হাজার দীঘি খনন করাইয়াছিলেন ; এই জন্য তিনি খাঁ উপাধিতে ভূষিত হন এবং মুক্ত হস্তে দানের জন্য তিনি আজও কর্ণ খাঁ নামে পরিচিত। পদ্মনাভের একাদশ পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ শক্তিমান গোবিন্দ খা সিংহাসনে আরোহণ করেন। বাণিয়াচঙ্গ রাজ্যের উত্তরে শ্রীহট্টের উত্তর-পশ্চিম অংশে প্রাচীন কালে লাউড় নামে রাজ্য অবস্থিত ছিল। লাউড় রাজবংশ লোপ পাইলে প্ৰজাগণ খাসিয়াদিগের আক্রমণে অতিষ্ঠ হইয় বাণিয়াচঙ্গ অধিপতি গোবিন্দ খাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন। গোবিন্দ খা লাউড় অধিকার করিয়া উহার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করেন। খাসিয়ারা পাহাড়ে পলাইয়া যায়। গোবিন্দ খা লাউড় রাজ্য ভোগ করিতে থাকিলে তাহার সহিত প্রতিবেশী ক্ষুদ্র রাজ্য জগন্নাথপুরের রাজা জয়সিংহের বিবাদ বাধে। জগন্নাথপুর হবিগঞ্জের প্রায় ২০ মাইল উত্তরে। জগন্নাথপুর ও লাউড় রাজবংশীয়দের মধ্যে কোন বিভাগ ছিল না । সুতরাং লাউড় রাজ্য হইতে বঞ্চিত হইয়া জয়সিংহ অত্যন্ত রুষ্ট হইলেন এবং দিল্লী গিয়া সম্রাটের নিকট আবেদন করিলেন। সম্রাট সমস্ত শুনিয়া দূত *পাঠাইয়া গোবিন্দ খাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। কথিত আছে গোবিন্দ খ। এই আজ্ঞা শুনিলেন না এবং দূত ক্রুদ্ধ গোবিন্দ খাঁর পদাঘাতে প্রাণত্যাগ করে। তখন তাঁহাকে ধরিবার জন্য দিল্লী হইতে সৈন্য আসিল। এই সময়ে গোবিন্দ খাঁ বাণিয়াচঙ্গের চতুদিকে মৃৎপ্রাচীর তুলিয়া নগর রক্ষার ব্যবস্থা করেন। সম্রাট-সেনাপতি গোবিন্দ খাকে পরাজিত করিতে না পারিয়া মণিকারের ছদ্মবেশে নিকটস্থ আজমীরগঞ্জে উপস্থিত হইলেন এবং কৌশলে গোবিন্দ খাকে মণি দেখাইবার ছলনায় নিজ নৌকায় লইয়া আসিয়া তাহাকে আবদ্ধ করিয়া দিল্লী লইয়া যান। গোবিগ খারাপ্রাণদণ্ডের আদেশ