পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ הפ দ্রষ্টব্য। ১৭৮২ খৃষ্টাব্দে প্রায় ৭০০ সন্ন্যাসী ও ফকির একটি দলগঠন করিয়া এই জেলার নানা স্থানে অত্যাচার করিতে অরম্ভ করে। ইহাদের বহু ঘোড়া, হাতী, উট ও নানাপ্রকার অস্ত্র শস্ত্র ছিল। ১৮০ জন সিপাহীকে লইয়া লে: ম্যাকৃডোনালড নামক জনৈক সেনা-নায়ক এই দলটিকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেন। কিন্তু তিন বৎসর পরে এই দলের নেতৃগণ প্রায় দেড় হাজার লোক ও গাদা বলুক প্রভৃতি লইয়া পুনরায় দৌরাত্ম্য সুরু করে। ইহাদিগকে দমন করিতে বাংলা সরকারকে যথেষ্ট বেগ পাইতে হইয়াছিল। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদ পৰ্য্যস্ত রংপুর জেলায় এইরুপ উপদ্রব थवज झिल । রংপুর শহরটি মাহিগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, ধাপ ও লালবাগ এই চারি অংশে বিভক্ত। মাহিগঞ্জেই নবাবী আমলে ফৌজদারি কাছারি ছিল। এই স্থানে শাহ জালাল বোখারি ও সৈয়দ গোর নামক দুইজন পীরের দুইটি পুরাতন মসজিদ আছে। প্রবাদ, শাহ জালাল বোখারি একটি মৎস্যের পৃষ্ঠে চড়িয়া এই স্থানে আসিয়াছিলেন বলিয়া ইহার নাম হয় মাহিগঞ্জ । এখানে প্রায় ১২৫ বৎসরের পুরাতন একটি জগন্নাথ-মন্দির আছে। দেওয়ান রঙ্গলাল নামক রংপর কলেক্টরির জনৈক দেওয়ান ইহার প্রতিষ্ঠাতা। রংপুর শহরের নবাবগঞ্জ পল্লীর মুন্সীপাড়া নামক স্থানে মৌলানা কেরামত আলি নামক জনৈক সাধু ব্যক্তির কবর আছে। ইনি প্রায় একশত বৎসর পূবেৰ্ব বর্তমাণ ছিলেন। বহু দূর হইতে লোকে ইহার সমাধি দেখিতে আসে। রংপুরের লালবাগ পল্লী রেল স্টেশনের নিকটে অবস্থিত। স্টেশনের নিকটে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ কারমাইকেল কলেজ ” নামক প্রথম শ্রেণীর কলেজের প্রাসাদোপম ভবন অবস্থিত। রংপুর জেলায় বহু জমিদারের বাস ; সেই জন্য রংপুর শহরে তাজহাট, ডিমলা, কাকিনা, মন্থনা, পীরগঞ্জ, বৰ্দ্ধনকোট প্রভূতি স্থানের প্রসিদ্ধ জমিদারগণের সুন্দর সুন্দর বাড়ী আছে। এখানকার জেলাবোর্ডের বাড়ীটিও অতি সুন্দর। প্রায় একশত বৎসরের প্রাচীন জৈন মন্দির, শিখদিগের দুইটি পুরাতন “সঙ্গত " বা ভজনাগার ও উত্তর-বঙ্গ সাহিত্য পরিষৎ ভবনও রংপুরের দ্রষ্টব্য বস্তু। উত্তর-বঙ্গ সাহিত্য পরিষদে উত্তর-বঙ্গের অনেক পুরাতত্ব সম্পকিত দ্রব্যাদি সযত্বে রক্ষিত আছে। তাজহাট জমিদারীর প্রতিষ্ঠাতা মান্নালাল রায় শিখ ধৰ্ম্মাবলম্বী পাঞ্জাবী ক্ষত্রিয় ছিলেন। তিনি খৃস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে রংপুর শহরের মাহিগঞ্জে আসিয়া বাস স্থাপন করেন। ক্রমে তিনি বৃহৎ জমিদারীর মালিক হন। তাহার তাজ বা শিরস্ত্রাণ হইতে তাহার বাসস্থান তাজহাট নামে পরিচিত হয়। ব্ৰাহ্মধর্মের প্রবর্তক রাজা রামমোহন রায় রংপুর কলেক্টরিতে কিছুকাল কাৰ্য্য করিয়াছিলেন। তাহার বাসাবাটির একটি ইন্দারা এখনও এখানে বর্তমান আছে। দুর্গা পূজার সময়ে এখানে রামের রথ বাহির হয় এবং একটি মেলা বসিয়া থাকে। রামের রথ বাংলার আর কোথাও দৃষ্ট হয় না। শীতকালের দিনে আকাশ পরিষ্কার বাকিলে রংপুর শহর হইতে হিমালয়ের তুষারমণ্ডিত শিখর দেখিতে পাওয়া যায়। - . - রংপুর জেলা তামাকের চাষের জন্য বিখ্যাত। ভারতের বাহিরেও এই স্থানের তামাকের চাহিদা আছে। রংপুরের ১০ মাইল উত্তরে অবস্থিত মহীপুর একটি পুরাতন মুসলমান জমিদার বংশের বাসস্থান। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম পাদে কোচবিহার রাজ্যের সেনাপতি আরিফ মহম্মদ চৌধুরী এই জমিদারীর স্বষ্টি করেন। তাহার অন্ত:করণ অতি উচচ ছিল। স্বোপাজিত সম্পত্তির মাত্র ১০ অংশ নিজের