পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূবৰ্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ *○ পশ্চিমে দাজিলিং জেলার সীমাস্তের নিকট বাগরাকোট পৰ্য্যস্ত গিয়াছে। মাল জংশনের পরবর্তী স্টেশন চালসা অার একটি জংশন। এখান হইতে ৬ মাইল উত্তরে দাজিলিং জেলার সীমান্তের নিকট মেটেলি পর্য্যস্ত একটি শাখা লাইন আছে। ডুয়ার্স বা দুয়ার কথাটি ভুটিয়া ভাষার শব্দ, ইহার অর্থ পবর্বতের পাদদেশস্থ সমতল ভূমি। বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেলপথের ভোটমারি, ভোটপাট, লাটাগুড়ি, বিনাগুড়ি প্রভৃতি স্টেশন ভোট জাতির স্মৃতি বহন করিতেছে। পূবেৰ্ব এই অঞ্চল ভুটিয়াগণের অধিকারভুক্ত ছিল। আসাম বিজয়ের পর এই অঞ্চল ব্রিটিশ সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ভুটিয়ারা যাহাতে কোনরূপ দৌরাত্ম্য না করে তজ্জন্য ইংরেজ সরকার হইতে ভুটানের রাজাকে বাধিক কিছ অর্থ দেওয়া হইত। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ভুটিয়ার দুয়ার অঞ্চল দিয়া বাংলার মধ্যে প্রবেশ করিয়া যথেচ্ছ অত্যাচার করিতে সুরু করায় বাংলা সরকার ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে য়্যাশলি ঈডেন সাহেবকে দূতরূপে ভূটান রাজসভায় প্রেরণ করেন। তিনি সেখানে ভুটিয়াগণ কর্তৃক অপমানিত হইলে ভুটিয়াগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই যুদ্ধে প্রথমতঃ ইংরেজগণ তত সুবিধা করিতে পারেন নাই ; পরে ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দে ভুটিয়াগণের বিরুদ্ধে বিপুল বাহিনী প্রেরণ করিয়া তাহাদিগকে পরাস্ত ও বশীভত করা হয়। দুয়ার অঞ্চল পূবেৰ্ব সাধারণ বিধি বহির্ভত একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল রূপে একজন ডেপুটি কমিশনারের দ্বারা শাসিত হইত; পরে ইহাকে জলপাইগুড়ি জেলার সহিত সংযুক্ত করিয়া দেওয়া হয়। এই অঞ্চল পূবেৰ জঙ্গলময় ও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ছিল। ভোটযুদ্ধে প্রেরিত বহু ইংরেজ সৈনিক ম্যালেরিয়া জরে আক্রান্ত হইয়া প্রাণ হারাইয়াছিল। এখন এই অঞ্চল চা-উৎপাদনের একটি প্রধান কেন্দ্ররূপে পরিণত হওয়ায়, ইহার জঙ্গল একরূপ লোপ পাইয়াছে বলিলেই হয় এবং স্বাস্থ্যেরও বিশেষ উন্নতি সাধিত হইয়াছে। , মোগলহাট—পাবর্বতীপুর জংশন হইতে ৫০ মাইল দূর। ধরলা নদীর পশ্চিম কূলে ইহা একটি বিখ্যাত পাটের কারবারের স্থান। মুঘল বা মোগলগণ যখন আসাম অভিযানে গমন করেন, তখন এই স্থানে তাহার একটি বাজার বসাইয়াছিলেন বলিয়া ইহা মোগলহাট নামে পরিচিত। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় এই স্থানে ইংরেজ সৈন্যগণের সহিত বিদ্রোহীদিগের কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ হইয়াছিল। গিতলদহ জংশন—পাবর্বতীপুর জংশন হইতে ৫২ মাইল দূর। ইহা ধরলা নদীর পূর্ব তীরে কোচবিহার রাজ্যের অন্তর্গত। এখান হইতে একটি শাখা লাইল কোচবিহার রাজ্যের ভিতর দিয়া জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত দুয়ার অঞ্চলের দলসিংপাড়া ও জয়ন্তী পৰ্য্যস্ত গিয়াছে। দিনহাট—পাবর্বতীপুর জংশন হইতে ৬০ মাইল দূর। ইহা কোচবিহার রাজ্যের অন্তগত একটি বড় স্টেশন ও বাণিজ্য কেন্দ্র। এই স্থান হইতে ১০ মাইল পশ্চিমে ধরলা নদীর তীরে গোসানীমারি গ্রামে প্রাচীন কামত রাজ্যের রাজধানী কামতাপুরের ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। প্রাসাদ ও গড়ের মৃণায় প্রাকারের কিছু কিছু অংশ ও দুইটি ভগ্ন মন্দির এখনও বর্তমান। ধংসাবশেষটি এখনও রাজপাট নামে পরিচিত। কামতারাজ্য মহাভারতোক্ত প্রাগু জ্যোতিষপুর বা কামরূপেরই অংশ বিশেষ ছিল। পৌরাণিক ও তান্ত্রিক গ্রন্থে যথা, কালিকাপুরাণ ও যোগিনীতন্ত্ৰে কামরূপের চতুঃসীমা এইভাবে নিদিষ্ট আছে : উত্তরে কাঞ্চনাদ্রি বা কাঞ্চনজঙবা, পশ্চিমে করতোয় নদী, পূবেৰ দিঙ্করবাসিনী বা দিক্ষ নদী এবং দক্ষিণে ব্ৰহ্মপুত্র ও লাক্ষা নদীর সক্ষম। এই চতুঃসীমার মধ্যবর্তী ভূখণ্ডের আকার একটি ত্রিভুজের ন্যায় এবং ইহা রত্নপীঠ, কামপীঠ, স্বণ পীঠ ও শোষার পীঠ এই চারি অংশে