পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ Jo) মাধব মন্দিরের নিকটে একটি ছোট পাহাড়ে কেদার বা কামেশ্বর মহাদেবের মন্দির অবস্থিত। অদূরবর্তী দুইটি পাহাড়ের নাম বেহুলা-লর্থীন্দর ও আর দুইটি পাহাড় ধুনি-মুৰি নামে পরিচিত। স্থানীয় লোকের বিশ্বাস, যে বেহুলার ঘটনা এতদঞ্চলেই ঘটিয়াছিল। ধুবড়ীর নেতা ধোপানীর পাটের কথা এ প্রসঙ্গে সমৰ্ত্তব্য। হাজোর ডাকবাংলার পিছনে যুকামারা নামে একটি ছোট পাহাড়ের উপর মুসলমানদের “ পোয়া-মক্কা " নামে একটি প্রাচীন মসজিদের ধৃংসাবশেষ অবস্থিত। প্রবাদ, এখানে আসিলে নাকি হজের সিকি ফল পাওয়া যায়। এই স্থানে বহু মুসলমান যাত্রীর সমাগম হইয়া থাকে। হাজো নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। মুসলমান ঐতিহাসিকগণ যে “কোচ-হাজো” নামে একটি স্বতন্ত্র রাজ্যের উল্লেখ করিয়াছেন, সে কথা পূবেৰ্বই বলা হইয়াছে। “ কোচবিহার ” দ্রষ্টব্য । হাজো নামক জাতি হইতেই গ্রামের নাম হাজে হইয়াছে, ইহাই অনেকের অভিমত । আবার কেহ কেহ বলেন যে এখানে পোয়া-মক্কায় অনেকে হজ করিতে আসেন বলিয়াই ইহার নাম হজে বা হাজে হইয়াছে। এরূপ একটি কাহিনী ও প্রচলিত আছে, যে অতি পূবর্বকালে এই স্থানে একজন যোগীপুরুষ অতি কঠোর তপস্যা করিতেছিলেন। কামাখ্যার ডাকিনীগণের ছলনায় তাহার যোগভঙ্গ হইলে তিনি নাকি “ হা যোগ ! হা যোগ ৷ ” এই বলিতে বলিতে এই স্থান ত্যাগ করেন। সেই হইতে গ্রামের নাম হাযোগ বা সংক্ষেপে হাজো হইয়াছে। জনশ্রুতি, যে এক সময়ে কামাখ্যার ডাকিনীগণ কামাখ্যাধামে অত্যন্ত উৎপাত আরম্ভ করিলে ভৈরব উমানন্দ তাহাদিগকে সেই স্থান হইতে দূর করিয়া দেন এবং সেই বিতাড়িত ডাকিনীগণ এখানে আসিয়াই বসবাস করে । হাজো হইতে ৬ মাইল দক্ষিণে ব্ৰহ্মপুত্র কুলে হাতিমুড়া নামে একটি পাহাড় সীমারে বহুদূর হইতে দেখিতে পাওয়া যায়। পাহাড়টিকে দেখিলে মনে হয় যেন বিরাটকায় হাতী হাট গাড়িয়। বসিয়া আছে, এইজন্য ইহার নাম হইয়াছে হাতিমুড়া । পাণ্ডু—আমিনগাওএর ঠিক বিপরীত দিকে ব্ৰহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীরে পাণ্ডু স্টেশন অবস্থিত। অনেকে বলেন যে এই স্থনের প্রাচীন নাম পাগুনগর ; বনবাসকালে পাণ্ডুপুত্ৰগণ নাকি এই স্থানে কিছুকাল বাস করিয়াছিলেন। পাণ্ডবেশ্বর বা পাণ্ডুনাথ নামে এখানে এক শিবের মন্দির আছে। মন্দিরটি একটি পাহাড়ের সানুদেশে অবস্থিত। কাহারও কাহারও মতে এই স্থানেই বিষ্ণুর সহিত মধুকৈটভের বাহুযুদ্ধ হইয়াছিল। প্রবাদ, এক সময়ে যুদ্ধে ক্লাস্ত হইয়া বিষ্ণু শিলার আকার ধারণ করিয়াছিলেন। পাণ্ডবেশ্বর শিবের মন্দিরের নিকটবৰ্ত্তী এক খণ্ড প্রস্তর বিষ্ণুশিলা রূপে পূজিত হয়। কয়েক বৎসর হইল মুক্ত্যানন্দ পরমহংস নামক একজন সাধুপুরষের কয়েকজন শিষ্য এই স্থানে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। ইহাও এখানকার একটি দ্রষ্টব্য বস্তু। পাণ্ডু স্টেশন হইতে আসাম-বাংলা রেলপথ গোহাটি, চাপারমুখ জংশন, লামডিং জংশন, প্রভৃতি হইয়া তিনসুকিয়া জংশন পর্য্যন্ত গিয়াছে। চাপারমুখ জংশন হইতে একটি শাখা দিয়া নওগ যাওয়া যায়। লামডিং জংশন হইতে একটি লাইন দক্ষিণে বদরপুর জংশন হইয়া চট্টগ্রাম চলিয়া গিয়াছে। তিনসুকিয় জংশন হইতে দিব্রু-সদিয়া রেলপথে একদিকে দিব্ৰুগড় ও অপর দিকে আসামের তৈল 3