বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8br বাংলায় ভ্রমণ করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত। তাঁহার দৃষ্টি এত প্রখর ছিল যে লোকে তাহ সহ্য করিতে পারিত না তিনি জাতিসমর ছিলেন ও সাময়িকভাবে দেহ ছাড়িয়া অন্যত্র গমন করিয়া পুনরায় দেহে ফিরিয় আসিতেন বলিয়া কথিত । চৈত্র সংক্রাস্তি উপলক্ষে বারদীতে ৭ দিন ধরিয়া মেলা হয় । মুন্সীগঞ্জ—কলাগাছিয়া মোহানার দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ হইতে ৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জ হইতে গোয়ালন্দ ও ভৈরব-শ্রীহট্টগামী স্টীমার এখানে ধরে। ঢাকা জেলার ইহা অন্যতম মহকুমা। শহরের নিকটেই মীর জুমলার ইদ্রাকৃপুর জলদুর্গের মধ্যে সদর-আলা বাসভবন অবস্থিত। মুন্সীগঞ্জের প্রায় অৰ্দ্ধ মাইল উত্তরে ধলেশ্বরী কলাগাছিয়া মোহানার দক্ষিণ কুলে সুপ্রসিদ্ধ ও সুবৃহৎ কাত্তিক বারুণীর মেলা বসিয়া থাকে। এ অঞ্চলে এত বড় মেলা আর কোথাও নাই। পূবেৰ্ব এই মেলা কাত্তিক পূর্ণিমায় আরম্ভ হইত, এখন কিছু পরে আরম্ভ হইয় ৩/৪ মাস স্থায়ী হয় ; বহু দূরদেশ হইতে ব্যবসায়ীরা এখানে আসিয়া থাকে। মুন্সীগঞ্জে সম্প্রতি একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। সুবিখ্যাত বিক্রমপুর পরগণা মুন্সীগঞ্জ মহকুমার অন্তগত। বহুবার এই পরগণার সীমান। পরিবর্তন হওয়ার জন্য ইহার কিয়দংশ বর্তমানে ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে। উত্তরে ধলেশ্বরী নদী, দক্ষিণে ইদিলপুর পরগণা, পূবেৰ্ব মেঘনা ও পশ্চিমে পদ্মা—সাধারণত: এই চতুঃসীমার অন্তর্গত ভূভাগ বিক্রমপুর নামে পরিচিত। বিক্রমপুরের বহু প্রাচীন কীৰ্ত্তি লোপ করায় এই অঞ্চলে পদ্মার নাম যে কীৰ্ত্তিনাশা হইয়াছে সে কথা পূবেৰ্বই বলা হইয়াছে। বিক্রমপুর নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে প্রবাদ যে প্রাচীন কালে এই স্থানে বিক্রম নামক জনৈক রাজার রাজ্য ছিল। মুন্সীগঞ্জ হইতে তিন মাইল পশ্চিমে বিক্রমপুরের প্রাচীন রাজধানী রামপাল অবস্থিত। প্রবা অনুসারে পালবংশীয় নৃপতি রামপালদেবের নাম হইতেই এই স্থানের “রামপাল’ নাম হইয়াছে। বিক্রমপুর অঞ্চলে যে এক সময়ে পাল রাজগণের আধিপত্য বিস্তৃত হইয়াছিল, বিক্রমপুরের বিভিন্ন প্রাচীন স্থান হইতে প্রাপ্ত পালযুগের বহু শিল্পদ্রব্য, প্রস্তরমূৰ্ত্তি ও মৃত্তাস্কৰ্য্য হইতে তাহার নিদর্শন আবিস্কৃত হইয়াছে। সেনবংশীয় নৃপতি বল্লাল সেনের সীতাহাটি তাম্রফলকে “স খলু শ্রীবিক্রমপুর সমাবাসিত শ্রীমজজয়স্কন্ধাবারাৎ ” এইরূপ লিখিত আছে। ঐতিহাসিকগণের মধ্যে অনেকে অনুমান করেন যে এই শ্রীবিক্রমপুর ও বর্তমান রামপাল অভিন্ন। মুন্সীগঞ্জের দেড় মাইল উত্তর-পশ্চিমে ধলেশ্বরীর দক্ষিণ-কূলে সুপ্রসিদ্ধ গঞ্জ মীর কাদিম অবস্থিত। মীর কাদিম হইতে আরও দেড় মাইল পশ্চিমে ফিরিঙ্গী বাজার গ্রাম। নবাব শায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম অধিকার করিয়া ফিরিঙ্গী বন্দীদিগকে আনিয়া এই স্থানে বসতি স্থাপন করেন। এখানে একটি পুরাতন রোমান ক্যাথলিক গির্জাঘর আছে। এ বিক্রমপুরের বহু গ্রামে বৌদ্ধ ও হিন্দু দেবদেবী মুক্তি অনেক আবিস্কৃত হইয়াছে। বহুকাল ধরিয়া সংস্কৃত চচর্চা ও জ্যোতিষ শাস্ত্র আলোচনার জন্য বিক্রমপুরের প্রসিদ্ধি ছিল। বিক্রমপুরের পর নবদ্বীপে পঞ্জিকা প্রস্তুত আরম্ভ হয়। বিক্রমপুরের স্থানীয় সময় উজ্জয়িনী হইতে ইহার দেশান্তর দুই দণ্ড চৌত্রিশ পল ঠিক ভাবে গণনা করিয়া পঞ্জিকায় দেওয়া হইত। নবদ্বীপ ও কলিকাতায় পঞ্জিকা প্রস্তুত আরম্ভ হইলে তাহাতে বিক্রমপুরের স্থানীয় সময়ই