বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ 8仓 নারায়ণগঞ্জের এক মাইল উত্তরে হাজীগঞ্জ মহাল্লার পাশ্বে ই খিজিরপুর গ্রাম। বার-ভুইয়ার অন্যতম প্রধান ভূঁইয়া ঈশা খাঁ মন্থনদ-ই-আলির রাজধানী এই স্থানে ছিল। কথিত আছে, ঈশা খ৷ রাজপুত বংশীয় হিন্দু ছিলেন এবং মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া সুলতান সুলেমান কররাণীর পুত্র বায়াজিদের সৈন্য বিভাগে প্রবেশ করেন এবং শীঘ্রই প্রতিভাবলে আড়াই-হাজারী সেনানায়ক হন। সুলতান দায়ুদের সময়ে তিনি রাজমহলের যুদ্ধে বিশেষ সাহসিকতার সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন। দায়ুদের মৃত্যুর পর তাহার বহু সৈনিক ঈশা খাঁর আশ্রয় গ্রহণ করে। অত:পর তিনি পূর্ববঙ্গের সুবর্ণগ্রাম বা সোনারগাঁওয়ের অস্তগত খিজিরপুরে আসিয়া রাজত্ব স্থাপন করেন। শ্রীপুরের সুপ্রসিদ্ধ ভূঁইয়া চাদরায় ও কেদার রায়ের সহিত প্রথমে তাহার বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু চাঁদ রায়ের বিধবা কন্যা সোনামণিকে বিবাহ করায় সেই আঘাতে চাঁদ রায় শীঘ্রই মৃত্যুমুখে পতিত হন এবং কেদার রায় প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য আজীবন বিদ্বেষবহ্নি জালাইয়া রাখিয়াছিলেন। ১৫৮৫ খৃষ্টাব্দে ঈশা খাঁ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করায় দিল্লীশ্বর কর্তৃক শাহবাজ খাঁ তাহার বিরুদ্ধে প্রেরিত হন। শাহবাজ খাঁ বিশেষ কিছু করিতে পারেন নাই। অতঃপর মহারাজ মানসিংহ তাহাকে দমন করিতে আগমন করেন । ঈশ৷ খাঁ খিজিরপুর হইতে হটিয়া সাতখামাইরের ১০ মাইল পূবর্বদিকে অবস্থিত এগার-সিন্ধু দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কথিত আছে ঈশা খাঁ মানসিংহকে সন্মুখ যুদ্ধে আহ্বান করেন এবং তাঁহার বীরত্বে ও সাহসিকতায় প্রীত হইয়া মানসিংহ তাহার সহিত সন্ধি করেন ও বন্ধুত্ব সূত্রে আবদ্ধ হন। ঈশা খাঁ তখন মানসিংহের সহিত আগ্রায় গিয়া বাদশাহের নিকট হইতে ২২ পরগণার জমিদারী ও মসৃনদ-ইআলি উপাধি প্রাপ্ত হন। খিজিরপুরে একটি উদ্যান মধ্যে শ্বেত মৰ্ম্মর প্রস্তরের একটি সমাধি সম্রাট জাহাঙ্গীরের এক কন্যার বলিয়া প্রবাদ। ইহা কাহার সমাধি তাহা ঠিক জানা নাই। খিজিরপুর হইতে ৬ মাইল উত্তর-পূবেৰ্ব দেওয়ানবাগ নামক স্থানেও ঈশা খাঁর একটি দুর্গ ছিল ; তাহার প্রপৌত্র মানোয়ার খাঁর এই স্থানে বাস ছিল। দেওয়ানবাগে একটি মৃত্তিক স্তুপ হইতে খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর সাতটি কামান আবিস্কৃত হইয়াছে। এ গুলি ঢাকার চিত্রশালায় রক্ষিত হইয়াছে। ইহাদের মধ্যে একটি কামান সম্রাট শের শাহের ; তৎকর্তৃক আনীত কনস্তানতিনোপ্রন্থ নিবাসী সৈয়দ আহমদ নামক বিখ্যাত কারিগর কর্তৃক ইহা নিৰ্ম্মিত। পানাম—নারায়ণগঞ্জ হইতে প্রায় ৮ মাইল পূবর্বদিকে পুরাতন ব্ৰহ্মপুত্র ও মেঘনার মধ্যস্থলে পানাম গ্রামটি আজ জঙ্গলাকীর্ণ হইলেও পূবর্বকালে প্রসিদ্ধ সুবর্ণগ্রাম বা সোনারগাঁও নগরী এই স্থানে অবস্থিত ছিল ; গড় ও প্রাকারের ভগ্নাবশেষ এখনও এই স্থানে দৃষ্ট হয়। প্রবাদ মহারাজ জয়ধুজের সময়ে এই অঞ্চলে সুবর্ণ বৃষ্টি হইয়াছিল বলিয়া এই স্থান সুবর্ণগ্রাম নামে পরিচিত হয়। ইহা একটি বিস্তৃত ভূখণ্ড ছিল ; ইহার উত্তরে ছিল পুরাতন ব্ৰহ্মপুত্র, পূবেৰ্ব জড়িয়লখা (বাখরগঞ্জ জেলায় এই নামে বড় নদী আছে) ও মেঘনা এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা । মহম্মদ বিল্ব বখতিয়ার খিল্জী কর্তৃক গৌড় বা লক্ষ্মণাবতী অধিকৃত হইলে সেনবংশীয় রাজগণ প্রায় ১২০ বৎসর পর্য্যস্ত বিক্রমপুরের রামপাল ও সুবর্ণগ্রামে স্বাধীন ভাবে রাজত্ব করিয়াছিলেন। পশ্চিম হইতে নবাগত মুসলমানগণের ও দক্ষিণ-পূর্ব হইতে আরাকানের মগগণের বার বার আক্রমণে সেনরাজগণ ক্ৰমে দুবর্বল হইয়া পড়েন এবং খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে পূবর্ব-বঙ্গ মুসলমান অধিকারে আসে। মধুসেন ও দনুজ মাধব বা দনুজরায় ব্যতীত সুবর্ণগ্রাম তথা পূবর্ব-বঙ্গের অপর স্বাধীন হিন্দু রাজার ঐতিহাসিক প্রমাণ বিশেষ নাই। মুসলমান যুগে রামপালের অবনতি ও সোনারগাওএর বিশেষ উন্নতি হয়। ১২৯৬ খৃষ্টাব্দ হইতে ১৬০৮ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত ইহা পূবর্ব-বঙ্গের মুসলমান শাসকবর্গের রাজধানী ছিল এবং এই স্থানে টাকশাল প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৬০৮ খৃষ্টাব্দে আহোম, মগ ও পর্তুগীজদের উৎপাত নিবারণার্থ